You dont have javascript enabled! Please enable it!

সূচীপাড়া গুদারাঘাট যুদ্ধ (শাহরাস্তি, চাঁদপুর)

সূচীপাড়া গুদারাঘাট যুদ্ধ (শাহরাস্তি, চাঁদপুর) সংঘটিত হয় ৮ই ডিসেম্বর। এতে কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়। তাদের গুলিতে প্রায় অর্ধশত মানুষ প্রাণ হারায় এবং আরো অর্ধশতের মতো আহত হয়।
ঘটনার দিন সকালবেলা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি দল খিলাবাজার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় এসে উপস্থিত হয়। তারা তাদের স্থানীয় সহযোগীদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য ডাকাতিয়া নদীর তীরে সূচীপাড়া গুদারাঘাট নামে পরিচিত স্থানে পৌঁছায়। বর্তমানে এ স্থানে ব্রিজ নির্মিত হয়েছে, যার নাম সূচীপাড়া ব্রিজ। এ স্থানটিই মূলত সূচীপাড়া গুদারাঘাট। নৌকা দিয়ে মানুষ এপার থেকে ওপারে যাতায়াত করত। ডাকাতিয়ার উত্তর পাড়ের জনগণ এই গুদারাঘাট দিয়ে দক্ষিণ পাড়ে যাতায়াত করত। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাগণ মেহের রেলস্টেশন, দোয়াভাঙ্গা, শাহরাস্তি গেইট হয়ে ঠাকুর বাজার, কালিবাড়ি হয়ে গুদারাঘাটের মাধ্যমে যাতায়াত করতেন। ২০শে জুলাই পানিয়ালা বাজারের উত্তর দিকে ঠাকুর বাড়িতে অস্থায়ী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প স্থাপিত হয়। পানিয়ালা পাটওয়ারী বাড়ির নুরুল ইসলাম এবং হাইস্কুলের শিক্ষক মো. শাহজাহান এ ক্যাম্প স্থাপনের ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছিলেন। শোরশাক, ধামরা প্রাথমিক বিদ্যালয়েও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ছিল। এ দুটি ক্যাম্প মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের জন্য আগরতলা পাঠানোর ক্ষেত্রে লিয়াজোঁ ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হতো। রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকসেনারা এ পথে ডাকাতিয়ার উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ে যাতায়াত করত। ডাকাতিয়ার তীরে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের বিষয়টি বুঝতে পেরে পাকিস্তানি হানাদাররা গুলিবর্ষণ শুরু করলে মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলিবর্ষণ করেন। এতে কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রের সাহায্যে বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে প্রায় অর্ধশত নরনারী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আরো প্রায় অর্ধশত লোক আহত হয়। এক পর্যায়ে হানাদাররা পশ্চিম দিকে পিছু হটে। এলাকাবাসী আহতদের সেবা-শুশ্রূষা করে। ১০ই ডিসেম্বর এ এলাকা হানাদারমুক্ত হয়। পাকবাহিনীর সদস্যরা পায়ে হেঁটে মেহের রেলস্টেশন হয়ে চাঁদপুর টেকনিক্যাল হাইস্কুলে তাদের ক্যাম্পে চলে যায়। মহান মুক্তিযুদ্ধে ডাকাতিয়ার উভয় পাড়ের গ্রামগুলোর জনগণের ভূমিকা ছিল খুবই সাহসী ও অবিস্মরণীয়। [মো. মিজানুর রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!