You dont have javascript enabled! Please enable it!

সেনেরখিল গণহত্যা (সোনাগাজী, ফেনী)

সেনেরখিল গণহত্যা (সোনাগাজী, ফেনী) সংঘটিত হয় ২৭শে জুন। চর দরবেশ ইউনিয়নের সেনেরখিল গ্রামে সংঘটিত এ গণহত্যায় ১৬৪ জন গ্রামবাসী শহীদ হন। ২৫শে মার্চের পর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-রা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান দখল করে নিলেও সোনাগাজীর সেনেরখিল জুন পর্যন্ত ছিল মুক্ত এলাকা। তাই এটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের অন্যতম নিরাপদ স্থান। এ এলাকার কৃতী সন্তান ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আলদীন (পরবর্তীকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ও দেশবরণ্য নাট্যকার)-এর নেতৃত্বে এখানে এক বিশাল ও শক্তিশালী মুক্তিবাহিনী গড়ে ওঠে। এলাকাটি ছিল হিন্দু অধ্যুষিত। এখানকার মুক্তিবাহিনী রাতদিন প্রহরায় থাকত, যাতে হানাদার বা রাজাকার বাহিনী অতি সহজে এখানে এসে হামলা করতে না পারে। এ খবর ফেনীর ইসলামী ছাত্র সংঘ-এর মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনাদের কাছে পৌঁছে যায়। তারা এ এলাকায় বিমান থেকে বোমা ফেলে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এতেও মুক্তিযোদ্ধারা শঙ্কিত না হয়ে বরং দেশমাতৃকার টানে অসীম সাহস ও মনোবল নিয়ে হানাদারদের প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে ২৭শে জুন গভীর রাতে হানাদার বাহিনী রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রসহ এসে সেনেরখিলের নতুন বাজারে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। ভেঙ্গে যায় দীর্ঘদিনের প্রতিরোধব্যূহ। পরিস্থিতি বুঝে মুক্তিযোদ্ধারা দক্ষিণে মুক্ত চর আঙ্গিনায় আশ্রয় নেন। এদিকে নতুন বাজার ও গ্রামের সর্বত্র আগুন জ্বলতে থাকে। সেই সঙ্গে চলে লুটপাট, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড। সেদিনের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে ১৬৪ জন গ্রামবাসী প্রাণ হারান। তাদের মধ্যে ২২ জনের নাম পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন— গোপাল চন্দ্র চৌধুরী (সেনেরখিল), কাজী মোমিনুল হক (বাগিসপুর), অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার হাবিবুর রহমান (মঙ্গলকান্দি), আবদুল মালেক (পালগিরি), অশ্বিনী কুমার (মঙ্গলকান্দি), মরণ মজুমদার (সেনেরখিল), কামিনী সুন্দরী (সেনেরখিল), দেবন্ত ঠাকুর (সেনেরখিল), রাখাল চন্দ্র পাল (সেনেরখিল), জ্যোতি রঞ্জন দত্ত ওরফে বাঘা (মঙ্গলকান্দি), অসীত কুমার দত্ত (মঙ্গলকান্দি), কানাই কুমার দত্ত (মঙ্গলকান্দি), গোপাল চন্দ্ৰ নাথ (মঙ্গলকান্দি), গৌরাঙ্গ কুমার শীল (সেনেরখিল), শচীন্দ্র কুমার পাল (সেনেরখিল), আবদুস সালাম (বগাদানা), হীরালাল রায় (সেনেরখিল), হরিমোহন বৈদ্য (দক্ষিণ মঙ্গলকান্দি), মাণিক্য বৈদ্য (মঙ্গলকান্দি), পুলিন চক্রবর্তী (মঙ্গলকান্দি), নান্টু চক্রবর্তী (রাজাপুর) ও অসীত দত্ত (সেনেরখিল)। [মো. ফখরুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!