You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.26 | সুবিল ব্রিজ প্রতিরোধযুদ্ধ (বগুড়া সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

সুবিল ব্রিজ প্রতিরোধযুদ্ধ (বগুড়া সদর)

সুবিল ব্রিজ প্রতিরোধযুদ্ধ (বগুড়া সদর) সংঘটিত হয় ২৬শে মার্চ থেকে ১লা এপ্রিল পর্যন্ত। এতে ২৩ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং বাকিরা পরাজিত হয়ে পিছু হটে। অপরদিকে দশম শ্রেণির এক ছাত্র প্রতিরোধযোদ্ধা শহীদ হন।
পাকিস্তানি বাহিনীর রংপুর থেকে বগুড়ার দিকে এগিয়ে আসার খবর ২৫শে মার্চ রাতে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্র-জনতা প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য একতাবদ্ধ হয়। রাত ১২টার পর শহরে মানুষের ঢল নামে। ২৬শে মার্চ সকালে রংপুর থেকে পাকিস্তানি সৈন্যরা বগুড়া শহর অভিমুখে যাত্রা করে।
তারা মাটিডালি থেকে শহরের ভেতরে প্রবেশকালে জনতার ওপর গুলি চালায়। শহরের ফুলবাড়ি সুবিল ব্রিজের কাছে পৌঁছলে তারা ছাত্র- জনতার প্রতিরোধের মুখে পড়ে। কিছুটা বিভ্রান্ত ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও কিছুক্ষণের মধ্যে তারা জনতার ওপর গুলি ছুড়তে থাকে। সশস্ত্র জনতার তোপের মুখে হানাদার বাহিনী পিছু হটে সুবিলের উত্তর পারে ডাকবাংলো এবং মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজে আশ্রয় নেয়। তারা রাতভর সেখানে অবস্থান করে গুলিবর্ষণ অব্যাহত রাখে। এ-সময় জনতার সঙ্গে পুলিশ লাইন্সের পুলিশ বাহিনী যোগ দেয়। ২৭শে মার্চ বগুড়া শহরসহ চারপাশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। বিকেলে হানাদার বাহিনী সুবিল ব্রিজের ওপার থেকে রকেট লাঞ্চার ও মর্টার শেল নিক্ষেপ করে। সারারাত উভয় পক্ষের গোলাগুলি চলতে থাকে। ২৮শে মার্চ পাকবাহিনী সুবিল ব্রিজের কাছে কটন মিলসের গেস্ট হাউজের ছাদে মেশিনগান বসায়। মুক্তিযোদ্ধা তপনের গুলিতে একজন পাকসেনা গুলিবিদ্ধ হলে দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। এ-যুদ্ধে নওগাঁ থেকে আসা ৩৯ জন ইপিআর সদস্য জনতার সঙ্গে যোগ দেন। যুদ্ধে মোট ২৩ জন পাকসেনা নিহত হয়। রাতের অন্ধকারে হানাদার বাহিনী পালিয়ে গেলে ২৯শে মার্চ সকালে কটন মিলসের গেস্ট হাউজ ফাঁকা অবস্থায় দেখা যায়। তারা আরো উত্তরে মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজে অবস্থান নেয়। ২৭শে মার্চ বিকেলে পাকবাহিনীর মর্টারের গোলার আঘাতে দশম শ্রৌণর ছাত্র তারেক শহীদ হন। মৃত্যুর সময়ও তাঁর হাতে একটি একনলা বন্দুক ধরা ছিল।
এদিকে পাকসেনারা পিছু হটার সময় কালিতলা এলাকায় মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল বারীর বাড়িতে প্রবেশ করে তার রাজনৈতিক পরিচয় না জানা থাকায় ভুলবশত তাকে হত্যা করে। ১লা এপ্রিল পর্যন্ত পাকবাহিনীর সঙ্গে বগুড়ার ছাত্র-জনতার যুদ্ধ চলার পর হানাদাররা রংপুরের দিকে পালিয়ে যায়। বগুড়ায় ছাত্র-জনতার এই বিজয়ের ওপর ভাষা সৈনিক গাজীউল হকের সম্পাদনায় যুদ্ধের খবর নিয়ে প্রকাশিত এক পাতার একটি বুলেটিন প্রকাশিত হয়েছিল, যার শিরোনাম ছিল: ‘প্রথম দিনের যুদ্ধে বগুড়াবাসীর জয়লাভ। পাঁচ পাকসেনা নিহত।’ [মিলন রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড