স্বর্ণমতি ব্রিজ বধ্যভূমি (আদিতমারী, লালমনিরহাট)
স্বর্ণমতি ব্রিজ বধ্যভূমি (আদিতমারী, লালমনিরহাট) লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের কান্তেশ্বর পাড়ায় অবস্থিত। এ পাড়ার ভেতর দিয়ে যাওয়া রেললাইনের একটি ব্রিজের নাম স্বর্ণমতি ব্রিজ। এটি লালপুল নামে অধিক পরিচিত। ব্রিজটি স্বর্ণমতি নদীর ওপর হওয়ায় একে স্বর্ণমতি ব্রিজ বলা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে মুক্তিবাহিনী এ ব্রিজ ভেঙ্গে দিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের যাতায়াতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। পাকিস্তানি সেনারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটি পুনর্নির্মাণ করে তাদের অভিযান অব্যাহত রাখে। বিভিন্ন স্থানে হামলা করে সাধারণ মানুষের ওপর ব্যাপক গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতন চালায়। তারা ব্রিজটির তলদেশ ও আশপাশের এলাকাকে বিশাল বধ্যভূমিতে পরিণত করে। মাঝে-মধ্যেই পাকসেনারা ট্রেনে করে লাশ এনে ব্রিজের নিচে ফেলে দিত। তখন স্বর্ণমতি নদী খরস্রোতা থাকায় শতশত লাশ নদীর পানিতে ভেসে যায়। পাকসেনারা শতশত লোককে ধরে এনে ব্রিজের তলায় এবং এর আশপাশে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। স্থানীয়দের মতে স্বর্ণমতি ব্রিজের তলায় হাজার-হাজার (২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার ) লোককে হত্যা করা হয়। এটি আদিতমারী উপজেলার বৃহত্তম বধ্যভূমি। শুধু ব্রিজের তলদেশেই নয়, এর দুপাশে স্বর্ণমতি নদীর তীরে এবং রেল লাইনের দুপাশের ঝোপ-জঙ্গল ও বাঁশঝাড়ের ভেতর প্রতিদিন মানুষের লাশ পড়ে থাকত। স্বাধীনতার পর এ বধ্যভূমি থেকে মানুষের মাথা, কংকাল ও হাড়গোড় পাওয়া গেছে। অনেক কংকাল গাছে ঝুলানো অবস্থায় এবং অনেক কংকালের হাত-পা দড়ি ও কাপড়ের টুকরো দ্বারা বাঁধা অবস্থায় ছিল।
স্বর্ণমতি ব্রিজ সংলগ্ন কান্তেশ্বর পাড়ার পূর্ণ চন্দ্ৰ বৰ্মণ (৬৫) জানান, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর ব্যাপক গণহত্যা শুরু হলে তিনি ভারতে চলে যান। যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে এখানে অগণিত মানুষের মাথা, কংকাল, লুঙ্গি, গেঞ্জি, শার্ট, ধুতি, পাঞ্জাবি ও স্যান্ডেল দেখতে পান। যুদ্ধের এক দশক পরেও মাটির নিচ থেকে মানুষের মাথার খুলি পাওয়া গেছে। শহীদদের স্মরণে স্বর্ণমতি বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে। ২০০৭ সালের ২৫শে মার্চ এর উদ্বোধন করেন আদিতমারী উপজেলা পরিষদের তৎকালীন নির্বাহী অফিসার এ টি এম কামরুল ইসলাম। [আজহারুল আজাদ জুয়েল]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড