১২ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ ‘স্মৃতি অম্লান’ (সাঘাটা, গাইবান্ধা)
স্মৃতি অম্লান (সাঘাটা, গাইবান্ধা) ২৪শে অক্টোম্বর গাইবান্ধা রণাঙ্গনে সংঘটিত পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে রোস্তম কোম্পানি-র মুক্তিযোদ্ধাদের ত্রিমোহিনী ঘাটের যুদ্ধ-এ শহীদ ১২ জন মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ। শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- হামিদুর রহমান মধু, শহীদুল্লাহ, আব্দুল হাই, হাবিবুর রহমান, আহম্মেদ আলী, হবিবর রহমান, আব্দুল হাই (পাবনা), বোদারাম দাশ, প্রভাত চন্দ্ৰ বৰ্মণ, ধনঞ্জয় মহন্ত, ভারত চন্দ্র বর্মণ ও আনছার আলী। দলদলিয়া-ময়মন্তপুর গ্রামের মানুষ ঐ রাতেই শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ সমাহিত করার উদ্যোগ নেন। শহীদ আব্দুল হাই-এর স্বজনরা এসে তাঁর লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে পরিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করেন। অবশিষ্ট ১১ জনের লাশ দলদলিয়া গ্রামের মোহিনী মোহন বর্মণের উদ্যোগে দলদলিয়া-ময়মন্তপুর গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় দুটি কবরে সমাহিত করা হয়। দেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার পর কোম্পানি কমান্ডার রোস্তম আলী খন্দকার বোনারপাড়া রেলওয়ের আইওডব্লিউ এবং স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় শহীদ আব্দুল হাই-এর সমাধিসহ দলদলিয়া গ্রামের শহীদ ১১ জন মুক্তিযোদ্ধার সমাধিদুটি পাকা করেন। ২০০১ সালে রোস্তম কোম্পানির সহকারী কোম্পানি কমান্ডার গৌতম চন্দ্র মোদক, মুক্তিযোদ্ধা মাহবুর রহমান মহবৎ, তছলিম উদ্দিন ও কাজী আবুল হাশেমের উদ্যোগে একাত্তরের ১৭ই নভেম্বর বোনারপাড়া লোকোসেডে ইঞ্জিনের বয়লারে নিক্ষিপ্ত হয়ে শাহাদতবরণকারী মজিবর রহমান সরকারের পুত্র আব্দুল হামিদ বাবু ও স্থানীয়দের আর্থিক সহযোগিতায় দলদলিয়া গ্রামের কবরের পাশে ১২টি স্তম্ভবিশিষ্ট একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়, যার নামকরণ করা হয় ‘স্মৃতি অম্লান’। ২০০১ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন ত্রিমোহিনী ঘাটের যুদ্ধের অন্যতম শহীদ আব্দুল হাই-এর জননী আবিয়া খাতুন। একই বছরের ২৪শে অক্টোবর স্মৃতি অম্লান-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। প্রতিবছর ত্রিমোহিনী ঘাটের যুদ্ধের দিন ২৪শে অক্টোম্বর সাঘাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ-এর উদ্যোগে স্মৃতি অম্লানের পাদদেশে শহীদদের উদ্দেশে পুষ্পমাল্য অর্পণ, দোয়া মাহফিল, স্মৃতিচারণ সভা ও দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য বিতরণের আয়োজন করা হয়। এদিন সাঘাটা, ফুলছড়ি, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদদের স্বজন ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে স্মৃতি অম্লান চত্বর মুক্তিযুদ্ধের মিলন মেলায় রূপ নেয়। [গৌতম চন্দ্ৰ মোদক]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড