বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবী স্নেহাংশু কান্ত আচার্য
স্নেহাংশু কান্ত আচার্য (১৯১৩-১৯৮৬) ভারতের আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবী। তিনি ১৯১৩ সালের ১লা সেপ্টেম্বর পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। কোলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি (১৯৩৬) লাভের পর তিনি বার- অ্যাট-ল ডিগ্রি লাভের জন্য লন্ডনে গমন করেন। সেখানে অধ্যয়নকালে ব্রিটিশ কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ স্থাপিত হয়। বার-অ্যাট-ল ডিগ্রি লাভের পর তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করে (১৯৪০) কোলকাতা হাইকোর্টে নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৯৪৬ সালে দাঙ্গাবিধ্বস্ত এলাকায় তিনি স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ত্রাণকার্যে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রাদেশিক কমিটির সদস্য হন এবং দল বিভক্তির পর ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-তে যোগ দেন।
১৯৫৭ সালে আফ্রো-এশীয় আইনজীবী সম্মেলনের অন্যতম উদ্যোক্তা স্নেহাংশু কান্ত আচার্য পরের বছরই সমগ্র ভারত গণতান্ত্রিক আইনজীবী সংঘের প্রথম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের এডভোকেট জেনারেল হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন (১৯৭৭-৮৬)। ১৯৮৬ সালের ২৭শে আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্মৃতিরক্ষার জন্য ২০০৪ সালে স্নেহাংশু কান্ত আচার্য ইনস্টিটিউট অব ল নামে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে স্নেহাংশু কান্ত আচার্য বাংলাদেশ থেকে আগত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে আশ্রয় প্রদান করেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র-এর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি সপরিবারে অংশগ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন সভা-সমিতির মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালান। তিনি অর্থ ও বস্ত্র সংগ্রহ করে শরণার্থীদের মাঝে বিতরণ করা ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদেরকে আশ্রয় দিতেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ১লা অক্টোবর ২০১৩ কর্তৃক স্নেহাংশু কান্ত আচার্য-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড