বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সংগীত শিল্পী সুচিত্রা মিত্র
সুচিত্রা মিত্র, পদ্মশ্রী (১৯২৪-২০১১) ভারতের সংগীত শিল্পী। তিনি ১৯২৪ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর বিহারে জন্মগ্রহণ করেন। অল্প বয়সেই তিনি রবীন্দ্রসংগীত চর্চা শুরু করেন। তিনি বৃত্তি নিয়ে (১৯৪২) শান্তিনিকেতন থেকে ম্যাট্রিক (১৯৪৩), কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইন্টারমিডিয়েট (১৯৪৫) ও রবীন্দ্রসংগীতে ডিপ্লোমা (১৯৪৫) লাভ করেন। পরবর্তীকালে তিনি কোলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে অর্থনীতিতে সম্মানসহ স্নাতক ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক, রিডার, অধ্যাপক ও রবীন্দ্রসংগীত বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর অবসর গ্রহণ করেন (১৯৮৪)। গানের পাশাপাশি তিনি অভিনয় ও চিত্রাঙ্কনে পারদর্শী ছিলেন।
কলেজে অধ্যয়নকালে সুচিত্রা মিত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির জন্য পতাকা হাতে তিনি রাস্তায় মিছিল করায় পুলিশের হাতে নির্যাতিত হন। সংগীতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মশ্রী (১৯৭৪) ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক দেশিকোত্তম (১৯৯৭) খেতাবে ভূষিত হন। ২০১১ সালের ৩রা জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সুচিত্রা মিত্র বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টির জন্য নিরলস পরিশ্রম করেন। ১৯৭১ সালের ১৮ই এপ্রিল তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা বিশাল মিছিল সহকারে কোলকাতাস্থ বাংলাদেশ মিশনে উপস্থিত হন এবং তাঁদের গাওয়া দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে-সঙ্গে ডেপুটি হাইকমিশনার হোসেন আলী সেখানে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। সংগীতের মাধ্যমে তিনি মানুষের মনে মুক্তির চরম আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলেন। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে তিনি শরণার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে তা শরণার্থী শিবির-এ প্রেরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১লা অক্টোবর ২০১৩ সুচিত্রা মিত্র- কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড