You dont have javascript enabled! Please enable it! স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস - সংগ্রামের নোটবুক

স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস

স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস বাংলাদেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে ১৯৬২ সাল থেকে বাঙালির জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে ভ্যানগার্ড খ্যাত ছাত্রলীগ-এর মধ্যে একটি ধারার সৃষ্টি হয়, যা স্বাধীন নিউক্লিয়াস, বা কখনো বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট(বিএলএফ) নামে পরিচিত। বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা অনুযায়ী এর সৃষ্টি। ছাত্রলীগের অগ্রবর্তী নেতৃত্বের এক অংশের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বাধীনতার ধারণা ক্রমান্বয়ে পরোক্ষভাবে জনগণের মধ্যে পৌঁছে দেয়ার প্রয়াস নেন। এভাবে ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্ট নেতৃত্ববৃন্দকে নিয়ে গড়ে ওঠে নিউক্লিয়াস নামে একটি অনানুষ্ঠানিক নেটওয়ার্ক। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৬-দফার আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১-এর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে এ নেটওয়ার্কের সদস্যগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা হঠাৎ করে আসেনি। কোনো জাতির স্বাধীনতাই হঠাৎ করে আসে না। এর পেছনে থাকে দীর্ঘ ইতিহাস। ১৯৭১ সালে একটি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা বাঙালি জাতির জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা। ৭১ শুধু বাঙালির ওপর পাকিস্তানের ২৪ বছরের শাসন-শোষণ ও জাতিনিপীড়নের ফল ছিল না। নিঃসন্দেহে সেটি ছিল বাঙালির জাতীয় মুক্তির চূড়ান্ত পর্ব বা পর্যায়।
আজ যে-ভূখণ্ড নিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র, সেখানকার মানুষ জাতি হিসেবে স্বাধীন বলতে যা বুঝায়, তা পূর্বে কখনো ছিল না। একাদশ শতকে বাংলায় দক্ষিণ ভারত থেকে আগত সেনদের শাসন থেকে শুরু করে ১৯৭১ পর্যন্ত তারা দীর্ঘ প্রায় হাজার বছর ধরে সেন, তুর্কী-আফগান-মুগল-ব্রিটিশ, সর্বশেষে ২৪ বছরের পাকিস্তানি বিজাতীয় বা ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ আর জাতিনিপীড়নের শিকার হয়েছে। দশম-একাদশ শতকে চর্যাপদ থেকে ক্রমান্বয়ে বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশ এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতিভিত্তিক একটি স্বতন্ত্র জাতিসত্তার উন্মেষ ঘটাতে বিশেষ অবদান রাখে। ব্রিটিশ শাসন আমলে (১৭৫৭-১৯৪৭) দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষক-বিদ্রোহ ও নীলচাষ-বিদ্রোহ বাঙালির জাতীয় মুক্তির আন্দোলনেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে জনগণের মুক্তির আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে ক্রমান্বয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সংযোগ ঘটে।
বিংশ শতকের প্রথমার্ধে মুসলিম লীগ ও পাকিস্তান আন্দোলনের মধ্যে বাঙালি কৃষক-প্রজা আমজনতা তাদের সার্বিক মুক্তির স্বপ্ন দেখেছে। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের ‘স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ’ প্রতিষ্ঠার মধ্যে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে (বর্তমান বাংলাদেশ) একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়। লাহোর প্রস্তাব ছিল বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্রচিন্তার প্রথম আনুষ্ঠানিক বহিঃপ্রকাশ। এরই সূত্র ধরে দেশ বিভাগের প্রাক্কালে যুক্ত বাংলার শেষ মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের কতিপয় নেতাকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের বাইরে স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু নানা কারণে তা সফল হয়নি। কলকাতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ উদ্যোগের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকে ছাত্র- জনতার একাধিক সমাবেশে বাংলা বিভক্তির বিরোধিতা ও স্বাধীন বাংলার পক্ষে বক্তব্য রাখেন। হাজার মাইলের ব্যবধানে ভারতের ভূখণ্ড দ্বারা বিভক্ত দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতি ও অন্যান্য স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য সম্বলিত অঞ্চল নিয়ে ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রধারণায় ছিল না। তাঁর ভাবনায় ছিল ভারতের এ অঞ্চলে পৃথক একটি রাষ্ট্র, যে-কারণে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই ঐ রাষ্ট্রে রাষ্ট্রভাষা-কে কেন্দ্র করে সৃষ্ট আন্দোলনে তিনি নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসেন। তিনি ছিলেন ভাষা-আন্দোলন-এর প্রথম কারাবন্দিদের অন্যতম (১১ই মার্চ ১৯৪৮)। ভাষা-আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্বে (১৯৫২) কারাগারে বন্দি অবস্থায় তিনি কর্মী-সংগঠকদের যে-কোনো অবস্থায় ২১শে ফেব্রুয়ারির কর্মসূচি পালনের দিকনির্দেশনা
দান করে নিজে ফরিদপুর কারাগারে দীর্ঘ ১১দিন অনশন পালন করেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ২২ মাসের মধ্যে ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজগার্ডেনে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি কারাগারে বন্দি অবস্থায় নতুন এ দলের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম- সম্পাদক নির্বাচিত হন।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সঙ্গে-সঙ্গেই বঙ্গবন্ধু দেখতে পেলেন বাঙালিদের ওপর পূর্বে হিন্দু জমিদার-মহাজনদের স্থলে পশ্চিম পাকিস্তানভিত্তিক উর্দুভাষী শাসক-শোষক গোষ্ঠীর শোষণ ও আধিপত্য শুরু হয়েছে। তাদের দ্বারা একই সঙ্গে বাঙালিদের ওপর শুরু হয় জাতিনিপীড়ন। ১৯৪৮ ও ৫২-র ভাষা- আন্দোলন ছিল এর প্রকাশ্য রূপ। অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সঙ্গে বাঙালির কোনো স্বপ্নই পূরণ হয়নি। শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন যে, পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক ধাঁচের রাষ্ট্রকাঠামোয় বাঙালির কোনো মুক্তিই সম্ভব নয়। অতএব এ রাষ্ট্রকাঠামো বা সম্পর্ক ভাঙ্গা জরুরি। এ নিয়ে সোহ্রাওয়ার্দীর সঙ্গে তাঁর দ্বিমতও দেখা দিয়েছিল, যা মৃত্যুর পূর্বে (১৯৬৩) সোহ্রাওয়ার্দীর রেখে যাওয়া ডায়েরি থেকে জানা যায়।
বঙ্গবন্ধু ভালো করেই জানতেন যে, পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক ধাঁচের রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙ্গে বাঙালির জাতীয় বা সার্বিক মুক্তি অর্জনের লড়াই কত কঠিন। এজন্য অত্যাবশ্যক ছিল শক্তিশালী রাজনৈতিক দল বা মুক্তির মঞ্চ। আর সে দল ছিল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাও অকস্মাৎ ঘটেনি। এর পেছনে ছিল সুদূর প্রসারী লক্ষ্য। মনে রাখা আবশ্যক, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ছিল বাংলা ও বাঙালির স্বার্থের পক্ষের দল – কখনো সর্ব পাকিস্তানভিত্তিক দল ছিল না বা তদ্রূপভাবে গড়ে তোলার কোনো কার্যকর উদ্যোগ বা পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়নি। ১৯৫৩ সালে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হন। বস্তুত শুরু থেকেই তিনি সংগঠন গড়ে তোলার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। ১৯৫৬-১৯৫৭ সালে আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন পূর্ব বাংলার আওয়ামী লীগ সরকারের ৯ মাস মন্ত্রী থাকার পর স্বেচ্ছায় মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে তিনি শুধু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে একটি শক্তিশালী ভিতের ওপর দলকে দাঁড় করিয়ে একই সঙ্গে এটিকে বাঙালির জাতীয় মুক্তির মঞ্চে রূপান্তরিত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন, রাজনীতির ইতিহাসে যা বিরল।
১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখল, দেশে কঠোর মার্শাল ল জারি, বাঙালিদের ওপর পশ্চিম পাকিস্তান-ভিত্তিক সেনা-আমলা শাসন স্থায়ীকরণের লক্ষ্যে ওপর থেকে নিয়ন্ত্রিত তথাকথিত মৌলিক গণতন্ত্র (১৯৫৯) ব্যবস্থা প্রবর্তন ইত্যাদি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু এবার বাঙালির জন্য তাঁর স্বাধীন রাষ্ট্রধারণা বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে অগ্রসর হওয়ার ব্যাপারে মনস্থির করেন। আইয়ুবের সেনাশাসনবিরোধী আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির সহযোগিতা কামনা করে কমরেড মনি সিংহ ও খোকা রায়ের সঙ্গে ১৯৬১ সালে গোপন বৈঠককালে তিনি তা প্রকাশ করেন, যা উভয়ই তাঁদের পরবর্তীকালে প্রকাশিত গ্রন্থে গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করেন। –১৯৬২ সালে বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার প্রশ্নে সম্ভাব্য সহযোগিতা চেয়ে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর নিকট চিঠি লেখেন, যা ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের ঐ সময়কার কর্মকর্তা শশাঙ্ক ব্যানার্জী তাঁর সম্প্রতি প্রকাশিত এক বইয়ে সবিস্তার তুলে ধরেছেন। ১৯৬৫ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৭ দিনের যুদ্ধের পটভূমিতে বঙ্গবন্ধু কয়েক মাসের ব্যবধানে (ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬) ‘আমাদের বাঁচার দাবী ৬-দফা কর্মসূচী’ পেশ করলে, বন্দি অবস্থায় আইয়ুব সরকার তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান এবং অন্যান্য’ শিরোনামে একটি মামলা দায়ের করে (১৯৬৮), যা ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে সে-সময় সর্বাধিক পরিচিতি পায়। বিভিন্ন তথ্যসূত্রে এখন এটি জানা যায় যে, আগরতলা মামলার অভিযোগ ভিত্তিহীন ছিল না। এও জানা যায় যে, ১৯৬২-৬৩ সালে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার প্রশ্নে ভারতের সম্ভাব্য সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত গোপনে পার্শ্ববর্তী ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় গিয়ে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্র লাল সিংহ এবং অন্য কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন।
বস্তুত ১৯৬২ সাল থেকে স্বাধীনতার লক্ষ্যে ছাত্রলীগের মধ্যে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে উঠতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা অনুযায়ীই সেটি হয়েছিল। স্মর্তব্য, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র ৪ মাস ২১ দিনের মধ্যে ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি তাঁরই উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল এ দেশের বৃহৎ ছাত্র সংগঠন, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ (বর্তমান বাংলাদেশ ছাত্রলীগ)। তখন থেকে ছাত্রলীগ ছিল আন্দোলন-সংগ্রামের ভ্যানগার্ড, বঙ্গবন্ধুর কথায়, ‘সকল আন্দোলনের জনক’। ৪৮ ও ৫২-র ভাষা-আন্দোলনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু কৌশলগত কারণে তাঁর নতুন কোনো রাজনৈতিক ধারণা বা পরিকল্পনা প্রথমে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতির মাঠে তুলে ধরতেন। সময় ও অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে-সঙ্গে ছাত্রলীগের রাজনীতির ভাষা ও স্লোগানের পরিবর্তন ছিল এরই অংশ। বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ছিল জনগণকে প্রস্তুত ও সঙ্গে নিয়ে ধাপে-ধাপে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যাওয়া। বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন তার আর একটি বড় প্রমাণ, ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের যে কাউন্সিলে ঐতিহাসিক ৬-দফা কর্মসূচি গৃহীত হয় এবং তিনি দলের সভাপতি নির্বাচিত হন, ঐ কাউন্সিলের (১৮-২০শে মার্চ, ইডেন হোটেল, মতিঝিল) উদ্বোধনী সঙ্গীত ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’, যা আজ স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। তবে রাষ্ট্রদ্রোহিতার সর্বপ্রকার ঝুঁকি থাকায় বাংলার স্বাধীনতার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু খুবই সতকর্তার সঙ্গে অগ্রসর হয়েছিলেন। একই কারণে ৬-দফার মূল লক্ষ্য বাঙালির জাতীয় মুক্তি বা স্বাধীনতা হওয়া সত্ত্বেও, তা প্রচারকালে তিনি কখনো সরাসরি ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি প্রকাশ্যে উচ্চারণ করেননি। ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ-এও একই কৌশল গ্রহণ করেন।
ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতৃবৃন্দের মধ্যে শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক, আমির হোসেন আমু, কাজী আরেফ আহমদ, শেখ শহীদুল ইসলাম, খালেদ মোহাম্মদ আলী, এম এ মান্নান (চট্টগ্রাম), চিত্তরঞ্জন গুহ (রাজবাড়ী), অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হানিফ (নোয়াখালী) প্রমুখ স্বাধীনতার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশাবলি জনগণের মধ্যে পৌঁছে দেয়া এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ঐ লক্ষ্যে প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এভাবে ছাত্রলীগের মধ্যে স্বাধীনতার পক্ষে একটি অনানুষ্ঠানিক নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে, যা পরে স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট নামেও তা কখনো উল্লিখিত। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৬-দফার আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১-এর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে এ নেটওয়ার্কের সদস্যগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের সময়
মুজিব বাহিনী – নামে ছাত্র-তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করে মুক্তিযুদ্ধের যে সশস্ত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল, শুরুতে তা বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ) নামে পরিচিত ছিল। [হারুন-অর-রশিদ]

তথ্যনির্দেশ: মনি সিংহ, জীবন-সংগ্রাম, ঢাকা ১৯৯২; খোকা রায়, সংগ্রামের তিন দশক (১৯৩৮-১৯৬৮), ঢাকা ১৯৮৬; হরিভূষণ পাল, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ফিরে দেখা, আগরতলা ২০১৫; কাজী আরেফ আহমেদ, বাঙালির জাতীয় রাষ্ট্র, ঢাকা ২০১৪; ডা. মাহফুজুর রহমান, বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগ-নিউক্লিয়াস, চট্টগ্রাম ২০১৩; মুহম্মদ শামসুল হক, স্বাধীনতার সশস্ত্র প্রস্তুতি ও বঙ্গবন্ধু, চট্টগ্রাম ২০০৯; Sasanka Banerjee,India, Mujbur Rahman, Bangladesh liberation & Pakistan political treatise, Dhaka 2011

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড