মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য ‘সূর্যসৈনিক’ (দিনাজপুর সদর)
সূর্যসৈনিক (দিনাজপুর সদর) দিনাজপুর পৌরসভার অভ্যন্তরে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য। ত্রিশ লক্ষ শহীদ এবং কয়েক লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বাঙালির এ অর্জন, বিজয়ের এ গৌরবগাথাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যই মূলত এ স্মারক ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে ১৯৯৩ সালের ২০শে নভেম্বর দিনাজপুর প্রেসক্লাব ভবনে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মুজিবনগর সরকার-এর সনদ পাঠকারী সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলী। ভাস্কর্য স্থাপনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন নাট্যব্যক্তিত্ব কাজী বোরহান, অধ্যাপক মইনউদ্দিন আহমদ, সাংবাদিক আব্দুল বারী, ইতিহাসবিদ মেহরাব আলী, প্রাক্তন পৌর চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা সফিকুল হক ছুটু, মুক্তিযোদ্ধা জর্জ দাস, সাংবাদিক কামরুল হুদা হেলাল, রাজনীতিক আমিনুল হক ভাসানি, ব্যাংকার জিয়াউল বারী, তৎকালীন পৌর কমিশনার হারুনুর রশিদ রাজা প্রমুখ। বিস্তারিত আলোচনা শেষে ভাস্কর্য স্থাপনের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক গজনবী, সদস্য-সচিব মুক্তিযোদ্ধা সফিকুল হক ছুটু এবং সদস্য ছিলেন এডভোকেট রিয়াজুল হক চৌধুরী, সাংবাদিক কামাল হুদা হেলাল, মুক্তিযোদ্ধা মোকসেদ আলী মঙ্গোলিয়া, হারুনুর রশিদ রাজা, জাহাঙ্গীর আহমদ, তৎকালীন শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম।
ভাস্কর্য স্থাপন কমিটি দিনাজপুরের ভাস্কর্য শিল্পী ও কলেজ ছাত্র মো. খুররম জামান বিন্দুকে ভাস্কর্য নির্মাণের দায়িত্ব প্রদান করে। মো. খুররম মাত্র দেড় মাসের প্রচেষ্টায় ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন। এতে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাম হাত মুষ্টিবদ্ধ রেখে ডান হাতে স্টেনগান উঁচিয়ে তীক্ষ্ম দৃষ্টি মেলে স্বদেশ রক্ষার দৃপ্ত শপথ নিচ্ছেন। এর দ্বারা মূলত বীর মুক্তিযোদ্ধারা যে স্বদেশ রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এটাই ব্যক্ত করা হয়েছে। ৬ ফুট লম্বা এ ভাস্কর্য নির্মাণে শিল্পীকে সাহায্য করেন রাজমিস্ত্রি মকবুল, নাইমুল, মইনুলসহ তিন জন শ্রমিক যথা রোকেয়া, রাবেয়া ও জালাল।
ভাস্কর্য নির্মাণের পর এর নামকরণ করেন অধ্যাপক মইনউদ্দিন আহমদ। ১৯৯৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর হাজার- হাজার মানুষের উৎসবমুখর উপস্থিতিতে দিনাজপুর পৌরসভার অভ্যন্তরে ফুলবাগানে ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়। ভাস্কর্যের মুখোন্মোচন করেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার আলীর পিতা ক্বারী মহির উদ্দিন আহমেদ। ভাস্কর্য স্থাপন অনুষ্ঠানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ভাস্কর্য স্থাপন কমিটির সভাপতি সিদ্দিক গজনবী। বক্তব্য রাখেন সফিকুল হক ছুটু ও ভাস্কর্যের নির্মাতা মো. খুররম জামান। ভাস্কর্যটি উন্মোচনের আগে জাতীয় পতাকা উত্তলোন করেন একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মাতা আনোয়ারা বেগম। [মাসুদুল হক]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড