You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর প্রতীক সৈয়দ রফিকুল ইসলাম

সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৬) বিমান বাহিনীর সৈনিক হয়েও একাধিক স্থল যুদ্ধের সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৬ সালের ২রা জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দশদোনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম নান্নু মিয়া সরকার এবং মাতার নাম রকিবা খাতুন। সৈয়দ রফিকুল ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অধ্যয়ন করেন। বাঙালিদের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানিদের অন্যায় ও শোষণমূলক আচরণের বিরুদ্ধে তরুণ বয়স থেকেই তাঁর মনে ক্ষোভ ছিল। পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদানের মধ্য দিয়ে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। চাকরি জীবনে পশ্চিম পাকিস্তানে থাকাকালে তিনি বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানিদের বৈষম্যমূলক মনোভাব ও আচরণ আরো গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করেন।
৭১ সালে সৈয়দ রফিকুল ইসলাম পশ্চিম পাকিস্তানে চাকরিরত ছিলেন। ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি ছুটিতে বাঞ্ছারামপুর আসেন। এ-সময় দেশে বিরাজমান উত্তপ্ত রাজনৈতিক অবস্থা দেখে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে না গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে তিনি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। এক সময় ভারতে গিয়ে ৩ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন। জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে তিনি বেশ কয়েকটি যুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেন। নরসিংদীর বেলাবো (১৩-১৪ই জুলাই), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও সিঙ্গারবিল, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ ও তেলিয়াপাড়া এবং আরো কয়েকটি স্থানে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে তিনি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। বেলাবোতে পাকসেনাদের ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে অসীম সাহস ও বুদ্ধিমত্তার কারণে তিনি প্রাণে রক্ষা পান। এখানে তাঁরা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে স্বল্প অস্ত্র ও মাত্র কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে যুদ্ধ করেন। সিংগারবিল যুদ্ধে অন্য সহযোদ্ধাদের সঙ্গে তিনি বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। বীরত্ব ও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতার জন্য তিনি খ্যাত ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার সৈয়দ রফিকুল ইসলামকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। তিনি ২ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম জাহানারা ইসলাম। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!