সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়িঘাট বধ্যভূমি (কিশোরগঞ্জ সদর)
সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়িঘাট বধ্যভূমি (কিশোরগঞ্জ সদর) কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় অবস্থিত। কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে ২০০ মিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ- নিকলী সড়কের পার্শ্ববর্তী নরসুন্দা নদীতে কালীবাড়িঘাটের অবস্থান। ঘাটের পাশে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি কালীমন্দির রয়েছে। এ মন্দির সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির নামে পরিচিত। মন্দিরের পুজারিরা নদীর এ ঘাটটি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতেন বলে এটি সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়িঘাট নামে পরিচিত হয়। এ সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়িঘাট কিশোরগঞ্জের অন্যতম বধ্যভূমি ছিল।
সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়িঘাট থেকে ৩০০ মিটার উত্তর-পশ্চিমে রেলস্টেশন থেকে শহরমুখী মূল সড়কের পাশে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী এ ডাকবাংলোকে তাদের অফিস ও নির্যাতনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করত। অন্যদিকে রেলস্টেশনের পাশে স্টেশন মাস্টারের বাসভবন ছিল মহকুমা আলবদর বাহিনীর অফিস ও নির্যাতনকেন্দ্র। প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে নিরীহ হিন্দু, আওয়ামী লীগ-এর নেতা-কর্মী, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ছাত্র-তরুণদের ধরে এনে এসব নির্যাতনকেন্দ্রে বন্দি করে রাখা হতো। প্রতিরাতে তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হতো। এছাড়া তরুণী ও যুবতী গৃহবধূদের ধরে এনে এখানে দিনের পর দিন পাশবিক নির্যাতন করা হতো। নির্যাতন শেষে ২৫- ৩০ জনকে এক সঙ্গে বেঁধে গভীর রাতে ট্রেনে করে বিভিন্ন বধ্যভূমিতে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হতো। জুন থেকে নভেম্বরের মধ্যে দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়িঘাট বধ্যভূমিতে শতাধিক নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। নিহতদের সকলের পরিচয় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। যাদের পরিচয় জানা গেছে তারা হলেন- মহিউদ্দিন আহমেদ (পিতা মো. নবী হোসেন, গাইটাল, শিক্ষকপল্লী, কিশোরগঞ্জ শহর), ছফির উদ্দিন আহম্মদ (পিতা মো. আমুদ আলী ভূঁইয়া, গ্রাম খিলপাড়া, মারিয়া, কিশোরগঞ্জ সদর), হীরেন্দ্র দাস (পিতা শচীন্দ্র চন্দ্র দাস, গৌরাঙ্গবাজার, কিশোরগঞ্জ শহর), শৈলেন্দ্র চক্রবর্তী, (পিতা ব্রজনাথ চক্রবর্তী, কালীবাড়ি, কিশোরগঞ্জ শহর; কালীবাড়ির সহ-পুরোহিত), প্রফুল্ল কুমার সরকার (পিতা ব্রজনাথ চক্রবর্তী, রশিদাবাদ, কিশোরগঞ্জ সদর), পরিতোষ চন্দ্র সরকার শংকর (পিতা প্রফুল্ল কুমার সরকার, রশিদাবাদ, কিশোরগঞ্জ সদর), বিকাশ চন্দ্র সরকার কানু (পিতা প্রফুল্ল কুমার সরকার, রশিদাবাদ, কিশোরগঞ্জ সদর), যোগেন্দ্র চন্দ্র মজুমদার (পিতা শরদিন্দু মজুমদার, রশিদাবাদ, কিশোরগঞ্জ সদর), নবীন চন্দ্র সাহা রায় (পিতা নন্দ কুমার সাহা রায়, সগড়া, কিশোরগঞ্জ সদর), প্রফুল্ল চন্দ্র সাহা (পিতা নবীন চন্দ্র সাহা, সগড়া, কিশোরগঞ্জ সদর), সুধাংশু চন্দ্র সাহা, (পিতা নবীন চন্দ্র সাহা, সগড়া, কিশোরগঞ্জ সদর), গোপাল চন্দ্র সাহা (পিতা গগন চন্দ্ৰ সাহা, বত্রিশ, বিপিন ডাক্তারের বাড়ি, কিশোরগঞ্জ শহর), হরিচরণ পণ্ডিত (পিতা বৃন্দাবন পণ্ডিত, সগড়া, কিশোরগঞ্জ সদর), নীরদ চন্দ্র পণ্ডিত, (পিতা হরিচরণ পণ্ডিত, সগড়া, কিশোরগঞ্জ সদর), ক্ষিতীশ চন্দ্র পণ্ডিত (পিতা কালীকুমার পণ্ডিত, সগড়া, কিশোরগঞ্জ সদর), শৈলেন্দ্র চন্দ্র পণ্ডিত (পিতা কালীকুমার পণ্ডিত, সগড়া, কিশোরগঞ্জ সদর), অশোক কুমার পণ্ডিত ওরফে মধু (পিতা ক্ষিতীশ চন্দ্র পণ্ডিত, সগড়া, কিশোরগঞ্জ সদর), তাপস পণ্ডিত (পিতা রজনীকান্ত পণ্ডিত, বিন্নগাঁও, আখড়াবাজার, কিশোরগঞ্জ শহর), ইন্দ্রজিৎ পণ্ডিত (গ্রাম বিন্নগাঁও, আখড়াবাজার, কিশোরগঞ্জ শহর), নগেন্দ্র রায় (পিতা ইন্দ্রজিৎ পণ্ডিত, বিন্নগাঁও, আখড়াবাজার, কিশোরগঞ্জ শহর), প্রদীপ মজুমদার (পিতা অশ্বিনী কুমার মজুমদার, খড়মপট্টি, কিশোরগঞ্জ শহর), সুদীপ মজুমদার (পিতা অশ্বিনী কুমার মজুমদার, খড়মপট্টি, কিশোরগঞ্জ শহর), দীনেশ রায় (পিতা জগৎ চন্দ্র রায়, নগুয়া, কিশোরগঞ্জ শহর), যোগেশ চন্দ্র সাহা (পিতা গুরুপ্রসাদ সাহা, বত্রিশ, মেলাবাজার, কিশোরগঞ্জ শহর), জিতেন্দ্র বসাক ওরফে জিতু বসাক (পিতা রাধানথ বসাক, বত্রিশ, কিশোরগঞ্জ শহর), বিরাজ বসাক (পিতা কৈলাশ বসাক, নগুয়া, ঝাঁপানিয়াপাড়া, কিশোরগঞ্জ শহর), আহম্মদ মোল্লা (পিতা আব্দুল মজিদ মোল্লা, বিন্নাটী মোল্লাবাড়ি, কিশোরগঞ্জ সদর), মনির হোসেন (পিতা গাজী মামুদ, পাতুয়াইর, মজুমদারপাড়া, কিশোরগঞ্জ সদর), দেবেন্দ্র বিজয় ধর ওরফে বোঁচা বাবু (পিতা সারদা ধর, নগুয়া পাঠাগার মোড়, কিশোরগঞ্জ শহর), রাধানাথ বসাক (পিতা কাশীনাথ বসাক, বত্রিশ, কিশোরগঞ্জ শহর), মো. হোসেন আলী (পিতা মো. আব্দুল খালেক, কলাপাড়া, কিশোরগঞ্জ সদর), বামাচরণ সাহা (পিতা দুর্গাচরণ সাহা, বত্রিশ, কিশোরগঞ্জ শহর), কৃষ্ণচরণ সাহা (পিতা দুর্গাচরণ সাহা, বত্রিশ, কিশোরগঞ্জ শহর), মো. আব্দুর রহমান (পিতা ইজ্জত আলী, বেপারীপাড়া, নীলগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ সদর), অনিল কুমার আচার্য (পিতা রাজকুমার আচার্য, বিন্নগাঁও, কিশোরগঞ্জ শহর), আব্দুল খালেক (পিতা মো. মহর আলী, চরকাটিহারি, হোসেনপুর, কিশোরগঞ্জ), হেলাল উদ্দিন (পিতা মিয়া হোসেন কেরানী, সাহেবের চর, হোসেনপুর, কিশোরগঞ্জ), প্রভাত চন্দ্র সাহা (পিতা রাধামোহন সাহা, হোসেনপুর থানা সংলগ্ন আড়াইবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ), বেনুলাল সাহা (পিতা প্রভাত চন্দ্র সাহা, হোসেনপুর থানা সংলগ্ন আড়াইবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ) ও মণিলাল সাহা (পিতা প্রভাত চন্দ্র সাহা, হোসেনপুর থানা সংলগ্ন আড়াইবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ) প্রমুখ। [জাহাঙ্গীর আলম জাহান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড