মুজিবনগর সরকার পরিচালনার অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র মুজিবনগর সরকার ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল জারি করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ ঘোষণাপত্র মুজিবনগর সরকার পরিচালনার অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান এবং স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়ার আইনি দলিল হিসেবে কার্যকর ছিল। এমনকি ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান প্রণীত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ ঘোষণাপত্র দেশের সংবিধান হিসেবে কার্যকর থাকে। স্বাধীনতার উল্লিখিত ঘোষণাপত্র গ্রহণের সংক্ষিপ্ত পটভূমি নিম্নরূপ—
১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। এ অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু ঘটনা, যেমন— ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পরপর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক বাঙালিদের ওপর শোষণ-বঞ্চনা ও জাতিনিপীড়ন, ভাষা-আন্দোলন, ৬ দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতে ৭০-এর জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগএর ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন, পাকিস্তানি সেনা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ, বঙ্গবন্ধুর ডাকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন, ২৫শে মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইট-এর নামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক ব্যাপক গণহত্যা, নির্মম নির্যাতন ও ধ্বংসযজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণা, মুজিবনগর সরকার গঠন, সর্বস্তরের বাঙালি জনগণের মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া, ইত্যাদি।
১৯৭০ সালের নির্বাচন ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রে প্রথম সাধারণ নির্বাচন এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ নির্বাচন ও তার ফলাফল বাঙালি জাতির স্বাধীনতার আশু প্রেক্ষাপট তৈরি করে। ঐ বছর ৭ই ডিসেম্বর পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ এবং ১৭ই ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন (প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সমুদ্র উপকূলবর্তী কতিপয় আসনে ১৭ই জানুয়ারি ১৯৭১) অনুষ্ঠিত হয়। উভয় নির্বাচনেই বাঙালি জনগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার পক্ষে তাদের নিরঙ্কুশ সমর্থন ব্যক্ত করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দকৃত ৭টি মহিলা আসনসহ ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে বিজয়ী হয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ১০টি আসনসহ ৩১০টি আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনে জয়ী হয়ে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। নির্বাচনের এ ফলাফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের প্রতি বাঙালিদের দ্ব্যর্থহীন সমর্থন প্রকাশ পায় এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ত্বরান্বিত হয়। তাছাড়া এ নির্বাচন বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে জাতীয় ঐক্য জোরদার করে তাদের পাকিস্তানি সেনা শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার সাহস যোগায়।
উল্লেখ্য যে, জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি জাতীয় পরিষদে পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত ১৪৪টি আসনের মধ্যে ৫টি মহিলা আসনসহ ৮৮টি আসনে জয়ী হয়। ফলে আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। তখন থেকেই পাকিস্তানি সামরিক-বেসামরিক নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধুর নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিতে থাকে। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে ইয়াহিয়া খান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর “রহমানের মধ্যে ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আলোচনা হয়। ভুট্টো ঘোষণা করে যে, যদি ঢাকায় জাতীয় পরিষদ অনুষ্ঠিত হয় তা হলে সে তাতে যোগদান করবে না। ভুট্টো ও অন্যান্য বেসামরিক-সামরিক নেতৃবৃন্দ ৬ দফার ভিত্তিতে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের তীব্র বিরোধিতা করতে থাকে। শুরু হয় নির্বাচনের ফলাফল নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র। ফলে রাজনৈতিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করে।
এ পরিস্থিতিতে ১৩ই ফেব্রুয়ারি ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করে যে, ৩রা মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এর পরপরই শুরু হয় ইয়াহিয়া-ভুট্টোর মধ্যে গোপন আঁতাত। তারা প্রস্তুত করতে থাকে বঙ্গবন্ধুর নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করার নীল নকশা। ১লা মার্চ ইয়াহিয়া খান নাটকীয়ভাবে বাঙালিদের হতবাক করে ৩রা মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করে। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের এ ঘোষণার সঙ্গে-সঙ্গেই ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সৃষ্টি হয় বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতির। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সর্বস্তরের জনগণ রাস্তায় নেমে আসে। তাঁর আহ্বানে শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন। হোটেল পূর্বানী থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু ২রা মার্চ ঢাকা শহরে এবং ৩রা মার্চ সারা দেশে হরতাল এবং ৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দান (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)-এ জনসভা অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হয়। রাজনৈতিক সংকট আরো তীব্র হতে থাকে। প্রবল জনমতের চাপে ইয়াহিয়া খান ৬ই মার্চ পুনরায় ঘোষণা করে যে, ২৫শে মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। লক্ষণীয় যে, এ ঘোষণা ছিল তার একটি নতুন রাজনৈতিক চাল; এর অংশ হিসেবে ঐদিনই ‘বালুচিস্তানের কসাই’ নামে কুখ্যাত জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের নতুন গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
ইতোমধ্যে পাকিস্তানি সামরিক সরকারের মনোভাব বাঙালিদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে আর তা হলো কিছুতেই তারা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দল আওয়ামী লীগের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। উত্তাল অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে ৭ই মার্চ রমনা রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। এ ভাষণে তিনি মুক্তিসংগ্রামে তাঁর ভবিষ্যৎ রূপরেখা বাঙালি জাতির সম্মুখে তুলে ধরেন। তাঁর ভাষণ থেকে এটি স্পষ্ট হয় যে, বাঙালিদের স্বাধীনতার বিকল্প আর কিছু নেই। তা প্রকাশ পায় তাঁর ভাষণের দুটিমাত্র বাক্যে- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ রেসকোর্স ময়দান থেকেই ঐদিন তিনি বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার বার্তাটি পৌঁছে দেন এবং জনগণকে আসন্ন মুক্তিযুদ্ধে তাদের করণীয় সম্বন্ধে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
এমনি উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে ১৫ই মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকা আসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার জন্য। ১৬ই মার্চ থেকে ২২শে মার্চ পর্যন্ত ইয়াহিয়া খান প্রায় প্রতিদিনই বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যায়। এই তথাকথিত আলোচনা ছিল লোক দেখানো ও ইয়াহিয়া খানের আর একটি রাজনৈতিক কৌশল। এর আড়ালে তার আসল উদ্দেশ্য ছিল সময়ক্ষেপণ, যাতে বাঙালিদের ওপর সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নের জন্য সর্বাত্মক প্রস্ততি নেয়া যায়। এর অংশ হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আকাশ ও সমুদ্র পথে সমরাস্ত্র, রসদ ও অবাঙালি সেনা সদস্যের পূর্ব পাকিস্তানে স্থানান্তর করা হতে থাকে। উত্তাল রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে ইয়াহিয়া খান ২৫শে মার্চ গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে। তবে ঢাকা ত্যাগ করার পূর্বে সে অপারেশন সার্চলাইট-এর নামে বাঙালি জনগণের ওপর সামরিক অভিযানের নির্দেশ দিয়ে যায়। ঐদিন রাত থেকেই ইয়াহিয়ার নির্দেশ কার্যকর করতে শুরু হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইতিহাসের জঘন্যতম, নিষ্ঠুর ও নির্মম গণহত্যা। তারা ঢাকার পিলখানায় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)-এর সদর দপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স, জগন্নাথ হলসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও হিন্দু অধ্যুষিত পুরান ঢাকা এলাকায় ব্যাপক গণহত্যা শুরু করে।
২৫শে মার্চ রাতে সামরিক বাহিনীর আক্রমণের অব্যবহিত পূর্বে বঙ্গবন্ধু নেতা-কর্মীদের গোপন আশ্রয়ে চলে যাবার নির্দেশ দেন। সারা ঢাকা শহরে দাবানলের মতো একটি খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, সন্ধ্যার পর সামরিক অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে। পাকিস্তানি বাহিনী রাত ১২টার পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার হবার পূর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল নিম্নরূপ:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
কর্তৃক প্রদত্ত
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্য রাত শেষে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম
প্রহরে জাতির পিতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত স্বাধীনতার ঘোষণা
(অনূদিত)
ইহাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছ, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।
শেখ মুজিবুর রহমান
২৬ মার্চ ১৯৭১
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার বার্তাটি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে পৌঁছে দেয়ার জন্য মধ্যরাতের সামান্য পরে চট্টগ্রামে প্রেরণ করা হয়। মার্চ মাসের ২৬ ও ২৭ তারিখে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র, চট্টগ্রাম (পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র) থেকে বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার আরো দুটি ঘোষণা প্রচার করা হয়। এর একটি প্রচারিত হয় চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান কর্তৃক এবং অন্যটি মেজর জিয়াউর রহমান কর্তৃক।
১৯৭১ সালের ২৫শে কালরাতে মার্চ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী কর্তৃক ঢাকা ও দেশের অন্যান্য অংশে জনগণের ওপর আক্রমণ চালানোর প্রাক্কালে ঊর্ধ্বতন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, গণপরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যগণ সীমান্ত অতিক্রম করে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে আশ্রয় নেন। তবে অনতিবিলম্বে বাঙালি জাতির এই সংকটকালীন সময়ে নেতৃত্ব, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা ও তাঁদের ভূমিকা নির্ধারণের প্রয়াসে একত্র হতে চেষ্টা করেন। ৩১শে মার্চের মধ্যেই তাঁদের অনেকে কলকাতায় সমবেত হন। গণপরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের যে-সকল সদস্য ১০ই এপ্রিলের মধ্যে কলকাতায় মিলিত হন, তাঁরা একটি আইন পরিষদ গঠন করে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করেন। উল্লেখ্য, একই দিন গণপরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যগণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম-কে উপরাষ্ট্রপতি (বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি) এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। মন্ত্রিসভায় আরো যাঁরা অন্তর্ভুক্ত হন, তাঁরা হলেন- ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামান এবং খন্দকার মোশতাক আহমেদ। উল্লেখ্য যে, মন্ত্রিপরিষদের সকল সদস্যই ছিলেন ১৯৭০ সালের নির্বাচনে (ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী প্রাদেশিক পরিষদে এবং অন্যরা জাতীয় পরিষদে) নির্বাচিত এবং আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের সদস্য। ১০ই এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করা ছাড়াও ঐদিন কর্নেল এম এ জি ওসমানী কে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি নিয়োগ করা হয়।
১৭ই এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমা (বর্তমান জেলা)-র সীমান্তবর্তী বৈদ্যনাথতলা গ্রামে (পরবর্তী নাম ‘মুজিবনগর’) এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে গণপরিষদ সদস্য অধ্যাপক এম ইউসুফ আলী আনুষ্ঠানিকভাবে নবগঠিত বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান। এর পূর্বে ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের নিয়ে গঠিত গণপরিষদ কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। পরিষদের অধিবেশনে এটি তিনি পাঠ করেন। এর মাধ্যমে নবগঠিত আইন পরিষদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করে। এ ঘোষণাপত্রে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করা হয়। তাতে ২৬শে মার্চ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা কার্যকর বলে ঘোষণা করা হয়। ১৭ই এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন টাঙ্গাইল থেকে নির্বাচিত আবদুল মান্নান এমএনএ। তারপর নতুন সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুলকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। ঐ মুহূর্ত থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নামকরণ করা হয় ‘মুজিবনগর সরকার’। স্বাধীনতার উল্লিখিত ঘোষণাপত্রবলে মুজিবনগর সরকার বৈধভাবে গঠিত হয় এবং ঐ ঘোষণায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকলকে চেইন অব কমান্ড-এর আওতায় আসার নির্দেশ দেয়া হয়। নিম্নে ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের পূর্ণ বিবরণ দেয়া হলো-
১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল তারিখে মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র
যেহেতু একটি সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ১৯৭০ সনের ৭ই ডিসেম্বর হইতে ১৯৭১ সনের ১৭ই জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়,
এবং
যেহেতু এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ১৬৯ জন প্রতিনিধির মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় ১৬৭ জনকে নির্বাচিত করেন,
এবং
যেহেতু সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে জেনারেল ইয়াহিয়া খান জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণকে ১৯৭১ সনের ৩রা মার্চ তারিখে মিলিত হইবার জন্য আহ্বান করেন,
এবং
যেহেতু এই আহুত পরিষদ-সভা স্বেচ্ছাচারী ও বেআইনীভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়,
এবং
যেহেতু পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ তাহাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষার পরিবর্তে এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিগণের সহিত আলোচনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় একটি অন্যায় ও বিশ্বাসঘাতকতামূলক যুদ্ধ ঘোষণা করে,
এবং
যেহেতু এইরূপ বিশ্বাসঘাতকতামূলক আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭১ সনের ২৬শে মার্চ তারিখে ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন এবং বাংলাদেশের মর্যাদা ও অখণ্ডতা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান,
এবং
যেহেতু একটি বর্বর ও নৃশংস যুদ্ধ পরিচালনায় পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ, অন্যান্যদের মধ্যে, বাংলাদেশের বেসামরিক ও নিরস্ত্র জনগণের উপর নজীরবিহীন নির্যাতন ও গণহত্যার অসংখ্য অপরাধ সংঘটন করিয়াছে এবং এখনও অনবরত করিয়া চলিতেছে,
এবং
যেহেতু পাকিস্তান সরকার একটি অন্যায় যুদ্ধ চাপাইয়া দিয়া, গণহত্যা করিয়া এবং অন্যান্য দমনমূলক কার্যকলাপের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিনিধিগণের পক্ষে একত্রিত হইয়া একটি সংবিধান প্রণয়ন এবং নিজেদের মধ্যে একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব করিয়া তুলিয়াছে,
এবং
যেহেতু বাংলাদেশের জনগণ তাহাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী উদ্দীপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের উপর তাহাদের কার্যক্রম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করিয়াছে, সেহেতু আমরা বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী জনগণ কর্তৃক আমাদিগকে প্রদত্ত কর্তৃত্বের মর্যাদা রক্ষার্থে, নিজেদের সমন্বয়ে যথাযথভাবে একটি গণপরিষদরূপে গঠন করিলাম, এবং
পারস্পরিক আলোচনা করিয়া, এবং
বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করণার্থে,
সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্ররূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করিলাম এবং তদ্দ্বারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ইতিপূর্বে ঘোষিত স্বাধীনতা দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করিলাম, এবং
এতদ্দ্বারা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছি যে, সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি থাকিবেন এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রজাতন্ত্রের উপ- রাষ্ট্রপতি থাকিবেন, এবং
রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্রের সকল সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হইবেন,
ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতাসহ প্রজাতন্ত্রের সকল নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন ক্ষমতা প্রয়োগ করিবেন, একজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ এবং তাঁহার বিবেচনায় প্রয়োজনীয় অন্যান্য মন্ত্রী নিয়োগ ক্ষমতার অধিকারী হইবেন,
কর আরোপণ ও অর্থ ব্যয়ন ক্ষমতার অধিকারী হইবেন,
গণপরিষদ আহ্বান ও মূলতবিকরণ ক্ষমতার অধিকারী হইবেন, এবং বাংলাদেশের জনগণকে একটি নিয়মতান্ত্রিক ও ন্যায়ানুগ সরকার প্রদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অন্যান্য সকল কার্য করিতে পারিবেন। আমরা বাংলাদেশের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ আরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছি যে, কোন কারণে রাষ্ট্রপতি না থাকা বা রাষ্ট্রপতি তাঁহার কার্যভার গ্রহণ করিতে অসমর্থ হওয়া বা তাঁহার ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে অসমর্থ হওয়ার ক্ষেত্রে, রাষ্ট্রপতির উপর এতদ্বারা অর্পিত সমুদয় ক্ষমতা, কর্তব্য ও দায়িত্ব উপ-রাষ্ট্রপতির থাকিবে এবং তিনি উহা প্রয়োগ ও পালন করিবেন।
আমরা আরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছি যে, জাতিমণ্ডলীর সদস্য হিসাবে আমাদের উপর যে দায় ও দায়িত্ব বর্তাইবে উহা পালন ও বাস্তবায়ন করার এবং জাতিসংঘের সনদ মানিয়া চলার প্রতিশ্রুতি আমরা দিতেছি।
আমরা আরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছি যে, স্বাধীনতার এই ঘোষণাপত্র ১৯৭১ সনের ২৬শে মার্চ তারিখে কার্যকর হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।
আমরা আরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছি যে, এই দলিল কার্যকর করার লক্ষ্যে এবং রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতির শপথ পরিচালনার জন্য আমরা অধ্যাপক ইউসুফ আলীকে আমাদের যথাযথ ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি নিয়োগ করিলাম।
অধ্যাপক ইউসুফ আলী
বাংলাদেশ গণপরিষদের ক্ষমতাবলে ও তদধীনে যথাযথভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি।
আইনের ধারাবাহিকতা বলবৎকরণ আদেশ ১৯৭১
বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে একই দিনে আইনের ধারাবাহিকতা বলবৎকরণ আদেশ নামে একটি আদেশ জারি করেন। স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে যে সকল আইন চালু ছিল, তা রক্ষার্থে এটা করা হয়। মুজিবনগর
তারিখ ১০ এপ্রিল, ১৯৭১
আমি, বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রপতি এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল তারিখে এ আদেশ জারী করছি যে, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে যে সকল আইন চালু ছিল, তা ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একইভাবে চালু থাকবে, তবে প্রয়োজনীয় সংশোধনী সার্বভৌম স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের জন্য করা যাবে। এই রাষ্ট্রগঠন বাংলাদেশের জনসাধারণের ইচ্ছায় হয়েছে। এক্ষণে, সকল সরকারি, সামরিক, বেসামরিক, বিচার বিভাগীয় এবং কূটনৈতিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী যারা বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেছেন, তারা এতদিন পর্যন্ত নিয়োগবিধির আওতায় যে শর্তে কাজে বহাল ছিলেন, সেই একই শর্তে তারা চাকুরিতে বহাল থাকবেন। বাংলাদেশের সীমানায় অবস্থিত সকল জেলা জজ এবং জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট এবং সকল কূটনৈতিক প্রতিনিধি যারা অন্যত্র অবস্থান করছেন, তারা সকল সরকারি কর্মচারীকে স্ব স্ব এলাকায় আনুগত্যের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করবেন।
এই আদেশ ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকে কার্যকর হয়েছে বলে গণ্য করতে হবে।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পরেও এর পূর্বে ১০ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার কর্তৃক জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাংলাদেশের সংবিধানের উৎস হিসেবে বিবেচিত হয় এবং বাংলাদেশের একটি ক্রান্তিকালীন অস্থায়ী বিধান হিসেবে ১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের সময় এটিকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান- এ উল্লেখ করা হয়। ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান-এ মুজিবনগর সরকার কর্তৃক জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র চতুর্থ তফসিলের ১৫০-৩ (১) অনুচ্ছেদে রাখা হয় এবং পরিশিষ্ট-১ হিসেবে শুধু ইংরেজি ভাষায় সংযোজন করা হয়। তবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম কর্তৃক আইনের ধারাবাহিকতা বলবৎকরণ আদেশটি একই তফসিলের ১৫১(ক) অনুচ্ছেদে রেখে পরিশিষ্ট-২ আকারে শুধু ইংরেজি ভাষায় সংযোজন করা হয়।
২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মেয়াদের সরকারের সময় গৃহীত সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে “১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তারিখে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ” এবং “১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তারিখে জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার টেলিগ্রাম” এবং “১০ই এপ্রিল তারিখে মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র” সম্পর্কে বলা হয় যে, এগুলো হলো “বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের ঐতিহাসিক ভাষণ ও দলিল, যাহা উক্ত সময় কালের জন্য ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলী বলিয়া গণ্য হইবে” এবং এগুলো “সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা কোন পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য” গণ্য করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান-এ অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেমতে ২০১১ সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ৫ম তফসিলের ১৫০(২) অনুচ্ছেদে, ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক প্রদত্ত স্বাধীনতার ঘোষণা সংবিধানের ৬ষ্ঠ তফসিলের ১৫০(২) অনুচ্ছেদে এবং ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংবিধানের সপ্তম তফসিলের ১৫০(২) অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত করে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় সংযোজন করা হয়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম কর্তৃক ‘আইনের ধারাবাহিকতা বলবৎকরণ আদেশ ১৯৭১’-টি এ সংবিধানের পরিশিষ্ট-১ হিসেবে শুধু ইংরেজি ভাষায় সংযোজন করা হয়। [সাজাহান মিয়া]
তথ্যসূত্র: হাসান হাফিজুর রহমান (সম্পাদিত), বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র, তৃতীয় খণ্ড, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, তথ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা, ১৯৮২; গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, ১৯৯৮; গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, ২০১৬
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড