সুলতানপুর গোরস্তান গণকবর (বাঘা, রাজশাহী)
সুলতানপুর গোরস্তান গণকবর (বাঘা, রাজশাহী) রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলায় অবস্থিত। এখানে ৪ জন অজ্ঞাতপরিচয় মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার পর কবর দেয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধকালে রাজশাহী জেলার সদর মহকুমার চারঘাট উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম ছিল সুলতানপুর। তখন এ এলাকাটির দক্ষিণ দিকে ছিল জলাভূমি, আর জলাভূমির পাশ দিয়েই বহমান ছিল প্রমত্তা পদ্মানদী। বর্তমানে সুলতানপুর রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের একটি গ্রাম। গ্রামের পূর্ব প্রান্তে একটি মাদ্রাসা ও তৎসংলগ্ন একটি কবরস্থান রয়েছে। এই কবরস্থানের কতকাংশ পার্শ্ববর্তী নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার দুরদুরিয়া ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামের অন্তর্ভুক্ত। মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে এই নওপাড়া গ্রামে অবস্থিত নওপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। পাকিস্তানি সেনারা মাঝে-মাঝে দিনের বেলায় এ এলাকায় টহলে এলেও রাতে এ ক্যাম্পে অবস্থান করত না। তবে রাজাকাররা এ ক্যাম্পে অবস্থান করে মুক্তিযোদ্ধাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখত এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের খবরাখবর সংগ্রহ করে পাকিস্তানি বাহিনীর নিকট পৌঁছে দিত। তারা এলাকার যুবতীদের ক্যাম্পে এনে ধর্ষণ করত এবং মুক্তিকামী যুবক ও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালাত। এছাড়া তারা এলাকার নিরীহ জনগণের গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগিসহ বিভিন্ন গৃহপালিত পশু লুণ্ঠন করে ক্যাম্পে এনে জবাই করে খেত।
অক্টোবর মাসের কোনো একদিন রাজাকার এবং টহলে আসা পাকিস্তানি সেনারা বাইনোকুলারের মাধ্যমে ক্যাম্পের দক্ষিণ দিকের বিলে একটি নৌকায় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে দেখতে পায়। তাঁদের সবাই ছিলেন বয়সে যুবক এবং সবার পরিহিত প্যান্টে ‘জয় বাংলা’ লেখা ছিল। হানাদাররা তাঁদের ওপর আক্রমণ চালায় এবং নৌকা থেকে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধাকে আটক করে। পাকিস্তানি বাহিনী তাঁদের অমানুষিক নির্যাতনের পর হত্যা করে সুলতানপুর কবরস্থানের পূর্ব-দক্ষিণ কোণায় রাস্তার ওপর একটি উঁচু স্থানে পুঁতে রাখে। স্থানীয় নন বলে এসব শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম-পরিচয় জানা যায়নি। [মো. মোস্তফা কামাল]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড