স্বাধীনতা চত্বর (পাবনা সদর)
স্বাধীনতা চত্বর (পাবনা সদর) পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নির্মিত একটি ভাস্কর্য। এতে বিভিন্ন মোটিফ ব্যবহার করে ৫২-র ভাষা-আন্দোলন- থেকে ৭১- এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত ৪ রাষ্ট্রীয় মূলনীতি এবং উল্লিখিত সময়পর্বে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি তুলে ধরা হয়েছে।
স্বাধীনতা চত্বর ভাস্কর্যটির নির্মাতা শিল্পী শ্যামল চৌধুরী। ২০১৩ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৩ সালের ৬ই অক্টোবর ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেন সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী ও মহান মুক্তিযুদ্ধের উপপ্রধান সেনা-অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, বীর উত্তম। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল ঘটনাপ্রবাহ এ ভাস্কর্যের মূল প্রতিপাদ্য। ভাস্কর্যটি ৭১×৭১ ফুট ভূমির ওপর নির্মিত। ভাস্কর্যটির উচ্চতা ভূমি থেকে ৫২ ফুট। এর মূল স্তম্ভ ৬টি বৃত্তাকার ধাপ সদৃশ ৭ ফুট উচ্চতার বেদীতে স্থাপিত। এ বেদী থেকে অনেকগুলো উত্তোলিত হাত ৪টি শান্তির কপোতকে ঊর্ধ্ব আকাশে মুক্ত করে দিচ্ছে এবং ৪টি কপোত মিলে স্বাধীনতার সূর্যকে বৃত্তাকারে প্রদক্ষিণ করছে। এটাই হলো ভাস্কর্যটির দৃশ্যমান মোটিফ।
ভস্কর্যটিকে দেখলে চারদিক থেকে চার রকমের দৃশ্যের অবতারণা হয়। এর সামনের দিকে তাকালে বেদীর ওপর থেকে প্রায় ১৬ ফুট উচ্চতায় অনেকগুলো হাত ঊর্ধ্বমুখে তুলে ধরে আছে ২৬ ফুট উচ্চতার দুটি হাতকে। এদুটি হাত উড়িয়ে দিচ্ছে শান্তির ৪টি কপোতকে। পাশ থেকে নিচের ধাপের উত্তোলিত হাতগুলোকে দেখতে অনেকটা জাতীয় ফুল শাপলার প্রস্ফুটিত রূপের মতো। বেদীসহ মূল সৌধের পেছনে বৃত্তচাপ সদৃশ দুটি দেয়াল রয়েছে, যা মূল ভাস্কর্যটিকে দুটি হাতের ন্যায় আগলে রেখেছে। এ দেয়াল দুটিতে টেরেকোটার ম্যুরালের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে চিত্রিত আছে আবহমান বাংলা, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬২-র ছাত্র আন্দোলন থেকে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫শে মার্চের কালরাত্রি, মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন, জাতীয় ৭ বীরশ্রেষ্ঠ এবং পরিশেষে কাঙ্ক্ষিত বিজয়।
মূল ভাস্কর্যের সম্মুখভাগে ভিন্ন উচ্চতার ২টি উন্মুক্ত মঞ্চ রয়েছে। ভাস্কটির আকার, আয়তন এবং ফর্মের বিন্যাসে ৫২- এর ভাষা-আন্দোলন থেকে ৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রত্যেকটি ঘটনা এবং বিষয়ের সংখ্যাগুলোকে ভাস্কর্যের আয়তন এবং মেসেজের মধ্যে সমন্বয় করে তৈরি করা হয়েছে। এ ভাস্কর্যের ৭১×৭১ ভূমি ৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে আমাদের বিজয়ের গৌরবকে প্রকাশ করছে। ভূমি থেকে ৫২ ফুট উচ্চতায় ভাস্কর্যটি মহান ভাষা-আন্দোলনকে ইঙ্গিত করছে। বৃত্তাকার ৬টি ধাপের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ভাস্কর্যটি বাঙালির মুক্তির সনদ ৬-দফাকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা গণ- আন্দোলনকে বোঝাচ্ছে। এ ৬টি ধাপ আবার ৭ ফুট উচ্চতায় গঠিত, যা দ্বারা বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ কে বোঝাচ্ছে। মূলত বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পর বাঙালি স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। ভাস্কর্যের সর্ব উচ্চে নর-নারীর দুটি হাত শান্তির ৪টি কপোতকে মুক্ত করে দিচ্ছে। এখানে দুটি বিষকে বোঝানো হয়েছে একটির মাধ্যমে মুক্তি বা স্বাধীনতাকে এবং অপরটি দ্বারা ৭২-এর সংবিধানের ৪টি মূলনীতি। কৃত্রিম আলোক সজ্জায় সজ্জিত হয়ে এ ভাস্কর্যটি আঁধারে হয়ে ওঠে এক অপূর্ব সৌন্দর্যের প্রতীক। ‘স্বাধীনতা চত্বর’টি হয়ে উঠেছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র। [মো. হাবিবুল্লাহ্]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড