You dont have javascript enabled! Please enable it!

সোনাইমুড়ী-চাটখিল রোডের যুদ্ধ (সোনাইমুড়ী, নোয়াখালী)

সোনাইমুড়ী-চাটখিল রোডের যুদ্ধ (সোনাইমুড়ী, নোয়াখালী) সংঘটিত হয় ২৯শে অক্টোবর। এতে ৭০-৮০ জন পাকসেনা হতাহত এবং ৪-৫ জন রাজাকার নিহত হয়। ঘটনার দিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বেলুচ রেজিমেন্টের ৪টি কোম্পানি কুমিল্লার লাকসাম থেকে বের হয়ে দূরপাল্লার কামান ও রকেটের সাহায্যে ফায়ার করতে-করতে সোনাইমুড়ী হয়ে চাটখিল রোডের দিকে অগ্রসর হয়। তাদের ভারী অস্ত্র, কামান ও রকেটের ফায়ারে মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধারা কিছুটা পেছনে ফিরে আসতে বাধ্য হন। এই সুযোগে শত্রুবাহিনী বাধাহীনভাবে অগ্রসর হয় এবং নিরীহ সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালায়। তাদের নিক্ষিপ্ত রকেটের আঘাতে এক বাড়ির ৫ জন সাধারণ মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বাধাহীন অগ্রসরের কথা শুনে কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার লুৎফর রহমান- তাঁর সঙ্গে থাকা মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে রামগঞ্জ থেকে দ্রুত ঘটনাস্থলের কাছাকাছি এসে পৌঁছান। এখানে এসেই তাঁরা মুক্তিযোদ্ধাদের একত্রিত করেন। এরপর সংঘবদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিপুল বিক্রমে শত্রুদের ওপর পাল্টা আক্রমণ করেন। উভয় পক্ষের মধ্যে ৭-৮ ঘণ্টা তুমুল যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘবদ্ধ আক্রমণের ফলে শত্রুবাহিনীর ৭০-৮০ জন সৈন্য হতাহত হয়। এ অবস্থায় শত্রুপক্ষ উদভ্রান্ত হয়ে পড়ে। তারা শেলিং করতে- করতে নিহত ও আহত সৈন্যদের নিয়ে পিছু হটতে থাকে। অসীম সাহসী সুবেদার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে তাঁর বাহিনী ক্রমশ শত্রুবাহিনীর দিকে এগিয়ে যায়। শত্রু-অবস্থানে পৌঁছে তিনি দেখতে পান মাঠের এদিক-সেদিক ছড়িয়ে আছে শত্রুদের অসংখ্য লাশ। সৈন্যদের শরীরের নানান অংশ মাটিতে পড়ে আছে, পড়ে আছে শতশত খালি বুলেটের ঘোসা এবং অ্যামুনেশনের চেইন। এদিনের যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ দেশীয় সহযোগী রাজাকাররা পালিয়ে যাওয়ার সময় ৪-৫ জন রাজাকার আপানিয়া পুলের ওপর মুক্তিবাহিনীর হাবিলদার মন্তাজ মিয়ার দলের আক্রমণে নিহত হয়। অন্যরা পালিয়ে রক্ষা পায়। এ-যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর কয়েকজন সদস্য সামান্য আহত হলেও তাঁদের মারাত্মক কোনো ক্ষতি হয়নি। এ যুদ্ধের পর মুক্তিবাহিনীর মনোবল আরো বেড়ে যায়। [মো. ফখরুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!