You dont have javascript enabled! Please enable it! বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের চিত্রশিল্পী, ভাস্কর ও খোদাই শিল্পী সোমনাথ হোর - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের চিত্রশিল্পী, ভাস্কর ও খোদাই শিল্পী সোমনাথ হোর

সোমনাথ হোর, পদ্মভূষণ (১৯২১-২০০৬) ভারতের চিত্রশিল্পী, ভাস্কর ও খোদাই শিল্পী। তিনি ১৯২১ সালে পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) চট্টগ্রাম জেলার বারামা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তরুণ বয়সেই তিনি কমিউনিস্ট পার্টি র সঙ্গে যুক্ত হন। পার্টির পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি কলকাতার গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট এন্ড ক্রাফটে ভর্তি হন এবং ফাইন আর্টসে ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেন (১৯৫৭)। কমিউনিস্ট পার্টির জনযুদ্ধ পত্রিকায় প্রতিবেদন লেখার মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় (১৯৪৩)।
তিনি কলকাতাস্থ ইন্ডিয়ান কলেজ অব আর্টস এন্ড ড্রাফটসম্যানশিপের প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন (১৯৫৪-৫৮)। তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গ্রাফিকস ও খোদাই শিল্প বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রফেসর নিযুক্ত হয়েছিলেন (১৯৮৪)। ১৯৭০ সাল থেকে তিনি ভাস্কর্য শিল্পের কাজ শুরু করেন। ব্রোঞ্জ শিল্পেও তিনি নিপুণ ছিলেন। শিল্পকর্মে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মভূষণ’ খেতাবে ভূষিত হন (২০০৭)। তিনি ললিতকলা একাডেমি কর্তৃক জাতীয় পুরস্কার (১৯৬০, ১৯৬২ ও ১৯৬৩) ও ললিতকলা রত্ন পুরস্কার (২০০৪) ছাড়াও বহু পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৬ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে সোমনাথ হোর কলকাতার শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেন। তিনি অনেক দুর্লভ ছবি এঁকে ও ভাস্কর্য তৈরি করে প্রদর্শনীর আয়োজন করেন, যা অসংখ্য মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ও বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তিনি প্রদর্শনীর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে শরণার্থীদের জন্য প্রদান করেন। তাঁর শিল্পকর্মে নির্যাতন, গণহত্যা, ক্ষুধার চিত্র ও পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত নৃশংসতার প্রতিফলন ঘটে। যুদ্ধের ভয়াবহতার শিকার নারীদের নিয়েও তিনি অনেক ভাস্কর্য তৈরি করেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১লা অক্টোবর ২০১৩ সোমনাথ হোর-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড