মুক্তিযুদ্ধে সুজানগর উপজেলা (পাবনা)
সুজানগর উপজেলা (পাবনা) পাবনা জেলার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে মুক্তিযুদ্ধে সুজানগর উপজেলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ১৯৭১ সালে শুধু পাবনা জেলায় নয়, সমগ্র উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল যমুনা নদীর আরিচা ও নগড়বাড়ি ফেরিঘাট। সুজানগর উপজেলার এক পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা নদী, আর অপর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা। উপজেলার মাঝখানে রয়েছে বিশাল গাজনার বিল। বিলের চারপাশ ঘিরে রয়েছে এ উপজেলার দশটি ইউনিয়ন। নগড়বাড়ি থেকে পাবনা শহর পর্যন্ত পাকা সড়কের অধিকাংশ স্থান সুজানগর এলাকার সীমানাঘেঁষা। ১৯৬৯ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির মিছিলে পুলিশের গুলিতে সুজানগর স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ও -ছাত্রলীগ কর্মী আবদুস সাত্তার শহীদ হয়। পাবনা জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বকুল থানা থেকে লাশ উদ্ধার করে বিশাল মিছিল সহকারে তার আত্মীয়- স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেন। ছাত্রলীগের ডাকে শুরু হয় হরতাল। কলেজের এক জনসভায় বকুলের প্রস্তাবে এডওয়ার্ড কলেজের অডিটোরিয়ামের নাম শহীদ আব্দুস সাত্তার মিলনায়তন ঘোষণা করা হয়। পাবনা শহরসহ সমগ্র জেলায় পাকিস্তান সরকারবিরোধী আন্দলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে মুসলিম লীগ প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিন মিয়াকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে – আওয়ামী লীগ-এর আমেদ তফিজ উদ্দিন এমপিএ নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ঐতিহাসিক ভাষণের পর সমগ্র দেশের মতো সুজানগরেও সাধীনতা সংগ্রামের আগুন জ্বলে ওঠে। গঠণ করা হয় সংগ্রাম পরিষদ। ২৫শে মার্চ রাতে রাজশাহী থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের এক কোম্পানি পদাতিক সৈন্য পাবনায় পৌঁছে নিরস্ত্র মানুষের ওপর আক্রমণ শুরু করে। সুজানগরের ছাত্র যুবকরা সাধ্যমতো ট্রেনিং দিয়ে অস্ত্রশস্ত্র আনার জন্য ভারতে চলে যেতে থাকে। অনেকে স্থানীয়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করে সঙ্গবদ্ধ হতে থাকে।
আগস্ট মাসে পাবনা জেলার মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক ও মুজিব বাহিনী-র প্রধান রফিকুল ইসলাম বকুল ভারত থেকে ট্রেনিং প্রাপ্ত মুজিব বাহিনীর ৯ জনের একটি সশস্ত্র গ্রুপ সুজানগরে প্রেরণ করেন। এ গ্রুপে ছিলেন- লিডার মো. ইকবাল হোসেন, ডেপুটি লিডার মো. জহুরুল ইসলাম বিশু, মো. ইসমত হোসেন, মো. আবদুল হান্নান, শাহনেয়াজ খান হুমায়ুন, মো. শাহআলম খান হেলাল, মো. হাবিবুর রহমান হাবিব, আহমেদ করিম ও মো. আবদুল হাই মঞ্জু। এরপর মুজিব বাহিনীর ট্রেনিং নিয়ে আরো তিনটি গ্রুপে প্রায় ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা সুজানগরে এসে ডেপুটি লিডার মো. জহুরুল ইসলাম বিশুর সঙ্গে যোগ দেন। এই তিন গ্রুপের লিডাররা হলেন- এস এম সামছুল আলম (সাতবাড়িয়া), এ এস এম আবদুর রাজ্জাক (দুলাই) ও নুরুল ইসলাম নুর। অন্য কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা হলেন- অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, ইব্রাহিম মোস্তফা কামাল দুলাল, আব্দুল হাই, তোফজ্জল হোসেন তোফা, আব্দুল কাদের, আব্দুস সামাদ এবং আহাম্মদপুর ইউনিয়নের আব্দুস সামাদ।
সুজানগর থানার ১০টি ইউনিয়নের প্রত্যেকটিতে ২৫ সদস্যবিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে একজন প্রধান, একজন উপ-প্রধান এবং ২৩ জন সদস্য ছিল। প্রতিটি গ্রাম থেকে প্রতিনিধি নেয়া হয়। সুজানগর ইউনিয়ন কমিটির প্রধান ছিলেন ইব্রাহিম মোস্তফা কামাল দুলাল, সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন কমিটির প্রধান ছিলেন প্রিন্সিপাল মো. ফজলুল হক, নাজিরগঞ্জ ইউনিয়ন কমিটির প্রধান ছিলেন মো. সাহাদৎ হোসেন, হাটখালী ইউনিয়ন কমিটির প্রধান ছিলেন মো. আতাউর রহমান, সাগরকান্দি ইউনিয়ন কমিটির প্রধান ছিলেন মো. খোরশেদ খাঁ, মানিকহাট ইউনিয়ন কমিটির প্রধান ছিলেন আবদুল জব্বার মাস্টার, দুলাই ইউনিয়ন কমিটির প্রধান ছিলেন মো আবদুর রহিম মোল্লা, আহাম্মদপুর ইউনিয়ন কমিটির প্রধান ছিলেন মো. আবদুস সামাদ, রানীনগর ইউনিয়ন কমিটির প্রধান ছিলেন মো. রিয়াজ উদ্দিন এবং তাঁতিবন্দ ইউনিয়ন কমিটির প্রধান ছিলেন মো. হাসান আলী মুজিব বাহিনীর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ শুরু করা হয়। এলাকায় স্থানীয়ভাবে ট্রেনিং দিয়ে এবং অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে একটি সশস্ত্র বাহিনী গঠন করা হয়। এ বাহিনীতে ৯টি এলএমজি, একটি আরসিএল গান, ওয়ারলেস সেট, এক্সপ্লোসিভ, এসএলআর, প্রায় ২৫০টি ৩০৩ রাইফেল, প্রচুর বুলেট, বড়বড় চারটি নৌকা ছিল। এ বাহিনীতে প্রায় ৩০০ সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধের জন্য সদা প্রস্তুত থাকেন।
সুজানগর থানার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয় মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) নেতৃত্বে। মুজিব বাহিনীর পাবনা জেলার প্রধান ছিলেন রফিকুল ইসলাম বকুল। সুজানগর থানার দায়িত্বে ছিলেন- লিডার মো. ইকবাল হোসেন (পিতা ডা. ইসাহাক, গোপালপুর, পাবনা), ডেপুটি লিডার মো. জহুরুল ইসলাম বিশু (পিতা মমতাজ উদ্দিন, দিলালপুর, পাবনা), গ্রুপ লিডার এস এম শামসুল আলম, এ এস এম আবদুর রাজ্জাক ও নুরুল ইসলাম নূর।
সুজানগর থানায় উল্লেখযোগ্য কোনো স্থানীয় বাহিনী ছিল না। রফিকুল ইসলাম বকুলের নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী এবং এফএফ বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা ‘বকুল বাহিনী’ নামে এলাকায় পরিচিত ছিলেন।
সুজানগরে পাকহানাদার বাহিনী সর্বপ্রথম ৩রা মে অনুপ্রবেশ করে। এর পূর্বে ২৮শে মার্চ প্রতিরোধযোদ্ধারা এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে হানাদার বাহিনীকে সম্পূর্ণ পরাস্ত ও বিতাড়িত করে পাবনা শহর মুক্ত করতে সক্ষম হন। একই সময় তাঁরা নগরবাড়ি ঘাটেও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১০ই এপ্রিল পর্যন্ত পাবনা ও নগরবাড়ি ঘাট শত্রুমুক্ত থাকে। এ উভয় স্থানে পাকহানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধে সুজানগরের মুক্তিযোদ্ধারা রফিকুল ইসলাম বকুলের নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করেন। পাবনার লস্করপুরের যুদ্ধে সুজানগরের শামসুল আলম বুলবুল শহীদ হন।
নগরবাড়ি খেয়াঘাট থেকে পাকসেনারা যাতে সহজে পাবনায় না আসতে পারে সেজন্য ১০ই এপ্রিল রাত্রে নগরবাড়ি-পাবনা সড়কে সুজানগরের দুলাই ব্রিজ ভাঙ্গার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা প্রস্তুতি নেন। মুক্তিযোদ্ধাদের দলে ছিলেন মো. জহুরুল ইসলাম বিশু, সিদ্দিক, মুকুল, মাহমুদ ও সেলিমসহ ১২-১৩ জন। তাঁরা একটি জিপে করে পুলিশ লাইনে আর আই মো. আবুল খায়েরে নিকট যান। তিনি অবাঙালি হলেও মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি সব ঘটনা শুনে পুলিশ লাইনের মালখানা থেকে তাঁদের এক্সপ্লোসিভভরা ৩০-৪০টি কৌটা দেন। আগুন ধরিয়ে দিলেই এগুলো বিস্ফোরিত হবে। মুক্তিযোদ্ধারা এক্সপ্লোসিভগুলো নিয়ে একটি পেট্রোল পাম্পে যান। সেখান থেকে এক ড্রাম পেট্রোল ও ড্রামের মুখ খোলার চাবি নিয়ে চলে যান দুলাই ব্রিজে। রাত তখন ২টা হবে। দুলাই ব্রিজে পৌছে তাঁরা কৌটাগুলো ব্রিজের একটি পিলারের ওপর সাজিয়ে মাটিচাপা দিয়ে রাখেন এবং ড্রামের মুখ খুলে সেগুলোর ওপর পেট্রোল ঢেলে দেন। এরপর ড্রামগুলো গড়িয়ে যথাস্থানে নিয়ে ম্যাচ দিয়ে আগুন ধরিয়ে সবাই দৌড়ে একটু দূরে গিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়েন। দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে বটে, তবে ব্রিজটি ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি। ফলে তাঁদের অভিযান ব্যর্থ হয়। ব্রিজ ভাঙতে না পেরে তাঁরা ফিরে আসেন। এরপর তাঁরা চলে যান ভারতে। সেখান থেকে ট্রেনিং নিয়ে অস্ত্রশস্ত্রসহ আগস্ট মাসে সুজানগরে ফিরে আসেন।
পাকবাহিনী সুজানগর উপজেলায় প্রথম অনুপ্রবেশ করে ৩রা মে। প্রবেশ করেই তারা বাজারের দোকান-পাট ও আশপাশের এলাকার বাড়িঘরে লুটতরাজ করে এবং আগুন দেয়। এদিন তারা ১০-১২ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। তারপর তারা পাবনা শহরে ফিরে যায়। এভাবে পাকবাহিনী অনেকবার সুজানগর থানার বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।
সুজানগর থানায় হানাদার বাহিনীর কোনো স্থায়ী ক্যাম্প ছিল না। মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন অপারেশনের প্রয়োজনে তারা পাবনা শহরের প্রধান সামরিক ঘাঁটি থেকে অথবা নগরবাড়ি ঘাটে অবস্থিত ক্যাম্প থেকে এসে সুজানগর থানায় অবস্থান করত। তারা সড়ক পথ, পদ্মা ও যমুনা নদী পথে এবং গাজনার বিল দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করে আক্রমণ করত। অস্থায়ী ক্যাম্প হিসেবে তারা সুজানগর থানাকে ব্যবহার করত। সেখানে সব সময় পুলিশ, রাজাকার-আলশামস, আলবদরসহ স্বাধীনতাবিরোধীরা অবস্থান করত। সাগরকান্দির রিয়াজউদ্দিন হাইস্কুলে তাদের একটি ক্যাম্প ছিল। সেখানে ২০-৩০ জন মিলিশিয়া ও রাজাকার অবস্থান করত। তারা প্রায়শই আশপাশের বাড়িঘরে লুটপাট করত। দুলাই ব্রিজের পাশে রাজাকারদের একটি ক্যাম্প ছিল। ১৫-২০ জন রাজাকার এখান থেকে ব্রিজ পাহারা দিত এবং ব্রিজের নিচ দিয়ে কোনো নৌকা গেলে চেক করত। মাঝে- মধ্যে তারা আশপাশের বাড়িঘরে লুটপাট করত।
উপজেলায় পাকবাহিনীর সহযোগী ব্যক্তিবর্গ হলো- রিয়াজ উদ্দিন মিয়া (সাগরকান্দি ইউনিয়ন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ও সভাপতি মুসলিম লীগ, সুজানগর থানা), আমিন উদ্দিন খান ওরফে টিক্কা খান (পিতা আজিজ উদ্দিন খান, শান্তি কমিটির সভাপতি, জামায়াতে ইসলামী -নেতা, সাতবাড়িয়া), মো. জমির উদ্দিন মোল্লা (পিতা জুরান উদ্দিন মোল্লা, সাগরকান্দি ইউনিয়ন শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক), গোলাম মোস্তফা খান (পিতা মুছা খান, রাজাকার প্রধান, সুজানগর থানা ও সিংহনগর, সাতবাড়িয়া এবং জামায়াতে ইসলামী নেতা), মো. শহিদুল্লা খান (পিতা জিকির খান, সাগরকান্দি ইউনিয়ন শান্তি কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক), মহির উদ্দিন প্রামাণিক মেম্বর (পিতা জসিম উদ্দিন প্রামাণিক, শান্তি কমিটির প্রধান, চরগোবিন্দপুর, আহাম্মদপুর), ইয়াদ আলী শেখ (পিতা হাজী আয়েন উদ্দিন শেখ, চেয়ারম্যান, শান্তি কমিটি, দুলাই), খবির উদ্দিন খান খলিফা (পিতা আজাহার আলী খান, সাধারণ সম্পাদক, শান্তি কমিটি, সিংহনগড়, সাতবাড়িয়া), আবুল খায়ের রাজাকার (সাতবাড়িয়া), আব্দুল মজিদ (রাজাকার, শ্যামনগর, সাতবাড়িয়া), হাসান উদ্দিন মওলানা (শান্তি কমিটি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা, শ্যামনগর, সাতবাড়িয়া), আব্দুল হামিদ শেখ (রাজাকার, সিংহনগর, সাতবাড়িয়া), খোকা মৃধা (শান্তি কমিটির সদস্য, সিংহনগর, সাতবাড়িয়া), এছাক আলম মওলানা (রাজাকার, খয়রান, মানিকহাট), জাফর খান (সিংহনগর, সাতবাড়িয়া), আমজাদ খান (রাজাকার, খয়রান, মানিকহাট), বাবু মোল্লা (রাজাকার, মানিকহাট), আবদুল ওহাব বিশ্বাস (রাজাকার, খয়রান, মানিকহাট), কুটি গ্যাদা (রাজাকার, মানিকহাট), আবদুল মজিদ শেখ (সিংহনগর, সাতবাড়িয়া), আব্দুল গনি শেখ (রাজাকার, সাতবাড়িয়া), নূরু শেখ রাজাকার, শ্যামনগর, সাতবাড়িয়া), সাজাহান – উদ্দিন বিশ্বাস (গোবিন্দপুর, সাগরকান্দি), আব্দুর রহমান গ্যাদা (পিতা ফাগু শেখ, তালিমনগর, সাগরকান্দি), শুকুর মোল্লা (তালিমনগর, সাগরকান্দি), আয়েজ উদ্দিন খান (নিওগীবনগ্রাম, সুজানগর), শফিউল আলম খান (নিওগীবনগ্রাম, সুজানগর), মোকাই শেখ (রাজাকার, নিওগীবনগ্রাম, সুজানগর), বাচ্চু খান (রাজাকার, নিওগীবনগ্রাম, সুজানগর), ওসমান গনী (রাজাকার, নিওগীবনগ্রাম, সুজানগর), ইব্রাহিম উদ্দিন (রাজাকার, নিওগীবনগ্রাম, সুজানগর), রায়হান উদ্দিন মল্লিক (পিতা শিকদার মল্লিক, আলবদর বাহিনীর প্রধান, নিওগীবনগ্রাম, সুজানগর), বাবু (রাজাকার, খাঁরপাড়া, সুজানগর), আলিম উদ্দিন শেখ (ভবানীপুর, সুজানগর), কুদ্দুস মওলানা (রাজাকার প্রধান, মানিকদিয়ার, সুজানগর), আবদুস সোবাহান কারী (রাজাকার, তালিমনগর, সাগরকান্দি), জিলান শেখ (রাজাকার, তালিমনগর, সাগরকান্দি), কোরবান আলী খান (রাজাকার, তালিমনগর, সাগরকান্দি), হোসেন শেখ (রাজাকার, পুকুরনিয়া, সাগরকান্দি), হাকু মোল্লা (রাজাকার, গোবিন্দপুর, সাগরকান্দি), আলম মোল্লা (রাজাকার, গোবিন্দপুর, সাগরকান্দি), আমদ আলী মোল্লা (রাজাকার, সিন্দুরীবরুরিয়া, সাগরকান্দি), তোফাজ্জল হোসেন মল্লিক ওরফে তাজেক মল্লিক (শান্তি কমিটিরি নেতা, মানিকদিয়ার, সুজানগর), আব্দুর রশিদ মল্লিক (রাজাকার, মানিকদিয়ার, সুজানগর), আকমল হোসেন মল্লিক পল্টন (মানিকদিয়ার, সুজানগর), আব্দুল আলী খাঁ (শান্তি কমিটির সদস্য, ভবানীপুর, সুজানগর) প্ৰমুখ।
হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী সুজানগর উপজেলায় প্রথম আক্রমণ করে ৩রা মে। পাবনা শহর থেকে সড়কপথে একটি জিপ ও দুটি আর্মি ভ্যানে প্রায় ৫০-৬০ জন পাকসেনা সকাল ১১টার দিকে সুজানগর বাজারে আসে। গাড়ি থেকে নেমেই তারা নির্বিচারে গুলি চালায়। যাকে সামনে পায় তাকেই তারা হত্যা করে। এরপর দোকানপাট ও বাড়িঘরে লুটপাটের পর আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এদিন বসন্ত পাল, চেতনা কুণ্ডু, লক্ষ্মী কুণ্ডু ও খোকা বৈরাগীসহ ১০-১২ জন নিরীহ মানুষ হত্যার শিকার হয়। রাত্রে তাদের গণকবর দেয়া হয়।
১২ই মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সুজানগরে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। পাবনা শহর থেকে সড়কপথে ৬টি আর্মি ভ্যান এবং ২টি পিকআপ ভ্যানে প্রায় ২০০ জন পাকসেনা, বাজাকার ও মিলিশিয়া সুজানগরে আসে। নদীপথে গানবোট নিয়ে আরো প্রায় একশ পাকসেনা ও রাজাকার আসে। এদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে সাতবাড়িয়ার জামায়াতে ইসলামী ও থানা শান্তি কমিটির নেতা আমিন উদ্দিন খান ওরফে টিক্কা খান, সুজানগর থানার রাজাকার প্রধান ও জামায়াতে ইসলামী নেতা মো. গোলাম মোস্তফা ওরফে মোস্তফা রাজাকার, মধু মৌলবী প্রমুখ। সুজানগরের মানুষ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভোররাত থেকে শুরু হয় ব্যাপক আক্রমণ। হানাদার বাহিনী এদিন সাতবাড়িয়া, মোমরাজপুর, শ্যামনগর, তারাবাড়িয়া, কুড়িপাড়া, সিন্দুরপুর, কন্দর্পপুর, নারুহাটি, সিংহনগর, হরিরামপুর, ভাটপাড়া, গুপিনপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৪ শত মানুষকে হত্যা করে। এ ঘটনা সুজানগর গণহত্যা নামে পরিচিত।
২১শে মে সকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সাগরকান্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে আক্রমণ চালায়। তারা হত্যা, লুণ্ঠন, নারীধর্ষণ ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এদিন তাদের হাতে বহু মানুষ হত্যার শিকার হয়। এ ঘটনা সাগরকান্দি ইউনিয়ন গণহত্যা নামে পরিচিত।
২৭শে সেপ্টেম্বর হানাদার বাহিনী দ্বিতীয়বার সাতবাড়িয়া অঞ্চলে আক্রমণ করে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তারা গ্রামবাসীদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালায়। এবারের ২০৪
আক্রমণের পেছনে বিশেষ কারণ ছিল এই যে, এ অঞ্চলটি বিভিন্ন দিক থেকে নিরাপদ হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা বেশির ভাগ সময় এখানেই শেল্টার নিতেন। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে তারা এ আক্রমণ চালায়। কয়েকটি আর্মি ভ্যানে পাকসেনারা পাবনা থেকে এখানে আসে। এছাড়া নদীপথে কয়েকটি গানবোটেও আসে। সেনাবাহিনীর চতুর্মুখী আক্রমণের কারণে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতিরোধ করতে পারেননি। তবে তাঁরা পূর্বেই এ স্থান থেকে অন্যত্র সরে যেতে সক্ষম হন। হানাদাররা এলাকার বহু ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং অনেক মানুষকে হত্যা করে।
আগস্ট মাসের শেষদিকে ভারত থেকে মুজিব বাহিনীর ট্রেনিং নিয়ে মো. জহুরুল ইসলাম বিশুর গ্রুপ এবং সাঁথিয়া থানার লিডার মো. জাহাঙ্গীর হেসেন সেলিম, ডেপুটি লিডার গোলাম সরোয়ার খান সাধন, নজরুল ইসলাম সাচ্চু, মো. শওকত বাবলু, আহমদ শফিক, আলমগীর কবির স্বপন, আলমগীর খান বেলাল, মো. শরিফুল ইসলাম ইঞ্জিনিয়ার, সাইদুল ইসলাম মুন্নু ও গোলাম রাজ্জাক চৌধুরী সাফী এক সঙ্গে সুজানগর আসেন। এরপর সেলিম তাঁর গ্রুপ নিয়ে সাঁথিয়ার উদ্দেশে চলে যান। চারদিকে তখন অথই পানি। নৌকা নিয়ে সাঁথিয়ায় যাওয়ার পথে তাঁরা সাগরকান্দি এলাকার নূরু চৌধুরীর বাড়িতে শেল্টার নেন। সেখানে থেকে ঐ এলাকায় বেশ কয়েকটি অপারেশন পরিচালনার ফলে চারদিকে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ১৩ই সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এদিন ভোররাতে অশোক চৌধুরীর বাড়ি থেকে একদল পাকিস্তানি সেনা, মিলিশিয়া ও রাজাকার এসে নদীর তীরে আক্রমণ করে সেলিম, সাধন, স্বপন, সাচ্চু, সাফি ও ফেরদৌস আলম খান ওরফে গেদামনি এ ৬ জনকে ধরে ফেলে। একই সময়ে নূরু চৌধুরীর বাড়ি থেকে ধরা পড়ে স্কুলের ছাত্র খন্দকার শাহজামান দুলু ও মশিউর রহমান মন্টু। হানাদাররা এলাকার বহু বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয় এবং অনেক নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে যায় সেলিমদের নিয়ে যায় নগরবাড়ি ঘাটের আর্মি ক্যাম্পে সেখানে নিয়ে সেনাবাহিনী ও রাজাকাররা মিলে তাঁদের ওপর নির্মম অত্যাচার চালায়। সন্ধ্যার দিকে সাধন, স্বপন, সাচ্চু ও শাফিসহ কয়েকজনকে আধমরা অবস্থায় হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে দেয়। এভাবে তাঁদের মৃত্যু ঘটে। সেদিন পাকিস্তানি সেনাদের পথ চিনিয়ে নিয়ে আসে সাগরকান্দির শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ও সুজানগর থানা মুসলিম লীগের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন মিয়া, জাতসাকিন ইউনিয়নের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ, জমির উদ্দিন মোল্লা এবং রাজাকার মধু মৌলবী। পাকিস্তান আর্মিতে চাকরি করত এ-কথা বলায় জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী বিচারের জন্য সেলিমকে এবং গেদামনি বয়সে খুবই ছোট হওয়ায় তাকে পাকসেনারা নগরবাড়ি থেকে পাবনা আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করে। পথে শহরের মধ্যে খ্রিস্টান মিশনারি পার হয়ে সেলিমের বাড়ির কাছে পৌঁছতেই তিনি হঠাৎ লাফ দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান। গেদামনিকে পাবনায় নেয়ার দুদিন পর ছেড়ে দেয়া হয়। সে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ফিরে এসে সব ঘটনা বর্ণনা করে। এর কিছুদিন পর মধু মৌলবীকে ধরে এনে মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করেন।
সুজানগরে পাকিস্তানি বাহিনীর কোনো স্থায়ী নির্যাতনকেন্দ্র বা বন্দিশিবির ছিল না। তাদের প্রধান নির্যাতনকেন্দ্র ও বন্দিশিবির ছিল পাবনা শহরস্থ ওয়াপদায় এবং নগরবাড়ি ঘাটে। সুজানগরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষদের ধরে হানাদার বাহিনী ঐসব কেন্দ্রে নিয়ে যেত এবং তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করত। তারপর অর্ধমৃত অবস্থায় তাদের বালিয়াহালট গোরস্থানে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে ফেলে রাখত। বেশির ভাগ লাশ শেয়াল-কুকুরে খেয়ে ফেলত। কোনো-কোনো সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এলাকার মানুষজন দু-একটি লাশ মাটিচাপা দিত।
নগরবাড়ি ঘাটে যাদের নিয়ে যেত, তাদের ওপর নির্মম অত্যাচার চালিয়ে হাত-পা বেঁধে যমুনা নদীতে ফেলে দিত। প্রতিরাতেই পাকসেনারা এখানে মানুষ হত্যা করত। যখন গুলি করে পানিতে ফেলে দিত তখন তাদের করুণ আর্তনাদ, কাকুতি-মিনতি আর চিৎকারে ঐ এলাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠত।
সুজানগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে অনেক গণকবর রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— সুজানগর উপজেলা অফিসের পূর্বপাশের গণকবর, সাতবাড়িয়া স্কুল মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের গণকবর ও শ্যামনগর গণকবর। নিজস্ব উদ্যোগে কিছু-কিছু কবর পাকা করা হলেও বেশির ভাগ কবরের কোনো চিহ্ন নেই। নদীতেও অনেক কবর ভেঙ্গে গেছে।
পাবনা জেলা ভারতের বর্ডার থেকে দূরে হওয়ায় একমাত্র গেরিলা যুদ্ধ ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা ছিল না। পাকিস্তান আর্মির বিমান, ট্যাঙ্ক, কামান ও মেশিনগানসহ ভারী অস্ত্রশস্ত্রের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ করতে হলে যে ধরনের যুদ্ধাস্ত্র প্রয়োজন, তা ভারত থেকে এখানে আনা সম্ভব ছিল না। ভারতের আর্টিলারি সাপোর্ট লাভেরও সুযোগ ছিল না। ফলে সুজানগরের মুক্তিযুদ্ধ সম্পূর্ণ গেরিলা যুদ্ধের ওপর নির্ভরশীল ছিল। পাবনা-নগরবাড়ি সড়কে পাকিস্তানি বাহিনীর গাড়ি বহরের ওপর আক্রমণ, নৌকায় পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ, ব্রিজে পাহারার দায়িত্বে থাকা রাজাকার ও মিলিশিয়া বাহিনীর ওপর আক্রমণ, হাটে-ঘাটে রাজাকার বাহিনীর ওপর আক্রমণ – পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে সুজানগরে এ ধরনের ছোট-বড় অনেক যুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে দুটি যুদ্ধ
নাজিরগঞ্জ যুদ্ধ ও সুজানগর থানা যুদ্ধ বিশেষভাবে উল্লেযোগ্য। “নাজিরগঞ্জ যুদ্ধ সংঘটিত হয় ২৪শে অক্টোবর। এতে বেশ কয়েকজন রাজাকার ও মিলিশিয়া নিহত হয় এবং প্রচুর প্ররিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও রসদ মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। সুজানগর থানা যুদ্ধ সংঘটিত হয় ১১-১৩ই ডিসেম্বর পর্যন্ত। এতে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। কিন্তু হানাদাররা ১৩ই ডিসেম্বর গভীর রাতে পালিয়ে গেলে ১৪ই ডিসেম্বর সুজানগর থানা হানাদারমুক্ত হয়।
সুজানগর উপজেলার যেসব শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম জানা গেছে, তাঁরা হলেন— ইব্রাহিম মোস্তফা কামাল দুলাল (পিতা ডা. এ এম সলিম উল্লাহ, ভবানীপুর), শামসুল আলম বুলবুল (পিতা আবদুস শুকুর মিয়া, ভাটিকয়া, রানীনগর), আবদুর রহমান (পিতা আহাম্মদ আলী শেখ, চরদুলাই), সর্দার আনছার উদ্দিন (পিতা সর্দার গহর উদ্দিন, কাদুয়া), মুসলিম উদ্দিন প্রামাণিক (পিতা এরাদ আলী প্রামাণিক, তারাবাড়িয়া), ছাদেক আলী মোল্লা (পিতা কাদির মোল্লা, রাইশিমুল), মাজেদুর রহমান (পিতা জিন্দার আলী, মানিকহাট), আবদুল আওয়াল (পিতা মোকছেদ আলী বিশ্বাস, মসজিদপাড়া) ও মোহাম্মদ দারা (পিতা আবুল হোসেন, তাঁতিবন্দ)। এছাড়া পাবনা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে যেসব মুক্তিযোদ্ধা সুজানগরে এসে যুদ্ধ করে শহীদ হন, তাঁরা হলেন- নূরুল ইসলাম নূর (পিতা কফিল উদ্দিন, শিবরামপুর), গোলাম সরোয়ার খান সাধন (পিতা আবদুল হামিদ খান, শালগাড়ীয়া), ইসমাইল হোসেন গামা (পিতা মো. আবু তালেব, জেলাপাড়া), আলমগীর কবির স্বপন (পিতা আ. গনি, রাঘবপুর), নজরুল ইসলাম সাচ্চু (পিতা আগবর আলী মিয়া, দিলালপুর), মতিয়ার রহমান মতি (পিতা শফিউদ্দিন সরকার, বকুলের গলি, গোপালপুর), আবদুল মান্নান (পিতা ইসমাইল হোসেন, গোপালপুর), আবু বক্কার (চরঘোশপুর) ও গোলাম রাজ্জাক চৌধুরী সাফী (পিতা গোলাম কাদের চৌধুরী, দিলালপুর)। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সংরক্ষণ ও সম্মানে সুজানগর উপজেলায় একাধিক সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। সেগুলো হলো— সাতবাড়িয়া কলেজ সংলগ্ন স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধ, শহীদ ইব্রাহিম মোস্তফা কামাল দুলাল সড়ক (সুজানগর বাজার থেকে চিনাখড়া পর্যন্ত), শহীদ সাদেক আলী মোল্লা সড়ক (শান্তিপুর থেকে রাইশিমুল পর্যন্ত), শহীদ আব্দুর রহমান সড়ক (দুলাই বাজার থেকে চরদুলাই পর্যন্ত), শহীদ শামসুল আলম বুলবুল সড়ক (আহাম্মদপুর থেকে রাণীনগর পর্যন্ত) এবং শহীদ আবদুল আওয়াল সড়ক (সুজানগর ডাকবাংলো থেকে একেনের মোড় পর্যন্ত)।
এছাড়া সুজানগর হাইস্কুল মাঠের দক্ষিণে শহীদ ইব্রাহিম মোস্তফা কামাল দুলাল, শহীদ নূরুল ইসলাম নূর ও শহীদ আবু বক্কারের কবরের দেয়ালে স্মৃতিফলক স্থাপিত হয়েছে। সাতবাড়িয়া কলেজে নির্মিত হয়েছে ‘স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ’। সুজানগর উপজেলা অফিস সংলগ্ন গণকবরটি প্রাচীর দিয়ে সংরক্ষিত করা হয়েছে। [মো. জহুরুল ইসলাম বিশু]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড