You dont have javascript enabled! Please enable it!

সেনগ্রাম গণহত্যা (বীরগঞ্জ, দিনাজপুর)

সেনগ্রাম গণহত্যা (বীরগঞ্জ, দিনাজপুর) সংঘটিত হয় ২৩শে মে। এতে অনেক সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়। সেনগ্রাম বীরগঞ্জ উপজেলার ৪নং পাল্টাপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম। এর অবস্থান আত্রাই নদীর পশ্চিম তীরে। উপজেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ১১ কিলোমিটার। এর উত্তরে ধুলট, দক্ষিণে মসিদপুর, পশ্চিমে জামালপুর, উত্তর-পশ্চিমে কোসন্ত গ্রাম এবং পূর্বে আত্রাই নদী। ২৩শে মে বিহারি ও পাকিস্তানি সেনারা এ গ্রামে গণহত্যা চালায়। সেনগ্রাম ছিল হিন্দু অধ্যুষিত। কিন্তু গণহত্যার শিকারদের অধিকাংশ ছিল মুসলমান। বর্বরোচিত এ গণহত্যায় দূর-দূরান্ত থেকে পালিয়ে এসে এ গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল এমন লোকজনই বেশি মারা যায়। ফলে তাদের সকলের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
ঘটনার দিন দুপুর বেলা মুসলমানরা যখন জোহরের নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, ঠিক তখন পাকিস্তানি হায়েনার দল হানা দেয়। তারা হোমিও ডাক্তার পূর্ণ চন্দ্র রায়, বড়বাড়ির তমিজউদ্দিন শাহ, মেহের আলী, আমিনুল মাস্টারের পিতা, বজলার চেয়ারম্যানের শ্বশুর মো. হাফিজউদ্দিনসহ ৩৫-৪০ জন লোককে ধরে এনে রশি দিয়ে বাঁধে। এরপর গুলি করে। এতে বেশিরভাগ লোকই নিহত হয়। এ হত্যাকান্ডের মূল নায়ক ছিল বিহারি রাজাকার অলি বকরি। সে ছিল সন্ত্রাসী ও দুর্ধর্ষ প্রকৃতির। দিনে ২-৩ বার গ্রামে এসে গরু, ছাগল, চাল-ডালসহ বিভিন্ন মামালামাল নিয়ে যেত। লুটপাটের সুবিধার জন্য সে পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে এসে এ গণহত্যা ঘটায়। সেদিন গ্রামের নারীদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয় এবং প্রায় সব বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়।
সেনগ্রাম গণহত্যায় নিহতদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে, তারা হলো— তমিজউদ্দিন শাহ (৪৮) (পিতা ইউসুফ আলী শাহ, সেনগ্রাম), ডা. পূর্ণ চন্দ্র রায় (৩৭) (ধুলট), প্রসন্ন কুমার রায় (৩৯) (সেনগ্রাম), মনিরাম রায় (২০) (সেনগ্রাম), মাহবুব হোসেন বুলু (২৩) (পিতা মুসলিমউদ্দিন শাহ, সেনগ্রাম), মো. ইসমাইল (২৭) (সুন্দইল), মো. নুরুল হক (২৪) (ভাতগাঁও, কাহারোল), মেহের আলী (১৯) (সেনগ্রাম) ও বজির দেওয়ানী (২৫) (পিতা রেজ্জাক আলী শাহ, সেনগ্রাম)। এ গণহত্যার ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণে বেঁচে যান বজলার চেয়ারম্যানের শ্বশুর মো. হাফিজউদ্দিন, শহীদ মিজানুর রহমান (পিতা মো. আফতাবউদ্দিন, সেনগ্রাম; ১৫ই ডিসেম্বর পাকসেনাদের গুলিতে শহীদ)-এর চাচা খয়রাত আলী প্রমুখ। শহীদদের স্মরণে সেনগ্রামে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। [আজহারুল আজাদ জুয়েল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!