You dont have javascript enabled! Please enable it!

সেনদিয়া গণহত্যা (রাজৈর, মাদারীপুর)

সেনদিয়া গণহত্যা (রাজৈর, মাদারীপুর) সংঘটিত হয় ২০শে মে। মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানার খালিয়া ইউনিয়নের সেনদিয়া গ্রামে সংঘটিত এ গণহত্যায় ১২৬ জন মানুষ প্রাণ হারান। মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের এক নিদর্শন এ গণহত্যা। সেনদিয়া রাজৈর উপজেলাধীন সমৃদ্ধ বাণিজ্য বন্দর টেকেরহাট থেকে তিন কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকার-রা টেকেরহাট ঘাঁটি থেকে এসে এ গণহত্যা সংঘটিত করে। সকালে তারা নদীপথে টেকেরহাট থেকে লঞ্চে গোপালগঞ্জের ভেন্নাবাড়ি গ্রামের ঘাটে আসে। ভেন্নাবাড়ি থেকে হেঁটে প্রথমে রথবাড়ি, কদমবাড়ি ও ফুলবাড়ি গ্রামে প্রবেশ করে অগ্নিসংযোগ করে। পরে তারা মহিষমারী গ্রামের ভেতর দিয়ে হিন্দু অধ্যুষিত উল্লাবাড়ি গ্রামে প্রবেশ করে। গান পাউডার ছিটিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা গৌরচন্দ্র বালার বাড়িঘরসহ সম্পূর্ণ গ্রামটি জ্বালিয়ে দেয়। এরপর তারা ছাতিয়ানবাড়ি গ্রামের মধ্য দিয়ে সেনদিয়া গ্রামে প্রবেশ করে। এ গ্রামে তারা ১২৬ জন মানুষকে হত্যা করে। গ্রামের প্রধান তিনটি স্থানে তারা গণহত্যা সংঘটিত করে। স্থানগুলো হলো— পশ্চিম সেনদিয়ার ফকিরের ভিটা, সেনদিয়া বাওয়ালি ভিটা এবং বারিকদার বাড়ির উত্তরের বাঁশবাগান। নিহতদের মধ্যে যে ৭১ জনের পরিচয় জানা গেছে, তারা হলেন— পরান শিকারি (পিতা যজ্ঞেশ্বর শিকারি), সুরধনী শিকারি (স্বামী পরান শিকারি), মধুমালা শিকারি (পিতা পরান শিকারি), পুলিন শিকারি (পিতা পরান শিকারি), বড়বুড়ি শিকারি (পিতা অক্ষয় শিকারি), বিনোদিনী শিকারি (পিতা জটু শিকারি), প্রমথ শিকারি (পিতা প্রিয়লাল শিকারি), সুবাসী বেপারী (স্বামী কালীচরণ বেপারী), কুমদী বেপারী (পিতা শ্যামাচরণ বেপারী), মরী মণ্ডল (স্বামী ব্রজবাসী মণ্ডল), সুমিত্রা বৈরাগী (স্বামী গোবিন্দ বৈরাগী), শোভা রানী বৈরাগী (স্বামী গৌরাঙ্গ বৈরাগী), মালতী বৈরাগী (পিতা যোগীন্দ্র বৈরাগী), তরঙ্গী বৈরাগী (স্বামী নীলকান্ত বৈরাগী), সুলতা বৈরাগী (পিতা নীলকান্ত বৈরাগী), ফেলু সরদার (পিতা চন্দ্রবান সরদার), প্রশান্ত সরদার (পিতা ফেলু সরদার), প্রসেন সরদার (পিতা ফেলু সরদার), বিরেন বাড়ৈ (পিতা বিমল বাড়ৈ), সৌদামিনী বাড়ৈ (স্বামী মাখন বাড়ৈ), মণিমালা বাড়ৈ (পিতা মাখন বাড়ৈ), দিপালী বাড়ৈ (পিতা মদন বাড়ৈ), ভ্রান্তি রানী মণ্ডল (স্বামী সুরেন মণ্ডল), বেনী মাধব মণ্ডল (পিতা ফটিক মণ্ডল), যশোদা মণ্ডল (স্বামী দ্বারকা নাথ মণ্ডল), জ্ঞানদা মণ্ডল (স্বামী দ্বারকা নাথ মণ্ডল), ব্রজবাসী মণ্ডল (পিতা রাহুল চাঁদ মণ্ডল), মরী রানী মণ্ডল (স্বামী ব্রজেশ্বর মণ্ডল), পাষানী বিশ্বাস (স্বামী সতীশ বিশ্বাস), জুড়ান বিশ্বাস (পিতা নশিরাম বিশ্বাস), করুণা মণ্ডল (স্বামী জগবন্ধু মণ্ডল), গৌরী মণ্ডল (পিতা জগবন্ধু মণ্ডল), মণীন্দ্র মণ্ডল (পিতা জগবন্ধু মণ্ডল), বিমল বাওয়ালী (পিতা নগরবাসী বাওয়ালী), ঘাঘরী বাওয়ালী (স্বামী রতন বাওয়ালী), রাইসোনা মোহন্ত (স্বামী চৈতন্য মোহন্ত), ঘাঘরী মজুমদার (স্বামী অক্ষয় মজুমদার), পার্শ্বনাথ বারিকদার (পিতা যোগেন্দ্র বারিকদার), গৌরী বারিকদার (স্বামী পার্শ্বনাথ বারিকদার), কুমুদ রানী বারিকদার (পিতা পার্শ্বনাথ বারিকদার), মধুমালা বারিকদার (স্বামী যোগেন্দ্র বারিকদার), আলোমতি বারিকদার (স্বামী প্রেমচাদ বারিকদার), ধন্য চন্দ্র বারিকদার (পিতা নিত্যানন্দ বারিকদার), যতীন বারিকদার (পিতা ধনা বারিকদার), আন্না রানী বারিকদার (স্বামী অদন্য বারিকদার), আয়না রানী বারিকদার (পিতা অদন্য বারিকদার), ময়না রানী বারিকদার (পিতা অদন্য বারিকদার), সাধন বারিকদার (পিতা অদন্য বারিকদার), ভগবতী বারিকদার (স্বামী সূর্যকান্ত বারিকদার), শ্রীমতী বারিকদার (পিতা সূর্যকান্ত বারিকদার), পূজা রানী বারিকদার (স্বামী যতীশ বারিকদার), পুষ্প রানী বারিকদার (পিতা মুকুন্দ বারিকদার), রতিকান্ত বারিকদার (পিতা দানেশ বারিকদার), জিতেন বারিকদার (পিতা কুটিশ্বর বারিকদার), লক্ষ্মী রানী বারিকদার (স্বামী কাশীনাথ বারিকদার), মালতী বারিকদার (স্বামী লেদু বারিকদার), সুশীলা বারিকদার (পিতা মদন বারিকদার), শান্তি রানী বারিকদার (পিতা গোলক বারিকদার), সুলতা রানী বারিকদার (স্বামী মণীন্দ্র বারিকদার), জ্ঞানদা বারিকদার (স্বামী জিতেন্দ্র বারিকদার), লেবু বারিকদার (পিতা যজ্ঞেশ্বর বারিকদার), শান্তি লতা বারিকদার (পিতা গোলক বারিকদার), মালতী বারিকদার (স্বামী লেবু বারিকদার), সুমলা বারিকদার (পিতা নির্মল বারিকদার), মণীন্দ্র নাথ বারিকদার (পিতা দানেশ বারিকদার), দুঃখীরাম বারিকদার (পিতা দানেশ বারিকদার), মালতী বারিকদার (পিতা দানেশ বারিকদার), দোলা বারিকদার (স্বামী দানেশ বারিকদার), মাধবী বারিকদার (স্বামী মণীন্দ্র বারিকদার), মধুমালা বারিকদার (পিতা মণীন্দ্র বারিকদার) ও মরী মণ্ডল (পিতা ব্রজবাসী মণ্ডল)। নিহতদের শচীন বারিকদারের বাড়ির দক্ষিণের খালপাড়, বাওয়ালী বাড়ির পেছন, বাওয়ালী বাড়ির দক্ষিণ এবং পশ্চিম সেনদিয়ার আলক ফকিরের ভিটা এ চারটি স্থানে গণকবর দেয়া হয়। ২০০৯ সালের ১৪ই এপ্রিল শহীদদের স্মরণে সেনদিয়ায় একটি নামফলক স্থাপন করা হয়। [শেখ নাছিমা রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!