You dont have javascript enabled! Please enable it!

সুতারকান্দি-নীলগঞ্জঘাট গণহত্যা (ফুলপুর, ময়মনসিংহ)

সুতারকান্দি-নীলগঞ্জঘাট গণহত্যা (ফুলপুর, ময়মনসিংহ) সংঘটিত হয় ২রা ডিসেম্বর। এদিন পাকসেনা ও রাজাকার-রা ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানার সুতারকান্দী, চকগদাধর, বড়চিলাগাইসহ ৪-৫টি গ্রামে হানা দিয়ে অনেক মানুষকে আটক, নির্যাতন ও হত্যা করে। তারা এসব গ্রাম থেকে ধরে নিয়ে অনেককে নীলগঞ্জঘাটে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
ঘটনার দিন প্রায় ২শ হানাদার পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার ও স্থানীয় দালালদের একটি বাহিনী সুতারকান্দি, চকগদাধর ও বড়চিলাগাই গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রাম ঘেরাও করে। মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সমর্থকদের তারা খুঁজতে থাকে। দালাল জিয়াউল হক বদরু (ভাইটকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক) ও হাফিজ উদ্দিন আহাম্মেদ (বিএসসি)-সহ স্থানীয় রাজাকাররা পাকিস্তানিদের পথ দেখিয়ে সুতারকান্দি ও চকগদাধর গ্রামে নিয়ে যায়। জিয়াউল হক বদরু সেখানে উপস্থিত থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের চিনিয়ে দেয়। এরপর আটক, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড শুরু হয়। তারা প্রথমে ১৫ জন নিরীহ মানুষকে আটক করে। এদিন পাকিস্তানিদের হাতে আটক হন- ফুরকান আলী (পিতা মফিজ উদ্দিন, চকগদাধর), রমজান আলী (পিতা শাহাব উদ্দিন, চকগদাধর), আব্দুল লতিফ (পিতা আব্দুল গফুর, সুতারকান্দি), হাবিবুর রহমান (পিতা আদম আলী সরকার, চকগদাধর), আবেদ আলী (পিতা জহুর উদ্দিন সরকার, চকগদাধর), জবেদ আলী (পিতা জহুর উদ্দিন সরকার, চকগদাধর), আলী হোসেন (পিতা তালে হোসেন, চকগদাধর), সাহাব উদ্দিন (পিতা জমির উদ্দিন, চকগদাধর), সাদেক আলী সাদক (পিতা আজম ফকির, সুতারকান্দি), রাহে আলী (পিতা উমেদ আলী, চররাঘবপুর, কোতোয়ালী থানা), সরফত আলী (পিতা আজম উদ্দিন সরকার, বড়চিলাগাই), হোসেন আলী (পিতা গোলাপ আলী, চকগদাধর), আব্দুস সোবহান (পিতা নবা আলী, চকগদাধর), জমসেদ আলী মুন্সি (চকগদাধর) ও ময়ছর আলী (বড়চিলাগাই)।
হানাদার পাকসেনারা সুতারকান্দি গ্রামের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আব্দুল লতিফ (পিতা আব্দুল গফুর)-কে আটক অবস্থা থেকে পালানোর সময় গুলি করে হত্যা করে। অন্যদের ওপর তারা প্রথমে শারীরিক নির্যাতন চালায়। তারপর তারা সমগ্র গ্রামে লুটপাট, নারীনির্যাতন ও আগ্নিসংযোগ করে। সেদিন চকগদাধর গ্রামের কবুলী খাতুনসহ বেশ কয়েকজন নারী ধর্ষণের শিকার হন। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পুরো গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার ও রাজাকারদের তাণ্ডব চলে। বিকেল ৪টার দিকে আটককৃতদের খড়িয়া নদীর পারে নীলগঞ্জঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ১১ জনকে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করা হয়। গুলিতে চকগদাধর গ্রামের রমজান আলী, হাবিবুর রহমান, ফুরকান আলী, আলী হোসেন, আব্দুস সোবহান, আবেদ আলী; সুতারকান্দি গ্রামের সাদেক আলী সাদেক ও রাহে আলী নিহত হন। হোসেন আলী, সরফত আলী ও শাহাব উদ্দিন পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হন। হোসেন আলী ও সরফত আলী আহত হওয়ার কিছুদিন পর মারা যান। গুলিতে আহত সাহাব উদ্দিন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে এখনো বেঁচে আছেন। চকগদাধর গ্রামের জমশেদ আলী মুন্সি ও জবেদ আলী আছরের নামাজ পড়ার কথা বলে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন। বড়চিলাগাই গ্রামের ময়ছর আলীকে রাস্তা থেকে আটক করে অমানবিক নির্যাতন শেষে হালুয়াঘাট পাকিস্তানি ক্যাম্পে বন্দি করে রাখা হয়। মুক্তিপণের বিনিময়ে পাকিস্তানিদের হাত থেকে তিনি মুক্তি পান। সেদিনের শহীদদের নিজ-নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়। [আলী আহাম্মদ খান আইয়োব]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!