You dont have javascript enabled! Please enable it!

সেওতা-মানরা যুদ্ধ (মানিকগঞ্জ সদর)

সেওতা-মানরা যুদ্ধ (মানিকগঞ্জ সদর) সংঘটিত হয় ১৫ই ডিসেম্বর। সেওতা-মানরা গ্রাম মানিকগঞ্জ জেলার ঢাকা-আরিচা সড়কের পাশে অবস্থিত। দক্ষিণে সেওতা আর উত্তরে ছিল মানরার অবস্থান। মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে ১৫০ গজ দূরে সেওতা-মানরা গ্রামে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে পাকবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেনসহ কয়েকজন নিহত ও ১৫ জন গুরুতর আহত হয়। অপরদিকে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
মানিকগঞ্জ শত্রুমুক্ত হবে, বাংলাদেশ স্বাধীন হবে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকায় পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করবে – এরকম অবস্থায় ১৫ই ডিসেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধারা যখন মানিকগঞ্জ শহরে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন তখন তাঁরা খবর পান যে, এক দল পাকসেনা তরা ঘাট পাড় হয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছে। এ খবর পাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে কয়েকশত মুক্তিযোদ্ধা বিভিন্ন দিক থেকে এসে পাকবাহিনীকে আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। এক পর্যায়ে ইকবাল হোসেন খানের তত্ত্বাবধানে একটি গ্রুপ দেবেন্দ্র কলেজের ছাদে অবস্থান নেয়, যাতে পাকবাহিনী শহরে ঢুকতে না পারে। মানরার উত্তর দিক থেকে আমিন খান ও আফতাব খানের তত্ত্বাবধানে ইয়াকুব গ্রুপ, দক্ষিণ দিক থেকে শহরে থাকা মুক্তিযোদ্ধা ও সিংগাইর থেকে আসা তোবারক হোসেন লুডুর গ্রুপ অবস্থান নেয়। এ-সময় ধামরাই থানার মুক্তিযোদ্ধাদেরও খবর দেয়া হয়। পাকসেনা দলটি পায়ে হেঁটে আসছিল। সংখ্যায় তারা ৪০-৫০ জন ছিল।
পাকসেনারা সেওতা-মানরায় আসামাত্র তাদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করা হয়। দুদিক থেকে গুলি হওয়ায় প্রাথমিকভাবে পাকবাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে। বেশ কয়েকজন পাকসেনা আহত হয়। সেওতার দিক থেকে গোলাগুলি বেশি হওয়ায় তারা মানরার দিকে সরে যায় এবং পাল্টা গুলি চালায়। আহতদের নিয়ে ক্রলিং করে সামনের দিকে এগুতে থাকে। প্রায় ৩০ মিনিট গোলাগুলির পর পাকসেনারা বাসস্ট্যান্ড অতিক্রম করে ঢাকার দিকে পালিয়ে যায়। তবে সারা রাস্তায় তাদের ক্রমাগত বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। পাকসেনারা নবীনগর যাবার পর ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
সেওতা-মানরা যুদ্ধে আব্দুস সালাম বুলু, মোজাম্মেল হক পাখী, পিয়ারা, শাহাগীর, সহিদুল ইসলাম তারা, এস এ হালিম, শহীদুল ইসলাম ফারুক, গোলাপ, কাজী কামরুল হুদা সেলিম, রুমান, সামীম, আঙ্গুর, পান্নু এবং আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন। এ-যুদ্ধে ক্যাপ্টেন আমিন নামে এক অফিসারসহ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয় এবং ১৫ জন গুরুতর আহত হয়। এ-যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা চাঁন মিয়া শহীদ হন। [মো. শহীদুল ইসলাম ফারুক]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!