বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের কবি, সাংস্কৃতিক কর্মী ও রাজনীতিবিদ সুভাষ মুখোপাধ্যায়
সুভাষ মুখোপাধ্যায়, পদ্মভূষণ (১৯১৯-২০০৩) ভারতের কবি, সাংস্কৃতিক কর্মী ও রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯১৯ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার জন্মগ্রহণ কৃষ্ণনগরে করেন। তিনি ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউট থেকে ম্যাট্রিক ও কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে দর্শনে অনার্স ডিগ্রি লাভ করেন (১৯৪১)। ১৯৪২ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন এবং ১৯৮২ সাল পর্যন্ত পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টির জনযুদ্ধ পত্রিকায় (১৯৪৩) ও দৈনিক স্বাধীনতা পত্রিকায় (১৯৪৬) লেখার মাধ্যমে সাংবাদিক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ পদাতিক (১৯৪০)। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ হলো- চিরকুট, যত দূরেই যাই, অগ্নিকোণ, ধর্মের কল প্রভৃতি। কবিতা ছাড়াও তিনি ছড়া, ভ্রমণ সাহিত্য, উপন্যাস, জীবনী ইত্যাদি রচনা করেছেন এবং একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা ও দেশী-বিদেশী বহু কবিতা বাংলায় অনুবাদ করেছেন। সাহিত্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মভূষণ’ (২০০৩) খেতাবে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার (১৯৬৪), জ্ঞানপীঠ পুরস্কার (১৯৯১), আনন্দ পুরস্কার (১৯৯১), সাহিত্য আকাদেমি ফেলোশিপ (১৯৯৬) ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশিকোত্তম খেতাবসহ অনেক পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর স্মৃতিরক্ষার জন্য কলকাতায় একটি মেট্রো স্টেশনের নামকরণ করা হয়েছে কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশন (২০১০)। ২০০৩ সালের ৮ই জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে আফ্রো-এশিয়ান রাইটার্স এসোসিয়েশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে তিনি ভিয়েতনাম সফর করেন। তখন তিনি সেখানে বাংলাদেশের গণহত্যার তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন আদায় করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। বাংলাদেশ সহায়ক শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী সমিতির সহ-সভাপতি হিসেবে সমিতির সার্বিক কার্যক্রমে তাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। তিনি ভারতের কবি ও সাহিত্যিকদের সংগঠিত করে সভা-সমাবেশের আয়োজন করতেন এবং তাঁর রচিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কবিতা পাঠ করে বাংলাদেশের পক্ষে জনসমর্থন সৃষ্টিতে সচেষ্ট ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১লা অক্টোবর ২০১৩ সালের তাঁকে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড