You dont have javascript enabled! Please enable it! সূর্যদিয়া-মুড়োতলা যুদ্ধ (মহেশপুর, ঝিনাইদহ) - সংগ্রামের নোটবুক

সূর্যদিয়া-মুড়োতলা যুদ্ধ (মহেশপুর, ঝিনাইদহ)

সূর্যদিয়া-মুড়োতলা যুদ্ধ (মহেশপুর, ঝিনাইদহ) সংঘটিত হয় নভেম্বর মাসের শেষদিকে। এতে একজন মুক্তিযোদ্ধা ও একজন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
মহেশপুর পৌরসভার মধ্যে জলিলপুর গ্রাম। এ গ্রামের দক্ষিণ পাশে সূর্যদিয়া গ্রাম। দুই গ্রামের মাঝখানে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। জলিলপুর গ্রামের মধ্যবর্তী পাকা রাস্তা দিয়ে সূর্যদিয়া গ্রামে যেতে হয়। এ রাস্তা ধরে রাজাকাররা নিয়মিত টহল দিত। তারা নিরীহ মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাত এবং তাদের অর্থ-সম্পদ লুট করে নিত। মহেশপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ছিল তাদের ক্যাম্প। এ ক্যাম্প আক্রমণ করার জন্য একদল মুক্তিযোদ্ধা ঘটনার দিন জলিলপুর ও সূর্যদিয়া গ্রামের মাঝের মাঠে ওঁৎ পেতে থাকেন। রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের আয়ত্তের মধ্যে এলে তাঁরা অতর্কিতে তাদের আক্রমণ করেন। রাজাকাররাও পাল্টা আক্রমণ করে। এ- যুদ্ধে প্রায় ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন। এক পর্যায়ে রাজাকাররা পালিয়ে যায়।
চড়কতলা মোড়ে পাকসেনাদের ডিফেন্স ছিল। বগা গ্রামের জনৈক স্বাধীনতাবিরোধী তিনকড়ি মণ্ডল তাদের খবর দেয় যে, মুড়োতলায় বেতনা নদীর পাড়ে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নিয়েছে। পাকসেনারা এ খবর পেয়ে ছুটে এলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাকসেনারা টিকতে না পেরে গুলি করতে-করতে পিছু হটতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধা রওশন (পিতা মোবারক বিশ্বাস, ভালাইপুর) একটি খেজুরগাছের আড়ালে থেকে থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল দিয়ে শত্রুদের মোকাবেলা করছিলেন। হঠাৎ শত্রুপক্ষের একটি গুলি এসে তাঁর বুকের বাম পাশে লেগে পিঠ ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং ‘পানি পানি’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এ-সময় ভালাইপুর গ্রামের অধিবাসী আবদুল আজিজ পুটে তাঁকে পানি খাওয়াতে ছুটে আসে। কিন্তু সেও গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এখানে যুদ্ধ হয় মাত্র ১৫-২০ মিনিট এরপর পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটে চড়কতলায় ফিরে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা আবদুল আজিজকে তাদের বাড়িতে এবং রওশনকে মুড়োতলায় দাফন করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা রওশনের কবরস্থান অরক্ষিত অবস্থায় প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। [অশোক বিশ্বাস]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড