You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক হযরত আলী

হযরত আলী, বীর প্রতীক (১৯৪৫-২০১৭) সিপাহি এবং ২২শে নভেম্বর কানাইঘাট যুদ্ধে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৫ সালে মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার বাউসিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম নজর আলী প্রধান এবং মাতার নাম হাসনা বানু। ৩ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। হযরত আলী বাউসিয়া এম এ আজহার উদ্দিন হাইস্কুলে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। এরপর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি ১৯৭১ সালে যশোর সেনানিবাসে ১ম বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ওপর গণহত্যা শুরু করে। একই নীলনকশার অংশ হিসেবে ৩০শে মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৫ বালুচ এবং ২২ এফএফ রেজিমেন্ট বাঙালি সৈনিকদের ওপর আক্রমণ চালায়। হানাদার বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে হযরত আলী ও তাঁর সহযোদ্ধারা সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে চৌগাছায় সমবেত হন। এরপর ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম, জামালপুরের বকশিগঞ্জ, কামালপুর, সিলেটের কানাইঘাটসহ বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ছিলেন মেশিনগানার। কানাইঘাট যুদ্ধটি তাঁর জীবনের স্মরণীয় ঘটনাসমূহের মধ্যে অন্যতম। জৈন্তাপুর-জকিগঞ্জ সংযোগ সড়কে সুরমা নদীর তীরে কানাইঘাটের অবস্থান। সীমান্তের নিকটবর্তী হওয়ায় মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানি বাহিনী উভয়ের কাছে কানাইঘাট সামরিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কানাইঘাটে পাকিস্তানি বাহিনীর ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের একটি কোম্পানি, মিলিশিয়া ও তাদের সহযোগী রাজাকারদের শক্ত অবস্থান ছিল। ২২শে নভেম্বর ‘জেড’ ফোর্সের অধীনে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও গণবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা কানাইঘাট সংলগ্ন গৌরীপুর পৌছলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের ডিফেন্স ছেড়ে এগিয়ে এসে তাঁদের ঘেরাও করে। ২২শে নভেম্বর থেকে ৪ঠা ডিসেম্বর পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলে। শেষ পর্যন্ত হানাদার বাহিনী পরাজিত হয়। হযরত আলী অসীম সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। কানাইঘাট যুদ্ধে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও হযরত আলীসহ ২০ জন আহত হন। অপরদিকে পাকবাহিনীর ৫০ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয় আর ২৫ জন মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পণ করে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার সিপাহি হযরত আলীকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর তিনি সেনাবহিনীর চাকরিতে বহাল হন। ১৯৯০ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ২০১৭ সালের ৬ই জানুয়ারি এ বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়। তাঁর স্ত্রীর নাম নূরজাহান। এ দম্পতি ৪ পুত্র সন্তানের জনক-জননী। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!