You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.07 | সুরমা পুকুরপাড় গণহত্যা (আনোয়ারা, চট্টগ্রাম) - সংগ্রামের নোটবুক

সুরমা পুকুরপাড় গণহত্যা (আনোয়ারা, চট্টগ্রাম)

সুরমা পুকুরপাড় গণহত্যা (আনোয়ারা, চট্টগ্রাম) সংঘটিত হয় ৭ই জুলাই। এতে ২৫ জন নিরীহ গ্রামবাসী নিহত হয়।
ঘটনার দিন আনোয়ারা উপজেলার বারশত গ্রামের সুরমা পুকুরপাড়ে চার শতাধিক পাকিস্তানি সৈন্য এবং আনোয়ারা থানা রাজাকার-কমান্ডার জালাল চৌধুরী জৌল্যা ও বারশত ইউনিয়ন শান্তি কমিটির নেতা গনি চৌধুরীর নেতৃত্বে রাজাকারআলবদর ও আলশামস বাহিনীর ৬ শতাধিক সদস্য পশ্চিম আনোয়ারার বিভিন্ন হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে আক্রমণ চালায়। তারা একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে বারশত, তুলাতলী এবং বটতলী গ্রামের পশ্চিমাংশের হিন্দু এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালায়। এ অবস্থায় এলাকার লোকজন প্রাণভয়ে খালে-বিলে ও ঝোপঝাড়ে আশ্রয় নেয়। হিন্দু অধ্যুষিত এসব গ্রামের প্রতিটি বাড়ি তল্লাশি করে তারা মূল্যবান জিনিসপত্র ও গরু-ছাগল লুটে নেয়। এ আক্রমণে অনেক যুবতি নারী ধর্ষণের শিকার হয়। লুটপাট শেষে গ্রামগুলোর প্রতিটি বাড়িতে হানাদাররা অগ্নিসংযোগ করে। পাকহানাদার ও তাদের দোসররা বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিপুল সংখ্যক গ্রামবাসীকে টেনে-হিঁচড়ে সুরমা পুকুর পাড়ে নিয়ে আসে। এরপর তাদের কয়েকটি দলে বিভক্ত করে রশি দিয়ে বেঁধে পুকুরের পূর্বপাড়ে লাইন করে দাঁড় করায়। নিকটেই কয়েকজন পাকসেনা মেশিনগান হাতে তাক করে থাকে। কমান্ডারের নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে তারা ব্রাশ ফায়ার করে ২৫ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে। আটককৃত গ্রামবাসীর সংখ্যা ছিল ১৫০ জনের মতো। তাদের অনেকের ভাগ্যে কী ঘটেছে আজো তা জানা যায়নি। হত্যার পর রাজাকাররা মৃতদেহগুলো সুরমা পুকুরে ফেলে দেয়। সেদিন সুরমা পুকুরপাড় গণহত্যায় নিহত ২৪ জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- খগেন্দ্র দে, সুবল চৌধুরী, বিনোদ চৌধুরী, ধীরেন্দ্র চৌধুরী, নগেন্দ্র চৌধুরী, চিত্ত দত্ত, বিশ্ব দত্ত, বৈদ্য দত্ত, অশ্বিনী দত্ত, কুমুদ দত্ত, সুদর্শন দত্ত, মনো দত্ত, অপর্ণা চরণ নাথ, অজিত কুমার নাথ, অনাদি মোহন নাথ, নগেন্দ্র লাল নাথ, লালমোহন নাথ, ডা. দেবেন্দ্রলাল নাথ, শরৎচন্দ্র নাথ, মণীন্দ্রলাল নাথ, নিকুঞ্জবিহারী নাথ, মণীন্দ্র লাল ও কৃষ্ণ মোহন নাথ। নিহতরা বারশত ও তুলাতলী গ্রামের বাসিন্দা। [জামাল উদ্দিন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড