You dont have javascript enabled! Please enable it!

বীর উত্তম সিরাজুল মওলা

সিরাজুল মওলা, বীর উত্তম (জন্ম ১৯৪৩) বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৩ সালের ১লা আগস্ট চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার নাওপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সিদ্দিকুর রহমান
এবং মাতার নাম জেবুন নেছা। তিনি কচুয়ার রহিমানগর হাইস্কুল থেকে ১৯৬০ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬২ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি পাকিস্তান নৌবাহিনীতে নাবিক পদে যোগ দেন। করাচিতে পিএনএস বাহাদুর-এ তিনি ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি পিএনএস জাহাঙ্গীর ও পিএনএস হিমালয়সহ তৎকালীন পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন নৌ-ঘাঁটিতে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে সিরাজুল মওলা পাকিস্তান নৌবাহিনীতে এএস (এবল সিম্যান) পদে চট্টগ্রামে অবস্থানরত পিএনএস কুমিল্লায় কর্মরত ছিলেন। মার্চের উত্তাল গণ-আন্দোলনের সময় তিনি ১৯শে মার্চ ৭দিনের ছুটি নিয়ে নিজ গ্রামে আসেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ব্যাপক হত্যা ও নির্যাতন শুরু করলে বাঙালি ইপিআর ও পুলিশ বাহিনীর সদস্য এবং সর্বস্তরের জনগণ পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু করেন। সিরাজুল মওলাও তাঁর কর্মস্থলে যোগদান না করে নিজ এলাকায় প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে সেক্টরভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মেজর খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে ২নং সেক্টরে মর্টার প্লাটুনের সদস্য হিসেবে শালদা নদী, মন্দবাগ, চৌদ্দগ্রাম, বুড়িরহাটসহ বেশ কয়েকটি স্থানে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।
অক্টোবর মাসে মুক্তিবাহিনীর নৌ-উইং গঠন করা হলে সিরাজুল মওলা মুর্শিদাবাদ জেলার পলাশী নৌপ্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে যোগ দেন। সেখানে প্রশিক্ষণ শেষে তিনি নৌ- কমান্ডো বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হন। এ বাহিনীতে যোগ দেয়ার পর তিনি যে-সকল অপারেশনে অংশ নেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অপারেশন হট প্যান্টম-। এ অপারেশনে তিনি যুদ্ধ জাহাজ পিএনএস পলাশ-এ ৪০-৬১ বাফার গানার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এ অপারেশনের আওতায় ১০ই ডিসেম্বর যৌথবাহিনীর তিনটি যুদ্ধ জাহাজ আইএনএস প্যানভেল (ভারতীয়), বিএনএস পদ্মা ও বিএনএস পলাশ (বাংলাদেশ) খুলনায় পাকিস্তানি নৌ-ঘাঁটি অপারেশনের জন্য যাত্রা করে। যৌথবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ খুলনা শিপইয়ার্ড-এর কাছাকাছি পৌছানোর পর ভুলবশত ভারতীয় বোমারু বিমান পদ্মা ও পলাশের ওপর বোমা বর্ষণ শুরু করে। এতে এ জাহাজ দুটি বিধ্বস্ত হয়। পলাশে কর্মরত সিরাজুল মওলা বোমার আঘাতে আহত হন। কলকাতার ব্যারাকপুর হাসপাতালে চিকিৎসার পর দেশে ফিরে তিনি পুনরায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৮০ সালে তিনি নৌবাহিনীর পেটি অফিসার হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার সিরাজুল মওলাকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করে। তিনি এক কন্যা ও চার পুত্র সন্তানের জনক। [সাজাহান মিয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!