সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন অপারেশন (নারায়ণগঞ্জ সদর)
সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন অপারেশন (নারায়ণগঞ্জ সদর) পরিচালিত হয় নভেম্বর মাসের শেষদিকে। অপারেশনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করে শহরকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করা।
সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন থেকে একটি বিদ্যুৎ লাইন ফতুল্লার সঙ্গে যুক্ত ছিল। এখান থেকে ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। মুক্তিযোদ্ধারা এ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন। জালকুড়ি গ্রামের পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে বিদ্যুৎ লাইনটি অকেজো করে দেবার জন্য সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমান্ডার মো. ইসমাইল হোসেন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। তিনি দেলপাড়া থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের ৪ জন কর্মীকে তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য সংবাদ পাঠান। এ সংবাদ পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা মালেক দেওয়ান, ইব্রাহীম ও ২ জন কর্মী থানা কমান্ডার মো. ইসমাইলের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা সব শুনে সম্মত হলে মো. ইসমাইল তাঁদের সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন অপারেশনের জন্য বিস্ফোরক তৈরি, বোমা বানানো ও বিস্ফোরণ ঘটানোর ওপর প্রশিক্ষণ দেন।
কমান্ডার মো. ইসমাইলের নেতৃত্বে মোহর আলী, মোমতাজউদ্দীন ভূঁইয়া, নুরুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা এ অপারেশনে অংশ নেন। মুক্তিযোদ্ধারা জালকুড়ি গ্রাম থেকে রাত ৮টায় সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের পশ্চিম পার্শ্বে ডিএনডি প্রজেক্টের ভেতরে অপারেশন স্থলে যান। মালেক দেওয়ান, ইব্রাহীম এবং আরো ২ জন মুক্তিযোদ্ধা সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের ৪টি পাখায় বিস্ফোরক লাগিয়ে ও ডেটোনেটর ফিট করে ভোরের নামাজের প্রায় পাঁচ-দশ মিনিট পূর্বে রশিতে আগুন ধরিয়ে দেন। তাদের কভার দেন মো. ইসমাইল, জয়নাল আবেদিন, সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়নের আলী হোসেন, মোমতাজউদ্দীন ভূঁইয়া, বদরুদ্দিন ও নূরুল ইসলাম। মুক্তিযোদ্ধারা ৩৩ হাজার ভোল্টের একটি টাওয়ারের গোড়ার তিন দিক হেক্সোব্লেড দিয়ে কেটে ফেলেন। টাওয়ারটি আরো তিনটি টাওয়ার নিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। পরপর চারটি পাখা বিস্ফোরিত হয়। সঙ্গে-সঙ্গে সারা ঢাকা শহর অন্ধকারে ডুবে যায়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বিস্ফোরণের শব্দে ভয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। মুক্তিযোদ্ধারা পাওয়ার স্টেশনের ৪ জন কর্মীকে কভার দিয়ে দেলপাড়া নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসেন। অপারেশনের ঘণ্টাখানেক পর বিবিসি থেকে এ সম্পর্কিত সংবাদ প্রচারিত হয়। [রীতা ভৌমিক]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড