You dont have javascript enabled! Please enable it!

স্থানীয় বাহিনী ‘সুলতান উল কবির চৌধুরী বাহিনী’ (বাঁশখালী, চট্টগ্রাম)

সুলতান উল কবির চৌধুরী বাহিনী (বাঁশখালী, চট্টগ্রাম) মুক্তিযুদ্ধকালে চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলায় গঠিত একটি স্থানীয় বাহিনী। কমান্ডার সুলতান উল কবির চৌধুরী এ বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা। এ কারণে এ বাহিনী সুলতান উল কবির চৌধুরী বাহিনী নামে পরিচিতি লাভ করে। বাহিনী বাঁশখালী ও চকরিয়ায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অনেকগুলো সফল অভিযান পরিচালনা করে।
সুলতান উল কবির চৌধুরী ১৯৪৮ সালের ১লা জানুয়ারি বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আলহাজ্ব ফৌজুল কবির চৌধুরী, মাতার নাম মাকছুদা খাতুন। তিনি এসএসসি পাস করে ১৯৬৫ সালে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজে ভর্তি হন। ১৯৬৭ সালে তিনি চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস এবং ১৯৬৯ সালে ভিপি নির্বাচিত হন। তিনি ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে চট্টগ্রামের ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করেন, ৭০- এর নির্বাচন এবং মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই অত্যন্ত সাহসী ও দেশপ্রেমিক ছিলেন। ১৯৭১-এর ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
৭০-এর নির্বাচনে বাঁশখালী, আনোয়ারা ও কুতুবদিয়া থেকে নির্বাচিত আতাউর রহমান খান কায়সার এমএনএ সংগঠক হিসেবে ছাত্র-যুবক ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ঐক্যবদ্ধ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। তাঁর নেতৃত্বে বাঁশখালী-চকরিয়া সীমান্তবর্তী খামারবাড়িতে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। এ ক্যাম্পে সুলতান উল কবির চৌধুরী, মোস্তাক আহমেদ, জহিরুল ইসলাম ও তাঁদের বাহিনী অবস্থান করত। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ অধ্যাপক আসহাব উদ্দিন আহমদ ধর্ম-বর্ণ- নির্বিশেষে ছাত্র-যুবক ও সংগ্রামী জনতা নিয়ে বাঁশখালীর প্রধান সড়কে পাকিস্তানি বাহিনীর কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ ও তা প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে বিশাল মিছিল-সমাবেশ করেন।
১৩ই এপ্রিল রাউজানের পাহাড়তলীর নোয়াপাড়া ইমাম গাজ্জালী কলেজ সংলগ্ন স্থানে প্রতিরোধযুদ্ধে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথমে কিছুক্ষণ গুলি বিনিময় ও পরে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে পাকসেনাদের গুলিতে ঘটনাস্থলে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ২ জন ছাত্রনেতা সুলতান উল কবির চৌধুরী ও মো. ইদ্রিস গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় তাঁরা পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে প্রাণে রক্ষা পান। এ প্রতিরোধযুদ্ধের পর রাউজান এলাকা পাকসেনাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। পাকসেনাদের ব্রাশ ফায়ারে শহীদ হন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র ছাত্রনেতা সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ-এর সাধারণ সম্পাদক আবদুর রব, ছাত্রলীগকর্মী গোলাম নবী, কানুনগোপাড়া স্যার আশুতোষ কলেজের অধ্যাপক দিলীপ কান্তি চৌধুরী, বোয়ালখালী থানার আওয়ামী লীগ কর্মী শেখ মোজাফ্ফর আহমদ, বোয়ালখালীর মোহাম্মদ ইউনুসসহ আরো ২ জন। এ সম্মুখ যুদ্ধে শহীদদের পাহাড়তলী এলাকায় গণকবর দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ১৪ই এপ্রিল এঁদের মধ্য থেকে ছাত্রনেতা শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদের দেহাবশেষ পাহাড়তলী কবরস্থান থেকে তুলে পুনরায় জানাজাসহ পূর্ণ শহীদি মর্যাদায় তাঁর পিতা জহুর আহমদ চৌধুরীর কবরের পাশে চট্টগ্রামের দামপাড়ায় সমাহিত করা হয়। এ প্রতিরোধযুদ্ধের পর সুলতান উল কবির চৌধুরী চকরিয়ার ডা. শামসুল হক, উখিয়ার শমসের আলম চৌধুরী, আবদুস ছোবহানসহ আরো কয়েজনকে নিয়ে মায়ানমার চলে যান। সেখানে অবস্থানরত সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শেষে তিনি পুনরায় বাংলাদেশে এসে বাঁশখালী ও চকরিয়ার অনেককে নিয়ে গঠন করেন মুক্তিযোদ্ধা দল।
২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দেশজুড়ে নির্বিচারে গণহত্যার প্রতিবাদে প্রতিরোধযুদ্ধ করার জন্য “বাঁশখালীর অনেক ছাত্র, যুবক ও সংগঠক প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে গমন করেন। যাঁরা আত্মগোপন করে এলাকায় অবস্থান করেন, তাঁদের সংগঠিত করে মুক্তিযোদ্ধা দল গঠনের চেষ্টা চলে। এর মধ্যে সংগ্রাম কমিটির নির্দেশ অনুসারে মোখতার আহমদ (এফএফ জোনাল কমান্ডার), সুলতান উল কবির চৌধুরী (এফএফ থানা কমান্ডার), ডা. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ চৌধুরী (বিএলএফ কমান্ডার), নুরুল কবির চৌধুরী, ওয়াজেদ আলী খান, সিরাজুদৌল্লাহ (গ্রুপ কমান্ডার), শফিকুল ইসলাম (গ্রুপ কমান্ডার), খোন্দকার মোহাম্মদ ছমিউদ্দীন, মোহাম্মদ হাশেম (গ্রুপ কমান্ডার) প্রমুখের নেতৃত্বে বাঁশখালী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে মুক্তিবাহিনী ও মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়। প্রত্যেক বাহিনীর কমান্ডারের নেতৃত্বে বিভিন্ন অপারেশন পরিচালিত হয়। পরবর্তীতে নভেম্বর মাসের দিকে কেন্দ্রীয় হাইকামান্ডের নির্দেশে বাঁশখালী উপজেলার সকল মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ একত্রিত হয়ে একটি শক্তিশালী দল গঠন করে। এ সময় বাঁশখালী থানা এফএফ কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন সুলতান উল কবির চৌধুরী। তখন থেকে মুক্তিযোদ্ধারা সুলতান উল কবির চৌধুরীর পুঁইছড়ি পাহাড়ে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে অবস্থান নিয়ে যৌথভাবে বিভিন্ন অপারেশন পরিচালনা করেন। বাঁশখালীতে পুঁইছড়ি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পটি ছিল সবচেয়ে বড় ক্যাম্প। এছাড়া পুকুরিয়া, বানীগ্রাম, সাধনপুর, জলদী, বৈলছড়ি ও চাম্বল পাহাড়ে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প ছিল। সুলতান উল কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত আঞ্চলিক মুক্তিযোদ্ধা দলের জন্য অস্ত্র সংগ্রহ ও ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করা হয়।
ইতোমধ্যে বাঁশখালীতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আনাগোনা শুরু হয়। ৯ই মে স্থানীয় এমপিএ সাহজাদা আহমেদ সগির (নেজামে ইসলাম)-এর নেতৃত্বে হানাদার বাহিনী তাদের স্থানীয় দোসর বিহারি ও রাজাকারদের নিয়ে বাঁশখালীতে প্রথমবার আক্রমণ চালিয়ে রাস্তার দুপাশের বহু বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়, বহু নারীকে নির্যান করে এবং নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। সুলতান উল কবির চৌধুরী বাহিনী পাকিস্তানি হানাদার ও রাজাকাদের প্রতিরোধে সফলতার সঙ্গে বাঁশখালী, চকরিয়া, আনোয়ারা, সাতকানিয়া, রাঙ্গুনিয়া প্রভৃতি এলাকায় বহু অপারেশন পরিচালনা করে। বাঁশখালীর নাপোড়া থেকে পুঁইছড়ি, চাম্বল ও চকরিয়ার গভীর অরণ্যাঞ্চল এবং আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাঁর বাহিনীর কার্যক্রম বিস্তৃত ছিল।
সুলতান উল কবির চৌধুরী বাহিনীতে শুরুতে ৪৭ জন সদস্য ছিলেন। তাঁদের মধ্যে সুভাষ আচার্য, জাহিদ হোসাইন, অধ্যাপক আবুল হাশেম, বিভূতি ভূষণ, জাফর উল্লাহ, শশাঙ্ক ধর, সুশীল চন্দ্র রায়, সেকান্দার আলী, বাদল চন্দ্ৰ দে, বিজয় কুমার দে, পরিমল আচার্য, মনোরঞ্জন দাশ, অধ্যাপক আরঙ্গজেব, ফজল করিম, আবদুল মাজেদ, ডা. আশরাফ আলী, সরোয়ার, রিদোয়ান, নুরু আহম্মদ, বাদল কান্তি সিকদার, সুভাষ বসু দেব, হরিপদ দেব, মনোরঞ্জন দে, দীপক কান্তি দে, নলিনী রঞ্জন গুহ, জগদীশ চন্দ্ৰ দে, রুগো দয়াল দে, অরুণ চন্দ্র দে, ধীরেন্দ্র দে প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। পরবর্তীতে সুলতান উল কবির চৌধুরীর নেতৃতে বাঁশখালীর সকল গ্রুপ একীভূত হলে এ সংখ্যা ১৭০ জনে দাঁড়ায়। বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তাঁরা বিভিন্ন অপারেশন চালান।
সুলতান উল কবির চৌধুরী বাহিনী বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অপারেশন করে। সুলতান উল কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ২০ নভেম্বর চাঁনপুর খাদ্যগুদাম অপারেশন পরিচালিত করেন। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা খাদ্যগুদাম পাহারাদারদের অস্ত্র কেড়ে নেন এবং খাদ্য ও সার দরিদ্র কৃষক ও জনসাধারণের মধ্যে বিতরণ করেন। কিছু বিক্রি করে প্রায় ৬০ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে সুলতান উল কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা চাম্বল তহসিল অফিস আক্রমণ করে তা আগুনে জ্বালিয়ে দেন।
পুঁইছড়ি ও চাম্বলে রাজাকারদের বড় ক্যাম্প ছিল। সেখান থেকে সকল খবরাখবর পাকবাহিনীর কাছে পৌঁছাত। কমান্ডার সুলতান উল কবির চৌধুরী ও মীর ওয়াজেদ আলী খানের গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারা যৌথভাবে নভেম্বর মাসের দিকে পুঁইছড়ি ও চাম্বল রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে রাজাকাররা আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। পুঁইছড়ি রাজাকার ক্যাম্পের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বিজয় কুমার দেব শহীদ হন। সাতকানিয়া-বাঁশখালী ঢালা পথে পাকিস্তানি সেনাদের যাবতীয় অস্ত্র, খাদ্য ও মালামাল আনা-নেওয়া করা হতো। গুনাগরী ওয়াপদা বিল্ডিং-এ অপারেশন করার পর মুক্তিযোদ্ধারা দু-তিন দলে বিভক্ত হয়ে সাতকানিয়া-বাঁশখালী পাহাড়ি ঢালা পথে বেশ কয়েকবার এম্বুশ করেন এবং পাকিস্তানি সেনাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা দান ও রাজাকারদের প্রতিহত করেন। সুলতান উল কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে এ এম্বুশ সফলভাবে পরিচালিত হয়।
চকরিয়া ও লামার মাঝামাঝি আজিজনগর জামিল-সাত্তার ম্যাচ ফ্যাক্টরি এলাকায় পাকহানাদার বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। এখান থেকে তারা রাজাকারদের সহযোগিতায় মুক্তিসেনাদের খবরাখবর, বিভিন্ন আক্রমণ, নির্যাতন, বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করত। এ সংবাদ পেয়ে সুলতান উল কবির চৌধুরী বাহিনী চকরিয়ার কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে আজিজনগর অপারেশন পরিচালনা করে। এ সময় তাঁরা কয়েকজন বিহারি ও রাজাকারকে ধরে শায়েস্তা করেন।
৭ই ডিসেম্বর সুশীল চন্দ্র রায় গ্রুপ, শফিকুল ইসলাম গ্রুপ, ডা. আবু ইউসুফ চৌধুরী গ্রুপ, মোহাম্মদ হাসেম ও খোন্দকার ছমিউদ্দীন গ্রুপ, নুরুল কবির চৌধুরী গ্রুপ, মোখতার আহমদ গ্রুপ, মীর ওয়াজেদ আলী খান ও সিরাজুদৌল্লাহ গ্রুপ থেকে বাছাই করা ২০-২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা সুলতান উল কবির চৌধুরীর দিকনির্দেশনায় ৭ই ডিসেম্বর বাঁশখালী থানা আক্রমণ করেন। তাঁদের আক্রমণে থানার দারোগাসহ সকল সিপাহি পালিয়ে যায় এবং মুক্তিযোদ্ধারা থানা দখল করেন। থানা থেকা বেশকিছু অস্ত্র-শস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
বাঁশখালীর মুক্তিযোদ্ধাদের সবচেয়ে বড় অপারেশন ছিল গুনাগরী হানাদার ক্যাম্প আক্রমণ। গুনাগরীতে পাকহানাদার ও রাজাকাররা ওয়াপদা অফিসে বিরাট ক্যাম্প স্থাপন করে। সেপ্টেম্বর মাসের দিকে গুনাগরী থেকে নাপোড়া পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আক্রমণ চালায়। এ সময় নাপোড়ায় একই দিনে ৩৫ জন সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা এবং অসংখ্য বাড়ি-ঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে। পাকসেনা ও রাজাকাররা বহু হিন্দু নারীর ওপর নির্যাতন চালায়। ২৭শে নভেম্বর ডা. আবু ইউসুফ চৌধুরী ৮ জন বিএলএফ মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বাঁশখালী আসেন। ২রা ডিসেম্বর সুলতান উল কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে বাঁশখালীর সকল মুক্তিযোদ্ধা গুনাগরী হানাদার ক্যাম্প আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। ১১ ও ১২ই ডিসেম্বর আক্রমণ চালানো হয়। এতে ৬০-৬৫ জন মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন। এ ক্যাম্প থেকে ৬৫ জন রাজাকারকে আটক করা হয়। এ সময় ক্যাম্প থেকে তাঁরা চারশতাধিক বন্দুক, ১টি ২২ বোরের পিস্তল, ২টি ১২ বোরের বন্দুক, ৩টি রাইফেল, কিছু দা ও ছুরি উদ্ধার করেন। ১২ই ডিসেম্বর বাঁশখালী হানাদারমুক্ত হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নেতৃত্বে সুলতান উল কবির চৌধুরী দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট একদল ঘাতক জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করলে তিনি প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। ফলে ১৯৭৬ সালে তিনি গ্রেফতার হয়ে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর তিনি মুক্তি লাভ করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৭-এর ১১ই আগস্ট বাঁশখালীর কৃতী সন্তান, চট্টগ্রাম যুবলীগের প্রতিষ্ঠা সভাপতি, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মৌলভী সৈয়দ আহমদকে হত্যা করার পর বাঁশখালীসহ সমগ্র দক্ষিণ চট্টগ্রামে ছাত্রসমাজ ও যুবসমাজ নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে। ঠিক সে-সময়ে সুলতান উল কবির চৌধুরী সংগঠনকে শক্তিশালী করতে অনন্য অবদান রাখেন। দীর্ঘ নয় বছর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাঁশখালী থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভ করেন। কিন্তু সেবার সফলকাম হতে পারেননি। তিনি ১৯৯১ সালে পুনরায় আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন লাভ করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন। তিনি ২০১৪ সালের ৩০শে জুন মৃত্যুবরণ করেন। [জগন্নাথ বড়ুয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!