You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.04 | সোয়াদী যুদ্ধ (কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ) - সংগ্রামের নোটবুক

সোয়াদী যুদ্ধ (কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ)

সোয়াদী যুদ্ধ (কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ) সংঘটিত হয় ৪ঠা ডিসেম্বর। এতে উভয় পক্ষে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে।
সোয়াদী কোটচাঁদপুর উপজেলার দোড়া ইউনিয়নের খুলনা- রাজশাহী রেললাইন সংলগ্ন একটি গ্রাম। যুদ্ধকালীন সময়ে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল এ রেললাইনটি। ভারত সীমান্ত কোটচাঁদপুর হতে ৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে। কোটচাঁদপুর ছোট শহর হলেও যোগাযোগের সুবিধার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। রাজধানী ঢাকা ও যশোরের সঙ্গে এর যোগাযোগ সহজতর ছিল।
ডিসেম্বর মাসে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পূর্বে যুদ্ধ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ চরম আকার ধারণ করে। নভেম্বরে সাফদারপুর যুদ্ধের পর পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এ-সময় ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সমন্বয়ে যৌথবাহিনী গঠিত হয়। মিত্রবাহিনী সীমান্তবর্তী অঞ্চলে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। তাঁরা দর্শনা, বানপুর, চ্যাঙখালী ও ধোপাখালী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। মিত্রবাহিনীর ৪ মাউনটেইন ডিভিশনের ৬২ মাউনটেইন ব্রিগেড জীবননগর- কালীগঞ্জে অগ্রাভিযান পরিচালনার দায়িত্বে ছিল। মিত্রবাহিনীর জিওসি মেজর জেনারেল বারারের পরিকল্পনা অনুযায়ী উথলী-সোয়াদীতে অভিযান পরিচালিত হয়। খালিশপুর যুদ্ধের পর পাকিস্তানি বাহিনী কালীগঞ্জ- ঝিনাইদহের দিকে পালাতে থাকে। এদিকে পাকিস্তানি বাহিনীর ৫৭ ব্রিগেডের সেনাদল ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার মুঞ্জুরের নেতৃত্বে ৫০ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের কিছু অংশ সোয়াদীতে অবস্থান নেয়। পাকিস্তানি বাহিনী ভেবেছিল মিত্রবাহিনী চুয়াডাঙ্গা অথবা কালীগঞ্জ দিয়ে অগ্রসর হবে। এজন্যই তারা সোয়াদীতে অবস্থান নেয়। মিত্রবাহিনী ৪১ ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার টরির নেতৃত্বে মিশিগান-উথলী- সোয়াদী-কোটচাঁদপুরের দিকে অগ্রসর হয়। তাঁরা চুয়াডাঙ্গাকে ঝিনাইদহ থেকে পৃথক করার জন্য সাধুহাটির দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। এ সময় মিত্রবাহিনী সোয়াদীর কাছে পাকিস্তানি বাহিনী দ্বারা অপ্রত্যাশিত বাধার সম্মুখীন হয়। এখানে উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধের পরিধি ছিল সোয়াদী, শাহপুর, মান্দারবাড়িয়া, সাফদারপুর, ভোমরাডাঙ্গা ও ছয়খাদা পর্যন্ত বিস্তৃত। এ-যুদ্ধ ২৪ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। ৪ঠা ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পাকিস্তানি বাহিনীর ৫০ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট পশ্চাদপসরণ করে। এ-যুদ্ধে উভয় পক্ষে ব্যাপক হতাহত হয়। [দেব নারায়ণ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড