You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর বিক্রম সৈয়দ মনসুর আলী

সৈয়দ মনসুর আলী, বীর বিক্রম (১৯৩৯-২০০২) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৩৯ সালের ৭ই মার্চ ভারতের আসাম রাজ্যের গোয়ালাপাড়া জেলার ধুবড়ী শহরের বিদ্যাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ শাহাবান আলী এবং মাতার নাম জহিরুন নেছা। ১৯৪৭ সালে তিনি কুড়িগ্রাম শহরে অবস্থিত তাঁর বোনের বাড়িতে স্থায়ীভাবে চলে আসেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তিনি খুব বেশি গ্রহণ করতে পারেননি। তিনি সৈয়দ মনসুর আলী টুংকু নামে এলাকায় পরিচিত ছিলেন।
সৈয়দ মনসুর আলী ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি বিমান বাহিনীতে চাকরি করেন। চাকরির কারণে পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোর, করাচি, রাওয়ালপিন্ডি ইত্যাদি স্থানে অবস্থানকালে তিনি বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানিদের বিদ্বেষমূলক মনোভাব ও আচরণ খুব কাছে থেকে প্রত্যক্ষ করেন। বাঙালিদের এবং পূর্ব বাংলার প্রতি তাদের বৈষম্যমূলক আচরণ তাঁকে বিক্ষুব্ধ করে। তাই চাকরি ছেড়ে তিনি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। কুড়িগ্রামে তিনি শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলেন। তিনি ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে অসহযোগ আন্দোলনএ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কুড়িগ্রামে জনমত গঠন করেন।
২৫শে মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালিদের ওপর নির্মম হত্যাকাণ্ড শুরু করলে সৈয়দ মনসুর আলী সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য স্থানীয় কৃষক-শ্রমিক ও তরুণদের সংগঠিত করেন। তিনি বিদ্রোহী ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস) ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধে যোগ দেন। ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ উদ্দিনের নেতৃত্বে তিনি তিস্তা ব্রিজ এবং কুড়িগ্রাম ও রংপুরের বিভিন্ন প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। প্রতিরোধ-পর্ব শেষে সৈয়দ মনসুর আলী ভারতে যান। ফুলবাড়ী-ভুরুঙ্গামারী-উলীপুর সাব-সেক্টরের অধীনে তিনি মাদারগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নভেম্বর মাসে এক কোম্পানি সৈন্য নিয়ে তিনি পাকবাহিনীর যাত্রাপুর ক্যাম্প আক্রমণ করেন। এ আক্রমণে ৩ জন পাকসেনা ও ৯ জন রাজাকার নিহত হয়। এ ক্যাম্পের ১০০ রাজাকার তাঁদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। তিনি পাকবাহিনীর মোঘলগাছা ঘাঁটি আক্রমণ করে তাদের অনেক ক্ষতি সাধন করেন। কুড়িগ্রাম থেক ট্রেনে উলিপুর যাতায়তের সময় পাকসেনারা সৈয়দ মনসুর আলীর আক্রমণের শিকার হয়। এখানে ৩৫ জন পাকসেনা হতাহত হয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্যাপ্টেন নওয়াজিসের ঘনিষ্ঠ সহযোগীর ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন তথ্য সরবরাহের কাজেও তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নম্বর ২১০, খেতাবের সনদ নম্বর ১৩৫)।
স্বাধীনতার পর সৈয়দ মনসুর আলী কুড়িগ্রাম পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি মোট ৩ বার কুড়িগ্রাম পৌরসভার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। তিনি কুড়িগ্রাম শহরে করাচি, রাওয়ালপিন্ডি ইত্যাদি স্থানে অবস্থানকালে তিনি বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানিদের বিদ্বেষমূলক মনোভাব ও আচরণ খুব কাছে থেকে প্রত্যক্ষ করেন। বাঙালিদের এবং পূর্ব বাংলার প্রতি তাদের বৈষম্যমূলক আচরণ তাঁকে বিক্ষুব্ধ করে। তাই চাকরি ছেড়ে তিনি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। কুড়িগ্রামে তিনি শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলেন। তিনি ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে অসহযোগ আন্দোলনএ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কুড়িগ্রামে জনমত গঠন করেন।
২৫শে মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালিদের ওপর নির্মম হত্যাকাণ্ড শুরু করলে সৈয়দ মনসুর আলী সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য স্থানীয় কৃষক-শ্রমিক ও তরুণদের সংগঠিত করেন। তিনি বিদ্রোহী ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস) ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধে যোগ দেন। ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ উদ্দিনের নেতৃত্বে তিনি তিস্তা ব্রিজ এবং কুড়িগ্রাম ও রংপুরের বিভিন্ন প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। প্রতিরোধ-পর্ব শেষে সৈয়দ মনসুর আলী ভারতে যান। ফুলবাড়ী-ভুরুঙ্গামারী-উলীপুর সাব-সেক্টরের অধীনে তিনি মাদারগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নভেম্বর মাসে এক কোম্পানি সৈন্য নিয়ে তিনি পাকবাহিনীর যাত্রাপুর ক্যাম্প আক্রমণ করেন। এ আক্রমণে ৩ জন পাকসেনা ও ৯ জন রাজাকার – নিহত হয়। এ ক্যাম্পের ১০০ রাজাকার তাঁদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। তিনি পাকবাহিনীর মোঘলগাছা ঘাঁটি আক্রমণ করে তাদের অনেক ক্ষতি সাধন করেন। কুড়িগ্রাম থেক ট্রেনে উলিপুর যাতায়তের সময় পাকসেনারা সৈয়দ মনসুর আলীর আক্রমণের শিকার হয়। এখানে ৩৫ জন পাকসেনা হতাহত হয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্যাপ্টেন নওয়াজিসের ঘনিষ্ঠ সহযোগীর ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন তথ্য সরবরাহের কাজেও তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করে (গেজেট নম্বর ২১০, খেতাবের সনদ নম্বর ১৩৫)।
স্বাধীনতার পর সৈয়দ মনসুর আলী কুড়িগ্রাম পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি মোট ৩ বার কুড়িগ্রাম পৌরসভার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। তিনি কুড়িগ্রাম শহরে আগমন উপলক্ষে সেখানকার দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসার ও সৈনিকগণ এবং জয়দেবপুরের সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বাধীনে সাধারণ জনতা সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। ঐ সময় সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম অন্যান্যদের সঙ্গে বিদ্রোহে যোগ দেন। ২৫শে মার্চ নিরীহ বাঙালিদের ওপর পাকহানাদার বাহিনী হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়লে মেজর কে এম ফিউল্লাহ, বীর উত্তমএর নেতৃত্বে জয়দেবপুরে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সরাসরি বিদ্রোহ ঘোষণা করে। সৈয়দ ইবরাহিম ছিলেন তখন এ ব্যাটালিয়নের কনিষ্ঠতম অফিসার। এভাবে তাঁর মুক্তিযুদ্ধে যোগদান।
২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ৩০শে মার্চ ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ- ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরে আসে। এর সদর দপ্তর স্থাপন করা হয় মাধবপুরের তেলিয়াপাড়া চা বাগানে পরবর্তীতে এটি ৩ নম্বর সেক্টরের অধীনে চলে যায় এবং সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত হন মেজর কে এম সফিউল্লাহ। আখাউড়া- ব্রাহ্মণবাড়িয়া-মেঘনা-নরসিংদী-রূপগঞ্জ-ডেমরা ও ঢাকার অংশবিশেষ নিয়ে ৩নং সেক্টর গঠিত ছিল। সৈয়দ ইবরাহিম তেলিয়াপাড়া, আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ারসহ ৩নং সেক্টরের বিভিন্ন স্থানে পাকহানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১লা থেকে ৪ঠা ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে সৈয়দ ইবরাহিম আখাউড়া যুদ্ধে অসম সাহসিকতা প্রদর্শন করেন। প্রত্যেকটি যুদ্ধে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি যুদ্ধ করেছেন এবং সহযোদ্ধাদের সাহস যুগিয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার কর্তৃক সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম-কে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তাঁর গেজেট নম্বর ২৬৮। স্বাধীনতাপরবর্তী ২৫ বছরেরও অধিক সময়ে বাংলদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরিকালে তিনি কোম্পানি কমান্ডার, রেজিমেন্ট কমান্ডার, ব্যাটালিয়ন কমান্ডার, ব্রিগেড কমান্ডার, জেনারেল অফিসার কমান্ডিং বা জিওসি, ডাইরেক্টর অব মিলিটারি অপারেশন্স, বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (ভাটিয়ারি)-এর কমান্ডান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৭-৮৯ সময়কালে খাগড়াছড়িতে ব্রিগেড কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সেখানে প্রশাসনিক সংস্কার বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ-এর মহাপরিচালক ছিলেন। ১৫ই জুন ১৯৯৬ সালে সেনাবাহিনী থেকে তিনি অবসরে যান। অবসর জীবনে তিনি ১৯৯৯ সালে ‘সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক এন্ড পিস স্টাডিজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড ও সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত রয়েছেন। ২০০৭ সালে তিনি ‘বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি’ প্রতিষ্ঠাতা করেন এবং তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।’ তিনি একাধিক গ্রন্থের রচয়িতা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— মিশ্র কথন (২০১১), সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে আটাশ বছর (১৯৯৯), পাবর্ত্য চট্টগ্রাম শান্তি প্রক্রিয়া ও পরিবেশ পরিস্থিতির মূল্যায়ন (২০০১) ইত্যাদি। তিনি এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম ফোরকান ইবরাহিম। [হারুন-অর-রশিদ ও জেবউননেছা]
তথ্যসূত্রঃ মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক, মিশ্র কথন, অনন্যা প্রকাশনী ২০১১; সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম কর্তৃক সরবরাহকৃত জীবন-বৃত্তান্ত, ১২ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!