You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবী সৈয়দ আবুল মনসুর হাবিবুল্লাহ

সৈয়দ আবুল মনসুর হাবিবুল্লাহ (১৯১৭-১৯৯৬) ভারতের রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবী। তিনি ১৯১৭ সালের ১৭ই নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বর্ধমান টাউন স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন শাস্ত্রে স্নাতক ও ইতিহাস শাস্ত্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই) বিভিন্ন আন্দোলনে তিনি অংশ নেন। তিনি ভারতীয় ছাত্র ফেডারেশন ও কৃষক সভার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। ১৯৪৪ সালে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তেভাগা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় নেতৃত্ব দেন। এ সময়ে তিনি লাঙল যার জমি তার শীর্ষক জনপ্রিয় পুস্তিকাটি রচনা করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তিনি পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) বসবাস শুরু করেন এবং পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি র প্রাদেশিক কমিটির সদস্য হন। ১৯৪৯ সালে রাজনৈতিক কারণে তাঁকে গ্রেফতার করে রংপুর কারাগারে প্রেরণ এবং পরবর্তীকালে রাজশাহী কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এখানে তিনি পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন (১৯৫০)। পরবর্তীকালে তাঁকে পাকিস্তান থেকে বহিষ্কার করা হয়। ১৯৫২ সালে ভারতে প্রত্যাবর্তন করে তিনি পুনরায় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন এবং সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। রাজনৈতিক কারণে চাকরিচ্যুত হলে ১৯৬১ সালে তিনি ওকালতি শুরু করেন। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিআই(এম)-এর সদস্য হিসেবে তিনি ১৯৬২ সালে মন্তেশ্বর এবং ১৯৬৯, ১৯৭১, ১৯৭৭, ১৯৮২ ও ১৯৮৭ সালে নন্দনঘাট আসন থেকে সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৭-৮২ সময়কালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার এবং ১৯৮২-৮৭ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আইন ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি কৃষকদের সমস্যা নিয়ে লেখালেখি করেন। তিনি ১৯৯৬ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে সিপিআই(এম)-এর কৃষকনেতা হিসেবে সৈয়দ আবুল মনসুর হাবিবুল্লাহ বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্যে আত্মনিয়োগ করেন। বিভিন্ন শরণার্থী শিবির-এ উপস্থিত থেকে তিনি ত্রাণকার্য পরিচালনা করেন। মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে পশ্চিমবঙ্গে জনমত গঠনেও তিনি কাজ করেন। আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতি আহ্বান জানান। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৫ই ডিসেম্বর ২০১২ সৈয়দ আবুল মনসুর হাবিবুল্লাহ-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!