You dont have javascript enabled! Please enable it!

সিলেট নার্স হোস্টেল গণহত্যা (সিলেট সদর)

সিলেট নার্স হোস্টেল গণহত্যা (সিলেট সদর) সংঘটিত হয় ৯ই এপ্রিল। এতে ডা. সামসুদ্দিন আহমদ, ডা. শ্যামল কান্তি লালা, হাসপাতালের গাড়িচালক কোরবান আলী, ওয়ার্ডবয় মোখলেছুর রহমান ও মাহমুদুর রহমান এবং বেশ কয়েকজন রোগী নিহত হন।
ঘটনার দিন সিলেট শহরে ১৪৪ ধারা জারি ছিল। এরই মধ্যে ভোর ৪টা থেকে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ শুরু হয়। পাকবাহিনী পুরো শহর ও শহরতলীতে বিমান হামলা চালায়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে চলে যান। শহরের অন্যান্য জায়গার মতো সিলেট হাসপাতাল এলাকায়ও পাকবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এদিন আহত ও রোগাক্রান্ত হয়ে অসংখ্য নারী, পুরুষ ও শিশু হাসপাতালে আশ্রয় নেয়। ডা. সামসুদ্দিন তাদের চিকিৎসা দেয়ার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি একটি ওয়ার্ডে রোগীদের দেখে ওষুধ সংক্রান্ত পরামর্শ দিচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ডা. শ্যামল কান্তি লালা এবং কয়েকজন কর্মচারী ছিলেন। বেলা ১১টার দিকে পাক হানাদাররা হাসপাতালে গুলিবর্ষণ করে। তারা হাসপাতালের দরজার সামনে মেশিনগান স্থাপন করে গুলি করে হাসপাতাল ভবন ঝাঝরা করে দেয়। এরপর তারা ৩ নম্বর সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে প্রবেশ করে। তখন এ ওয়ার্ডে ডা. সামসুদ্দিন আহমদ, ডা. শ্যামল কান্তি লালা, গাড়িচালক কোরবান আলী, ওয়ার্ডবয় মোখলেছুর রহমান ও মাহমুদুর রহমান এবং ৭৫ জন রোগী ছিল। হানাদাররা তাদের হাসপাতালের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে অবস্থিত নার্স হোস্টেলের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে প্রথমেই ডা. সামসুদ্দিনের ওপর গুলি ছোড়ে। মুহূর্তেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তারপর ডা. শ্যামল কান্তি লালা, গাড়িচালক কুরবান আলী, ওয়ার্ডবয় মাহমুদুর রহমান এবং ৪ জন রোগীকে গুলি করে হত্যা করে। নিহত রোগীদের নাম জানা যায়নি। ওয়ার্ডবয় মোখলেছুর রহমানের ডান হাতে গুলি লাগলে সে মাটিতে পড়ে যায়। পাকবাহিনীর মেজর রিয়াজ তখন তার ওপর লাথি মারতে থাকলে সে প্রাণ হারায়।
নিহতদের লাশ তিনদিন সেখানে পড়ে থাকে। ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার হলে তাদের লাশ দাফন করা হয়। পরে কবরগুলো পাকা করা হয়। স্বাধীনতার পর ডা. সামসুদ্দিন আহমদের নামে এ হাসপাতালের নামকরণ করা হয়। ১৪ই এপ্রিল হত্যার শিকার হয়েছিলেন সিলেট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ লে. কর্নেল জিয়াউর রহমান। সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভ শহীদ লে. কর্নেল জিয়াউর রহমান, শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ, শহীদ ডা. শ্যামল কান্তি লালা, শহীদ ওয়ার্ডবয় মোখলেছুর রহমান ও মাহমুদুর রহমান, গাড়িচালক শহীদ কোরবান আলীর স্মৃতি বহন করছে। [মো. মুহিবুর রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!