You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে সিলেট সদর উপজেলা

সিলেট সদর উপজেলা সিলেট ঐতিহাসিকভাবে একটি রাজনীতি-সচেতন এলাকা। সিলেটের মানুষ ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ এবং নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সিলেটে বারবার প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে। পাকিস্তান আমলে ভাষা-আন্দোলন, ষাটের দশকের শিক্ষা আন্দোলন, আওয়ামী লীগ-এর ৬- দফা আন্দোলন, ছাত্রদের ১১-দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন প্রতিটি ক্ষেত্রে সিলেট শহর এবং বৃহত্তর সিলেটের মানুষ সক্রিয় ভূমিকা রাখে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সারাদেশের মতো সিলেটেও এককভাবে জয়লাভ করে। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে নানা ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এসবের প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর আহ্বানে সারাদেশে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো সিলেট সদর উপজেলায়ও তীব্র আন্দোলন হয়৷
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অনেক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি সরাসরি সিলেট শহর ও সিলেট সদর উপজেলার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী- সিলেটের সন্তান। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আব্দুস সামাদ আজাদ- এমএনএ (পরে মন্ত্রী ও সংসদের উপনেতা), দেওয়ান ফরিদ গাজী – এমএনএ (পরে এমপি ও মন্ত্রী) এবং ইসমত আহমেদ চৌধুরী প্রত্যক্ষভাবে সিলেটের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সিলেট অঞ্চলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রণাঙ্গনের ৪ ও ৫ নম্বর সেক্টরের বেসামরিক উপদেষ্টা ও প্রশাসক ছিলেন দেওয়ান ফরিদ গাজী এমএনএ। অন্য যাঁরা ১৯৭১ সালে সিলেট সদরে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, তাঁরা হলেন- এ এইচ সাদত খান, ডা. আবদুল মালিক এমপিএ, আজিজুর রহমান এমপিএ, আবদুল হামিদ, সিরাজ উদ্দিন আহমদ, জমির উদ্দিন, মনিরুল ইসলাম চৌধুরী, শাহ মোদাব্বির আলী, কফিল উদ্দিন চৌধুরী, নুরুল ইসলাম নাহিদ (পরে এমপি ও মন্ত্রী) প্রমুখ।
সদর উপজেলা সিলেট জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থান হওয়ায় এখানে পাকহানাদার বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা সুরমা নদীর উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তের গ্রামাঞ্চলে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ শুরু করেন। সিলেটের চা-বাগান এলাকায়ও যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
সিলেট সদর উপজেলা ৪ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত, বীর উত্তম। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্টের একজন সিনিয়র মেজর ছিলেন। একাত্তরের জানুয়ারি মাসে ৯০ দিনের ছুটি নিয়ে তিনি বাড়িতে আসেন। ২৫শে মার্চের কালরাতের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চাকরিতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পরিত্যাগ করে তিনি মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। তাঁর নেতৃত্বে সিলেটে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালিত হয়। এছাড়া বেসামরিক ব্যক্তিদের মধ্যে ডা. দেওয়ান নুরুল হোসেন চঞ্চল, আক্তার আহমদ (বিএলএফ), ইয়ামীন চৌধুরী, বীর বিক্রম ইনামুল হক চৌধুরী, বীর বিক্রম বাবরুল হোসেন বাবুল, মকসুদ ইবনে আজিজ লামা প্রমুখ সিলেট অঞ্চলে যুদ্ধে নেতৃত্বে দেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্ব থেকেই সিলেট সদরে ব্রিগেডিয়ার সলিমুল্লাহ খানের নেতৃত্বে ৫ হাজার সৈন্যের একটি ব্রিগেড মোতায়েন ছিল। বাইরে থেকে আরো সৈন্য যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে কিংবা শহরের পাকিস্তানি সৈন্যরা যাতে বের হতে না পারে সে লক্ষ্যে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধযোদ্ধারা সদর উপজেলার সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের কয়েকটি ব্রিজ ধ্বংস করে দেন। তা সত্ত্বেও বড় কিছু সড়ক ও বাগানের সরু রাস্তা দিয়ে মৌলভীবাজার থেকে প্রায় ২ হাজারের মতো পাকসেনা সিলেট সদরে অনুপ্রবেশ করে। হানাদার বাহিনী সিলেট শহরের মিরাবাজার-যতরপুর এলাকায় একদল দুঃসাহসিক যুবকের অবরোধের সম্মুখীন হয়
পাকবাহিনী বর্তমান সিলেট ক্যাডেট কলেজ ও খাজাঞ্চিবাড়িতে ক্যাম্প স্থাপন করে। শহরের কদমতলী এলাকায় তাদের একটি ক্যাম্প ছিল। সিলেট বিমান বন্দর ও সিলেট এমসি কলেজে তাদের বড় ঘাঁটি ছিল। সদর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পাকবাহিনী ও রাজাকারদের অনেক ক্যাম্প ছিল।
সিলেট সদর উপজেলার শহর ও গ্রামাঞ্চলে স্বাধীনতাবিরোধী দল বা সংগঠনগুলোর ব্যাপক তৎপরতা ছিল। আজমল আলী ও সিকান্দর আলীর নেতৃত্বে সিলেটে রাজাকাররা স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালায়। শহরের যতরপুরের মুসলিম লীগ নেতা নজমূল হোসেন খান তারা মিয়া, তার ভাই গোলাপ মিয়া ও কাছা মিয়া পাকিস্তানের দালালদের মধ্যে বেশি সক্রিয় ছিল। উপজেলার সোনাতলা এলাকার মইয়ারচরের আব্দুস সালাম (পিতা আরফান আলী) ও টুকের বাজার ইউনিয়নের শাহ খুররম খলার বতুল্লা মিয়া পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাজাকারদের সংগঠিত করে। এসব রাজাকার সিলেটের হাটখোলা, মোগলগাঁও, কান্দিগাঁও, খাদিমনগর ও টুকের বাজার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গণহত্যা, নির্যাতন, লুণ্ঠন, ধর্ষণ ইত্যাদি ঘৃণ্য অপরাধ সংঘটিত করে। এছাড়া শান্তি কমিটি গঠন করেও স্বাধীনতাবিরোধীরা নিরীহ নারী-পুরুষদের নানাভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করে।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রথমেই সিলেট শহরের মিরাবাজারের যতরপুর এলাকায় একদল দুঃসাহসিক যুবকের অবরোধের মুখোমুখি হয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এ- সময় আব্দুস সামাদ ফকির নামে একজন বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মী শহীদ হন।
মার্চ ও এপ্রিল মাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সিলেট শহরের অদূরে অবস্থিত খাদিমনগর চা-বাগানে এক নির্মম হত্যাকাণ্ড চালায়। চা-বাগানের তিন নম্বর বস্তির একটি রুমের মধ্যে ২৮শে মার্চ তারা ৪৪ জন চা-শ্রমিককে হত্যা করে। এদিন অনেক নারী শ্রমিক ধর্ষণের শিকার হন। ১৯শে এপ্রিল খাদিমনগর চা-বাগানে শ্রমিকদের কাজের কথা বলে একত্রে জড়ো করে পাকবাহিনী নির্বিচারে গুলি করে ৬৪ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। ২৮শে মার্চ এবং ১৯শে এপ্রিলের এ হত্যাকাণ্ড মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে খাদিমনগর চা- বাগান গণহত্যা নামে পরিচিত।
পাকিস্তানি সেনারা ২৭ ও ২৮শে মার্চ সিলেট শহরের নিম্বাক আশ্রমে রাসবিহারী ধর, সুরভী ধর, নরেন্দ্র ধর ও পাচু বাবুকে হত্যা করে। ৩০শে মার্চ হানাদাররা খাদিমনগরে ইপিআর- এর উইং ব্যারাক আক্রমণ করে। তারা বাঙালি সৈনিকদের নিরস্ত্র করে। পাকসেনাদের গুলিতে নিরস্ত্র হাবিলদার শরাফত ও কোয়ার্টার গার্ড হাবিলদার মুজিবুর রহমান শহীদ হন।
এপ্রিল মাসে ঘাতক পাকিস্তানি বাহিনী সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলতাফ আলীকে ধরে নিয়ে শাহী ঈদগাহর পার্শ্ববর্তী রাস্তায় দাঁড় করিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
গোটাটিকর পাঠানপাড়ার নছিদ আলীর স্ত্রী নূরজাহান বেগম নিজ বাড়িতে পাকিস্তানি সেনাদের নিক্ষিপ্ত বোমার আঘাতে মারা যান। একই গ্রামের সুখময় ঘোষের পুত্র সুধন্য ঘোষকে ঘর থেকে ধরে নিয়ে পাকিস্তানি হানাদাররা হত্যা করে তার মরদেহ মাটিচাপা দেয়।
ছিটা গোটাটিকর (লামারগাঁও)-এর পটন বিশ্বাসের পুত্র ধীরেন্দ্র বিশ্বাস, ভারতরাম বিশ্বাসের পুত্র সুরেষ বিশ্বাস ও নারায়ণ রাম বিশ্বাসের পুত্র নরেন্দ্র বিশ্বাসকে যুদ্ধ শুরুর প্রথমদিকে ঘর থেকে ধরে নিয়ে পাকসেনারা লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে। এতে ধীরেন্দ্র ও সুরেষের মৃত্যু হয় এবং নরেন্দ্র গুরুতর আহত হন।
পাকবাহিনী ৩রা এপ্রিল সিলেট আবহাওয়া অফিসের একজন কর্মকর্তার বাসায় ঢুকে তাকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর তারা এ পাড়ার যোগী বাড়িতে হামলা করে ৪ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। এদিন পাকবাহিনীর গুলিতে নিহত হয় যুবক গঙ্গোত্রী শর্মা। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করে দালাল ইসকন্দর আলী। একই দিন বাসা থেকে ধরে নিয়ে হানাদাররা শংকর দে-কে হত্যা করে। একইভাবে হত্যা করে এম সি কলেজের ছাত্র শ্রীকান্তকে। ৪ঠা এপ্রিল শহরের মহাজনপট্টিতে পাকসেনারা প্রাণ গোবিন্দ বণিক, নরেশ বণিক, সুনীল বণিক ও সুকেন্দ্র বণিককে হত্যা করে। ৬ই এপ্রিল পাকবাহিনী মালনীছড়া চা-বাগানে হত্যাকাণ্ড যালায়। মালনীছড়া চা-বাগান গণহত্যায় চা- বাগানের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার শাখাওয়াত নেওয়াজ, তাঁর অনুজ শাহ নেওয়াজ, তাঁর দুই বন্ধু মেজবাহ উদ্দিন ও ওবায়দুল কাদেরসহ ৬ জনকে হত্যা করা হয়।
৬ই এপ্রিল কলাপাড়া শ্রমিক বস্তিতে উড়িয়া সম্প্রদায়ের ওপর হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। কলাপাড়া গণহত্যায় পাকিস্তানি সেনারা রাজাকারদের সহযোগিতায় ১৮ জনকে হত্যা করে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়।
৮ই এপ্রিল পাকসেনারা শহরের হাওয়াপাড়াস্থ ঘোষ বাড়িতে অনেককে মন্দিরের সামনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে। এতে দীঘেষ ঘোষ, নারদ ঘোষ, আহাদ ঘোষ, ভুলানন্দ ঘোষ ও শতীন্দ্র ঘোষ শহীদ হন। তারপর পাকসেনারা বাড়ির যাবতীয় সম্পদ লুট করে।
৯ই এপ্রিল বেলা ১১টায় সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক শামসুদ্দিন, তরুণ শল্য চিকিৎসক শ্যামল কান্তি লালাসহ ১২-১৩ জনকে নার্স হোস্টেলের সামনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। ওয়ার্ড বয় সৈয়দ মুখলিছুর রহমান মারাত্মকভাবে আহত হয়। এ হত্যাকাণ্ড সিলেট নার্স হোস্টেল গণহত্যা নামে পরিচিত।
১৩ই এপ্রিল পাকবাহিনী পুরানলেনস্থ জ্ঞানচন্দ্র দে, বিজয় কুমার দত্ত, প্রীতীশ চন্দ্র দে ও মুকুল চন্দ্ৰ দে-কে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং তাদের বাড়ির সকল সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। শহরের অবসরপ্রাপ্ত আয়কর সুপারভাইজার জিতেন্দ্র নাথ চৌধুরীকে পাকিস্তানি হানাদাররা দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। তাঁর মাথা বিচ্ছিন্ন করে দেহ পুকুরে ফেলে দেয়। পাকবাহিনী শহরের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তি বিমলাংশু সেনগুপ্তকে ধরে নিয়ে যায়। তিনি আর ফিরে আসেননি।
১৪ই এপ্রিল হত্যার শিকার হন সিলেট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ লে. কর্নেল জিয়াউর রহমান। শহরতলীর খোজারখলা গ্রামের মছই মিয়া, মনা মিয়া, মুজিবুর রহমান ও সমেদ মিয়াকে পাকবাহিনী হত্যা করে। তাদের খোজারখলা মসজিদের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
বর্তমান সিটি কর্পোরেশন এলাকায় শশিমোহন ঘোষের পুত্র সুনীল ঘোষকে পাকবাহিনী হত্যা করে। সিলেটের তেলী বাজারে সেতু ধ্বংসের সময় পাকবাহিনীর গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হন নগরীর মিরাবাজারের কাজল পাল। পরে তিনি মারা যান। টি বি হাসপাতালের পাশে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে শহীদ হন মুক্তিযোদ্ধা অনিল দত্ত। পাকবাহিনী সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়নের এওলাটুকে মুক্তিযোদ্ধা সুরুজ আলী (পিতা করামত আলী, কালাগুল) ও তাঁর দুই সঙ্গীকে হত্যা করে। ল্যান্স নায়েক ছুরত আলী সিলেট বিমানবন্দর এলাকার একটি টিলা থেকে মর্টারের গোলাবর্ষণকালে পাকসেনাদের মেশিনগানের গুলিতে শহীদ হন।
পাকসেনাদের বর্বরতায় আখালিয়ার নয়াপাড়ায় একই পরিবারের আব্দুল রাজ্জাক ও আব্দুস সাত্তার শহীদ হন। মিরাবাজারের আগপাড়ার প্রবীণ নাট্য ব্যক্তিত্ব দিবান কুমার শর্মা নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে ইসকান্দর নামের এক লোকের সঙ্গে দক্ষিণ সুরমার কামালবাজারের দিকে যাওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে থাকা পুত্র গঙ্গোত্রি কুমার শর্মা ও বকুল কুমার শর্মাসহ প্রাণ হারান।
১৮ই এপ্রিল পাকসেনারা সিলেট শহরের তারাপুর চা-বাগানে গণহত্যা চালায়। —তারাপুর চা-বাগান গণহত্যায় বাগানের মালিকসহ ৩৯ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান।
১৯শে এপ্রিল পাকবাহিনী সিলেট শহরের জল্লারপাড়ের বাসিন্দা অর্ধেন্দু শেখর রায়কে গুলি করে হত্যা করে এবং তার সহোদর শুপ্রেন্দু শেখর রায়কে ধরে নিয়ে যায়। তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানি বাহিনী সাপ্তাহিক যুগভেরী-র সম্পাদক আমিনুর রশীদ চৌধুরীকে ৬ই মে আটক করে তাঁর ওপর অকথ্য নির্যাতন চালায়। এছাড়া পাকবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হন সাংবাদিক নিকুঞ্জ বিহারী গোস্বামী ও দুর্গেশ দেব, মদনমোহন কলেজের অধ্যক্ষ কৃষ্ণ কুমার পাল চৌধুরীসহ আরো অনেকে।
শহরের মোঘলটুলাস্থ সোনাওর আলীকে (কুতুব মিয়া) ১৫ই মে স্থানীয় দালালদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনারা ধরে নিয়ে শালুটিকরে বন্দি করে রাখে এবং পরে হত্যা করে। সিলেট শহর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি বাছির মিয়াকে পাকসেনারা ধরে নিয়ে যায়। তিনি আর ফিরে আসেননি।
২৯শে মে শহরের খাজাঞ্চিবাড়িতে পাকিস্তানি সেনারা এক পরিবারের সবাইকে বেঁধে গুলি করে। এতে প্রভাবতী দেবী, দেবেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, বিমলা নাথ চক্রবর্তী, ব্রজেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, বিশ্বেশ্বর চক্রবর্তীসহ কয়েকজন প্রাণ হারান। সিলেটের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এ ঘটনা খাজাঞ্চিবাড়ি গণহত্যা হিসেবে পরিচিত। উল্লেখ্য, পাকসেনারা এ বাড়ির মালিক বিশিষ্ট চা-ব্যবসায়ী নির্মল চৌধুরীকে এর আগে এপ্রিল মাসে ঘর থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েকদিন আগে সুরমা নদীর উত্তর পাড় থেকে পাকসেনারা শেল নিক্ষেপ করে জৈনপুরের নেহারুল্লাহ ও ওয়াহিদ মিয়াকে হত্যা করে। তারা একই পরিবারের সদস্য ও সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা ছিলেন। সদর উপজেলার মইয়ারচর গ্রামের ডাক্তার মাওলানা ওলিউর রহমানকে ১১ই ডিসেম্বর ঢাকার লালবাগ এলাকা থেকে পাকিস্তানি সৈন্যরা ধরে নিয়ে যায়। ১৪ই ডিসেম্বর তাঁর দুটি চোখ উপড়ে ফেলে বেয়নেট চার্জ করে তাকে হত্যা করে।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতায় আখালিয়ার নয়াপাড়ায় দুই সহোদর আব্দুল রাজ্জাক ও আব্দুস সাত্তার নিহত হন। তাদের আর এক ভাই আব্দুল গফুর মারাত্মকভাবে আহত হন। শহরের শিবগঞ্জ খরাদিপাড়ার প্রাইভেট টিউটর রাজেন্দ্র কুমার চক্রবর্তী শহর থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় দক্ষিণ সুরমায় ঘাতকরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
বিভিন্ন সময়ে হানাদারদের হাতে নিহত সিলেট সদর উপজেলার চা-শ্রমিকেরা হলেন- অতীত নায়েক, সুকেতু নায়েক (বর্জান চা-বাগান), রবি দাস কর্মকার, শুকরিয়া দাস (দলদলি চা-বাগান), অতুল দাস, বিনোদ বাড়াইক, গণেশ দাস, বাছিয়া দাস, রোগেন বাড়াইক, মাখন দাস, কোকিল ভূমিজ (কেওয়াপাড়া চা-বাগান)। তোফান লোহার, ভীম লোহার, বীরেশ লোহার, গুলক লোহার, গুগন লোহার, মিঠাই লাল লোহার, চষন্ন খ্রিস্টান, সনিয়া দাস, লালু দাস, সোনাতন সিং রাউতিয়া (লাক্কাতুরা চা-বাগান)-সহ আরো অনেকে।
গোটাটির বন্দরঘাটের আছলম মিয়ার পুত্র আজমান মিয়া বরিশালের পুলিশ বিভাগে চাকরিরত ছিলেন। তিনি গৌরনদী এলাকায় শহীদ হন।
সিলেট বিমানবন্দর সড়কের বর্তমান সিলেট ক্যাডেট কলেজ পাকিস্তানি বাহিনীর প্রধান নির্যাতনকেন্দ্র ও বন্দিশিবির ছিল।
এছাড়া কদমতলী এলাকায় পাকসেনা ক্যাম্পও বন্দিশিবির হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এসব জায়গায় বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষদের নির্যাতন করা হতো।
সিলেট বিমানবন্দর সড়কে ক্যাডেট কলেজের পেছনে বধ্যভূমি ও গণকবর রয়েছে। অনেককে হত্যা করে পাকবাহিনী এখানে গণকবর দেয়। সিলেট আবহাওয়া অফিসের পেছনের টিলায় একটি গণকবর রয়েছে। এখানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর দেয়া হয়। এম সি কলেজের উত্তর-পূর্ব টিলায় একটি গণকবর রয়েছে। মালনীছড়া ও তারাপুর চা-বাগানেও গণকবর আছে। পুরানলেনস্থ জ্ঞানচন্দ্ৰ দে-র বাড়িতে একটি গণকবর রয়েছে। স্বাধীনতার পর এ বাড়ির পশ্চিমে সিলেট ডায়াবেটিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ হাসপাতালের পেছনে গণকবরের অবস্থান।
৪ঠা এপ্রিল টি বি হাসপাতাল এলাকায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে বেঙ্গল রেজিমেন্টের সুবেদার নূরুল হক, ইপিআর-এর নায়েক সুবেদার গোলাম হোসেন, নায়েব সুবেদার মোখলেসুর রহমান, হাবিলদার ওয়াহিদুল ইসলাম, হাবিলদার নূরুল ইসলাম ও হাবিলদার হাফিজ উল্ল্যা নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযোদ্ধারা হাসপাতালে টহলরত পাসসেনাদের ওপর আক্রমণ করেন। বেশ কিছুক্ষণ যুদ্ধ চলে। শেষ পর্যন্ত হানাদার বাহিনী পরাজিত হয়ে সালুটিকরের দিকে চলে গেলে মুক্তিযোদ্ধারা টি বি হাসপাতাল দখল করেন।
সিলেট এম সি কলেজ এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে ৪ঠা ও ৫ই এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। সিলেট এম সি কলেজ যুদ্ধএ ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
৫ই এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা সিলেট বিমান বন্দরে বোমা হামলা চালান। এতে বিমানবন্দরের ব্যাপক ক্ষতি হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ প্রতিহত করতে পাকবাহিনী বিমানবন্দরে তাদের প্রায় সকল শক্তি নিয়োগ করে। এ সুযোগে মুক্তিযোদ্ধারা সিলেট কারাগার থেকে প্রায় ২৫০০ বন্দিকে মুক্ত করেন। ১৯শে এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা আবার বিমানবন্দরে আক্রমণ করেন। এ আক্রমণে নেতৃত্ব দেন হাবিলদার আবদুল ওয়াহিদ ও নায়েক হাফিজ উল্ল্যা। দুই পক্ষের মধ্যে সারারাত যুদ্ধ চলে। মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাবর্ষণে বিমানবন্দরের রানওয়ের গুরুতর ক্ষতি হয়। সফল আক্রমণ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে চলে যান।
৫ই এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা খাদিমনগর চা-বাগানে একটি অপারেশন পরিচালনা করেন। এ অপারেশনের লক্ষ্য ছিল খাদিমনগর চা-বাগানের অবাঙালি ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ম্যানেজার আবদুল আজিজ এবং অবাঙালি চিফ মেডিকেল অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। মুক্তিযোদ্ধারা হাবিলদার খুরশেদ আলমের নেতৃত্বে ম্যানেজারের বাংলোয় এবং ল্যান্স নায়ক রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে মেডিকেল অফিসারের বাসায় আক্রমণ করেন। ম্যানেজার আজিজ আগেই পালিয়ে যায়। মেডিকেল অফিসারের বাসায় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে একজন পাঞ্জাবি চৌকিদার নিহত হয়।
সদর উপজেলার গোটাটিকর বিসিক শিল্পনগরী এলাকার পাশে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এ- যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্ব দেন ক্যাপ্টেন আজিজ। ইস্ট বেঙ্গল, ইপিআর, পুলিশ, আনসার ও মুজাহিদ বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত এ মুক্তিযোদ্ধা দলের সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাও যোগ দেন। এ-যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের মুখে পাকবাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কিন্তু পরে পাকবাহিনী বিমান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর শেলিং করলে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন। এ-যুদ্ধে সিপাহি আবব্দুর রাজ্জাক, সিপাহি শরাফত আলী ও সিপাহি আব্দুল মজিদ শহীদ হন।
সিলেট সদর ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী বিলাজোড়ে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এতে নেতৃত্ব দেন ৫ নম্বর সেক্টরের কোম্পানি কমান্ডার মোশাররফ হোসেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বর্তমান উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মন্তাজ আলী ও হাবিলদার মুসলিম আলী। পাকহানাদার বাহিনীর অস্ত্রবাহী কার্গো বোয়িং বিমান-৭৭ সিলেট এয়ারপোর্টে নামার চেষ্টা করলে ৫ নম্বর সেক্টরের কোম্পানি কমান্ডার মোশাররফ হোসেনের এলএমজি-র গুলি বিমানের পাখায় আঘাত হানে। পরে মৌলভীবাজারের শমসেরনগর এলাকায় বিমানটি অস্ত্রসহ ধ্বংস হয়।
সালুটিকর এলাকার ছোটো গর্মি ও বড়ো গর্মি গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধা মো. সুলেমান হোসেন বীরত্বের সঙ্গে শত্রুদের মোকাবেলা করেন। ১০ই ডিসেম্বর তিনি ১২-১৩ জন সঙ্গীসহ হেলিকপ্টারযোগে সিলেট শহরের নিকটবর্তী দুরবি হাওর (বর্তমান শাহজালাল উপশহর) এলাকায় পৌছলে পাকসেনারা তাঁদের ঘিরে ফেলে। প্রচণ্ড গোলাগুলির এক পর্যায়ে মো. সুলেমান হোসেন ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। পরে পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে ধরে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন শেষে ১৪ই ডিসেম্বর দুপুরে হত্যা করে লাশ নিয়ে পালিয়ে যায়।
১৩ই ডিসেম্বর দক্ষিণ সুরমার ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা কদমতলীতে অবস্থিত পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্প আক্রমণ করেন। এ-সময় ক্যাম্পে অবস্থানকারী ৩১ জন পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। তখন দক্ষিণ সুরমা এলাকা দখলমুক্ত হয়। ১৫ই ডিসেম্বর সিলেট সদর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- নীলমনি সরকার, বীর বিক্রমন (পিতা অতুল রাম সরকার, চিতা শ্রীরামপুর), গোলাম মোস্তফা, বীর প্রতীক (পিতা ইব্রাহীম আলী, কালারুখা)।
উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- নীলমনি সরকার, বীর বিক্রম (৩রা ডিসেম্বর কানাইঘাট যুদ্ধে শহীদ), নুরুল ইসলাম বহর (মনিপুরী বস্তি), লাল মিয়া (নীলগাঁও), এনামূল হক (পুরানগাঁও), আনোয়ার আলী (উলালমহল), আশ্বাব আলী (সুনামপুর), আব্দুল খালিক (আজমতপুর), নেয়ার আলী (সরিষপুর), আমির আলী (বারীগাঁও), ফজলুল হক (ইপিআর সদস্য, হাওয়াপাড়া), আজিজুর রহমান (কানিশাইল), ফজলুল হক (নয়াসড়ক), বাবুল মিয়া (সিলাম পশ্চিমপাড়া), আব্দুল আজিজ (মুক্তারপুর), সিরাজ মিয়া (বরইকান্দি), আলাউদ্দিন (হায়দরপুর), ল্যান্স নায়েক ছুরত আলী ও মো. ইসাক জালাল (সিপাহি, ইপিআর, বড়গুল)। এছাড়া এম সি কলেজ প্রাঙ্গণে যুদ্ধ চলাকালে মুক্তিযোদ্ধা সুবেদার ফয়েজ আহমদ, সিপাহি বাচ্চু মিয়া, নায়েক নুরুন্নবী, ফজর আলী, সিপাহি মহিউদ্দিন ও নায়েক আফসর আলী শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি আতাউল গনি ওসমানীর নামে সিলেটের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, হাসপাতাল ও জাদুঘরের নামকরণ করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা ইয়ামিন চৌধুরী, বীর বিক্রম ও মুক্তিযোদ্ধা ডা. চঞ্চলের নামে সিলেট নগরীতে দুটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। শহীদ ডা. শামসুদ্দিনের নামে হাসপাতাল ও ছাত্রাবাসের নামকরণ করা হয়েছে। শহীদ সুলেমানের নামে মদনমোহন কলেজে ও সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের একটি করে হলের নাম দেয়া হয়েছে। সিলেট শহরের চৌহাট্টায় শহীদ মিনারের পাশে নির্মিত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সিলেট মেডিকেল কলেজের শহীদ লে. কর্নেল জিয়াউর রহমান, শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ, শহীদ ডা. শ্যামল কান্তি লালা, শহীদ মাহমুদুর রহমান ও অ্যাম্বুলেন্স চালক শহীদ কোরবান আলীর স্মৃতি বহন করছে। পাশেই রয়েছে তাঁদের নামফলক ও সমাধি। এছাড়া শহীদ মিনারের নিকটে শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদের নামে একটি হাসপাতাল রয়েছে। সিলেট পুলিশ লাইন্স রিজার্ভ অফিসের সামনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষার্থে ‘মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ’ নির্মাণ করা হয়েছে। পুলিশ লাইন্স প্যারেড গ্রাউন্ডে গণকবর, জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্টে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ও ‘হামলা’ নামে স্মৃতি ভাস্কর্য, মেন্দিবাতায় মুক্তিযুদ্ধের অবিনাসী স্মৃতিসৌধ ‘রণাঙ্গণে মেন্দিবাতা’। সিলেট শহরের গণকবরের ওপর নির্মিত হয়েছে ‘স্মারকবেদি’। এছাড়া এম সি কলেজে গণকবর ও স্মৃতিফলক এবং মদনমোহন কলেজ ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাস্কর্য ও শহীদ মিনার রয়েছে। সদর উপজেলার পশ্চিম সদর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে শহীদ মিনার রয়েছে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের পেছনের টিলায় একটি স্মৃতিসৌধ রয়েছে। মিরাবাজার রামকৃষ্ণ মিশনের পাশে শহীদ কাজল পালের স্মৃতি রক্ষার্থে একটি স্মারকস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। মালনীছড়া চা-বাগানে একটি স্মৃতিসৌধ রয়েছে। [মো. মুহিবুর রহমান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!