সুজানগর গণহত্যা (সুজানগর, পাবনা)
সুজানগর গণহত্যা (সুজানগর, পাবনা) সংঘটিত হয় ১২ই মে। এতে প্রায় ৪ শত সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়। ঘটনার দিন পাবনা শহর থেকে সড়কপথে ৬টি আর্মি ভ্যান ও ২টি পিকাপ ভ্যানে করে প্রায় ২০০ পকেসেনা, রাজাকার- ও মিলিশিয়া – সুজানগরে আসে। নদীপথে গানবোটে আসে আরো প্রায় একশ পাকসেনা ও রাজাকার। তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে সাতবাড়িয়ার জামায়াতে ইসলামী- ও থানা শান্তি কমিটির নেতা আমিন উদ্দিন খান ওরফে টিক্কা খান, সুজানগর থানার রাজাকার প্রধান জামায়াতে ইসলামীর মো. গোলাম মোস্তফা ওরফে মোস্তফা রাজাকার, মধু মৌলবী প্রমুখ। সুজানগরের মানুষ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভোররাত থেকে শুরু হয় ব্যাপক আক্রমণ। সাতবাড়িয়া, মোমরাজপুর, শ্যামনগর, তারাবাড়িয়া, কুড়িপাড়া, সিন্দুরপুর, কন্দর্পপুর, নারুহাটি, সিংহনগর, হরিরামপুর, ভাটপাড়া, গুপিনপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে আক্রমণ করে হানাদার বাহিনী। পাবনা শহর থেকে এসে বহু মানুষ এ এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিল। তারাসহ প্রায় ৪ শত মানুষ সেদিন নিহত হয়। রাত পর্যন্ত চলে হানাদার বাহিনীর এ ধ্বংসযজ্ঞ। তারা বহু ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। অনেক লাশ পদ্মা নদীতে ফেলে দেয়। বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকা আগুনে পোড়া লাশ শেয়াল-কুকুরে খায়। সাতবাড়িয়া স্কুলের সামনে কয়েকটি এবং বিভিন্ন স্থানে আরো কিছু লাশ গণকবর দেয়া হয়।
সুজানগর গণহত্যায় শহীদদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে, তারা হলেন- মহিউদ্দিন প্রামাণিক (পিতা কফিল উদ্দিন প্রামাণিক, গুপিনপুর; থানা আওয়ামী লীগএর সহ-সভাপতি), গোলাম রসুল (পিতা সিরজান শেখ, গুপিনপুর), মজিবর রহমান (পিতা লজির শেখ, গুপিনপুর), ঝানু মণ্ডল (পিতা মাবু মণ্ডল, গুপিনপুর), বদিউজ্জামান বিশ্বাস (পিতা আকমত বিশ্বাস, গুপিনপুর), বয়েজউদ্দিন প্রামাণিক (পিতা অনু প্রামাণিক, গুপিনপুর), রজব আলী প্রামাণিক (পিতা ফয়েজ উদ্দিন প্রামাণিক, গুপিনপুর), কিবরিয়া বিশ্বাস (পিতা হারেজ বিশ্বাস, গুপিনপুর), আকিরন খাতুন (স্বামী বাবর আলী বিশ্বাস, গুপিনপুর), ময়েন উদ্দিন শেখ (পিতা ফেলু শেখ, ভাটপাড়া), ময়েজ উদ্দিন শেখ (পিতা ফেলু শেখ), আফের আলী শেখ (পিতা আকবর শেখ, ভাটপাড়া), সদর আলী শেখ (পিতা ফকীর শেখ, ভাটপাড়া), গেদন আলী শেখ (পিতা আকবর শেখ, ভাটপাড়া), আফসার আলী শেখ (পিতা ইয়াজ উদ্দিন শেখ, ভাটপাড়া), হবিবর সরদার (পিতা মোসলেম সরদার, ভাটপাড়া), আয়েন উদ্দিন শেখ (পিতা মিন্টু শেখ, ভাটপাড়া), কাদের আলী সরদার (পিতা মিন্টু শেখ, ভাটপাড়া), কালিপদ বিশ্বাস (পিতা নিত্যলাল বিশ্বাস, ভাটপাড়া), বাদল বিশ্বাস (পিতা কুটিশ্বর বিশ্বাস, ভাটপাড়া), সুরজিদ বিশ্বাস (পিতা শম্ভুনাথ বিশ্বাস, ভাটপাড়), বৈদ্যনাথ বিশ্বাস (পিতা কাণ্ডনাথ বিশ্বাস, ভাটপাড়া), পবন ঠাকুর (পিতা অনুকূল ঠাকুর, ভাটপাড়া), সুরিন বিশ্বাস (পিতা প্রসন্ন বিশ্বাস, ভাটপাড়া), পচা সরদার (পিতা মিঠু সরদার, ভাটপাড়া), সূর্যকান্ত রায় (পিতা শুধি কান্ত রায়, ভাটপাড়া), ফকর উদ্দিন শেখ (পিতা রমজান শেখ, শ্যামনগর), ওয়াজেদ আলী শেখ (পিতা ফকর উদ্দিন শেখ, শ্যামনগর), সোনাই প্রামাণিক (পিতা নছির প্রামাণিক, শ্যামনগর), ওমেদ আলী বিশ্বাস (পিতা জমারত আলী বিশ্বাস, শ্যামনগর), ফটিক খান (পিতা মনি খান, শ্যামনগর), মন্তাজ আলী মোল্লা (পিতা মেঠন মোল্লা, শ্যামনগর), জসিম উদ্দিন মোল্লা (পিতা মেঠন মোল্লা, শ্যামনগর), মাজেদ আলী মোল্লা (পিতা জহির মোল্লা, শ্যামনগর), মহির উদ্দিন মোল্লা (পিতা জিতু মোল্লা, শ্যামনগর), রোস্তম আলী মোল্লা (পিতা শওকত মোল্লা, শ্যামনগর), লবু মোল্লা (পিতা শওকত মোল্লা, শ্যামনগর), হাফিজুর রহমান খান (পিতা সিরাজ খান, শ্যামনগর), জালাল উদ্দিন খান (পিতা এন্তাজ খান, শ্যামনগর), মনছের আলী প্রামাণিক (পিতা মিয়াজান আলী প্রামাণিক, শ্যামনগর), সাহেব আলী শেখ (পিতা মেছের আলী শেখ, শ্যামনগর), নায়েব আলী শেখ (পিতা মেছের আলী শেখ, শ্যামনগর), ছাদেক আলী শেখ (পিতা অহেদ আলী শেখ), তোজাম্মেল হোসেন (পিতা গহের মল্লিক), আবুল হোসেন (পিতা বাবর আলী, হরিরামপুর), শুকান্ত হালদার (পিতা নারন হালদার, হরিরামপুর), উপেন্দ্র হালদার (পিতা মুকান্ত হালদার, হরিরামপুর), মকছেদ আলী খাঁ (পিতা ওয়াদত খাঁ, হরিরামপুর), ওয়াজেদ আলী বিশ্বাস (পিতা জসিম বিশ্বাস, হরিরামপুর), মোক্তার হোসেন খাঁ (পিতা পিঞ্জির খাঁ, হরিরামপুর), আহাম্মদ আলী খাঁ (পিতা পিঞ্জির খাঁ, হরিরামপুর), রিয়াজ উদ্দিন প্রামাণিক (পিতা জনু প্রামাণিক, হরিরামপুর), জলিল উদ্দিন প্রামাণিক (পিতা জনু প্রামাণিক, হরিরামপুর), জালাল উদ্দিন প্রামাণিক (পিতা জনু প্রামানিক, হরিরামপুর), আকবর আলী শেখ (পিতা আব্দুল শেখ, হরিরামপুর), শাহজাহান আলী শেখ (পিতা আকবর আলী শেখ, হরিরামপুর), সোনই মণ্ডল (পিতা আজগর মণ্ডল, হরিরামপুর), মজিবর রহমান খান (পিতা ফইমুদ্দিন খান, সিংহনগর), মহিত লাল নাথ (পিতা মাখন নাথ, সিংহনগর), রামপ্রদ মালী (পিতা কেষ্ট মালী, সিংহনগর), রণজিৎ ধর (পিতা হৃদয় ধর, সিংহনগর), গোপাল ধর (পিতা হৃদয় ধর, সিংহনগর), শ্রীকান্ত ধর (পিতা দেবনাথ ধর, সিংহনগর), ধীরেন্দ্র নাথ (পিতা মনমোহন লাল, সিংহনগর), নারায়ণ চন্দ্র নাথ (পিতা নিত্য নাথ, সিংহনগর), মনমোহন কর্মকার (পিতা ভাদু কর্মকার, সিংহনগর), কানাই লাল কুণ্ডু (পিতা ক্ষিতীশ কুণ্ডু, সিংহনগর), মেঘ লাল সাহা (পিতা কানাই লাল সাহা, সিংহনগর), কেষ্টা হালদার (পিতা পাথারী হালদার, সিংহনগর), কালীপদ হালদার (পিতা কালীবাবু হালদার, নারুহাটি), রস্তম আলী সরদার (পিতা জয়েন সরদার, নারুহাটি), ময়েন উদ্দিন সরদার (পিতা জয়েন উদ্দিন সরদার, নারুহাটি), ননী গোপাল (পিতা নন্দ গোপাল, নারুহাটি), কেষ্ট লাল হালদার (পিতা কেদার লাল হালদার, নারুহাটি), হেমন্ত হালদার (পিতা শুম্ভ হালদার, নারুহাটি), সুফিয়া খাতুন (স্বামী আলা শেখ, নারুহাটি), মরিয়ম খাতুন (স্বামী পলান শেখ, নারুহাটি), গোসাই সাহা (পিতা গৌতম সাহা, কন্দর্পপুর), অশোক সাহা (পিতা ক্ষিতীশ সাহা, কন্দর্পপুর), মেহের শেখ (পিতা জহির শেখ, কন্দর্পপুর), আলাউদ্দিন খাঁ (পিতা মোন্তাজ খাঁ, কন্দর্পপুর), অজিব শেখ (পিতা সমর শেখ, কন্দর্পপুর), বিরাজ মহনী (পিতা উমা চরণ মহনী, কন্দর্পপুর), সাধু চরণ হালদার (পিতা মান চরণ হালদার, কন্দর্পপুর), শমী বালা (স্বামী সাধু চরণ, কন্দর্পপুর), অমূল্য হালদার (পিতা কেষ্টনাথ হালদার, কন্দর্পপুর), হরিপদ হালদার (পিতা কেষ্টনাথ হালদার, কন্দর্পপুর), প্রিয় লাল হালদার (পিতা কেষ্টনাথ হালদার, কন্দর্পপুর), চৈতন্য হালদার (পিতা কেষ্টনাথ হালদার, কন্দর্পপুর), রেন্টু বালা (স্বামী জগদীশ হালদার, কন্দর্পপুর), কান্টু সাহা (পিতা কাঞ্চন সাহা, কন্দর্পপুর), রণজিৎ সাহা (পিতা মতি লাল সাহা, কন্দর্পপুর), অজিত হালদার (পিতা অসিত হালদার, কন্দর্পপুর), মহর আলী শেখ (পিতা খোয়াজ আলী শেখ, কন্দর্পপুর), জবেদা খাতুন (স্বামী জলিল প্রামাণিক, কন্দর্পপুর), পানু সাহা (পিতা প্রিয়নাথ সাহা, কন্দর্পপুর), রবীন্দ্র নাথ সাহা (পিতা ঠাকুর গোপাল সাহা, কন্দর্পপুর), শম্ভু নাথ সাহা (পিতা মণীন্দ্র নাথ সাহা, কন্দর্পপুর), বিমান সাহা (পিতা অমূল্য সাহা, কন্দর্পপুর), খোকন হালদার (পিতা বুদ্ধিশ্বর হালদার, কন্দর্পপুর), জগদীশ্বর হালদার (পিতা বেগু হালদার, সিন্দুরপু), অনন্ত সেন সাহা (পিতা অখিল সাহা, সিন্দুরপুর), ইয়াদ আলী শেখ (পিতা জনু শেখ, সিন্দুরপুর), ক্ষিতীশ হালদার (পিতা সতীশ হালদার, সিন্দুরপুর), ধনী হালদার (পিতা চৈতন্য হালদার, সিন্দুরপুর), নির্মলা বালা সাহা (স্বামী বিমল সাহা, সিন্দুরপুর), মাখন করাতি (পিতা মদন করাতি, সিন্দুরপুর), অসিত সাহা (পিতা অজিত সাহা, সিন্দুরপুর), অজিত সাহা (পিতা অশোক সাহা, সিন্দুরপুর), সমীর চৌধুরী (পিতা সুবোধ চৌধুরী, মোমরাজপুর), হরেন্দ্র সাহা (পিতা হেরম্ব সাহা, মোমরাজপুর), শ্রীবাস চন্দ্র রায় (পিতা চৈতন্য রায়, মোমরাজপুর), ভোলা নাথ (পিতা সুশান্ত নাথ, মোমরাজপুর), হাজু সরদার (পিতা ফৈজ উদ্দিন সরদার, মোমরাজপুর), আকালী ফকীর (স্বামী ইমান ফকীর, মোমরাজপুর), শাহজ উদ্দিন শেখ (পিতা লবিন উদ্দিন শেখ, মোমরাজপুর), তফিজ উদ্দিন (পিতা শাহাজ উদ্দিন, মোমরাজপুর), বারেক প্রামাণিক (পিতা বিলাত প্রামাণিক, মোমরাজপুর), মন্তাজ আলী শেখ (পিতা বছির শেখ, মোমরাজপুর), রওশন আলী মোল্লা (পিতা আব্দুল লতিফ মোল্লা, কুড়িপাড়া), আলম হোসেন (পিতা নূরুল মোল্লা, কুড়িপাড়া), আব্দুল কুদ্দুস মোল্লা (পিতা গফুর মোল্লা, কুড়িপাড়া), ইন্তাজ আলী (পিতা মনসের আলী, কুড়িপাড়া), সেকেন শেখ (পিতা ভাদু শেখ, কুড়িপাড়া), মনি খন্দকার (পিতা নওশের খন্দকার, কুড়িপাড়া), জহির শেখ (পিতা বিশু শেখ, কাঁচুরী), লোকামন খাঁ (পিতা দবির খাঁ, কাঁচুরী), মোক্তার আলী শেখ (পিতা মহির উদ্দিন শেখ, কাঁচুরী), আবুল হোসেন শুটকা (পিতা মহির উদ্দিন শেখ, কাঁচুরী), গোপাল শেখ (পিতা বছির শেখ, তারাবাড়িয়া), সাধু শেখ (পিতা ভাদু শেখ, তারাবাড়িয়া), আয়েজ উদ্দিন মণ্ডল, তারাবাড়িয়া), বিশে সরকার (পিতা আবুল সরকার, ফকিৎপুর), সুগের সরকার (পিতা সুভাস সরকার, ফকিৎপুর), চেতনা সরকার (পিতা ঘোগড়ে সরকার, ফকিৎপুর), রতন সাহা (পিতা বিমল সাহা, ফকিৎপুর), নারু সাহা (পিতা বিমল সাহা, ফকিৎপুর), মদন সরকার (পিতা রমেন্দ্র নাথ সরকার, ফকিৎপুর), সতীশ পাল (পিতা জগদীশ পাল, ফকিৎপুর), অশিন সরকার (পিতা কেশব সরকার, ফকিৎপুর), পুন সরকার (পিতা পরান সরকার, ফকিৎপুর), সতীশ মণ্ডল (পিতা যতীশ মণ্ডল, ফকিৎপুর), রতন সাহা (পিতা বিমল সাহা, সাতবাড়িয়া), বাসু সাহা (পিতা বাদল সাহা, সাতবাড়িয়া), সুরেন্দ্র (পিতা বিধুভূষণ সাহা, সাতবাড়িয়া), বিমলা (স্বামী সুরেন সাহা, সাতবাড়িয়া), অজিত সাহা (পিতা-অসিত সাহা, সাতবাড়িয়া), অশোক সাহা (পিতা অজিত সাহা, সাতবাড়িয়া) এবং সুবিন্দি সাহা (পিতা কেদার নাথ সাহা)।
শান্তি কমিটির সভাপতি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা টিক্কা খান মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকদের বলেছিল, পাকিস্তান আর্মি আসবে কিন্তু তোমাদের কিছু বলবে না। আর্মিরা এলেই তোমরা পাকিস্তানের পতাকা উড়িয়ে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে থাকবে। তার কথামতো তাদের কেউ আর এলাকা ছেড়ে পালায়নি। কিন্তু আর্মিরা এসে টিক্কা খানের সামনেই তাদের ওপর গুলি চালায়। ফলে বহু জামায়াত ও মুসলীম লীগের সমর্থকও সাধারণ গ্রামবাসীর সঙ্গে সেদিন নিহত হয়। [মো. জহুরুল ইসলাম বিশু]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড