You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.15 | সিন্দিয়াঘাট গোডাউন অভিযান ( মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ) - সংগ্রামের নোটবুক

সিন্দিয়াঘাট গোডাউন অভিযান ( মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ)

সিন্দিয়াঘাট গোডাউন অভিযান ( মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ) পরিচালিত হয় ১৫ই নভেম্বর। এর ফলে গোডাউন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য সংগ্রহের পথ উন্মুক্ত হয়।
সিন্দিয়াঘাট গোডাউন মুকসুদপুরের একমাত্র খাদ্য গোডাউন। পাকিস্তানি আমলের শুরুতেই এটি নির্মিত হয়। নৌপথে মালামাল পরিবহনের সুযোগ থাকায় কুমার নদী ও কাটা নদী দিয়ে চট্টগ্রাম ও চালনা সমুদ্র বন্দর থেকে এখানে মালামাল আনানেয়া করা হতো। এছাড়া ঢাকা, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে এর ভালো যোগাযোগ ছিল। এ গোডাউনের নিরাপত্তার জন্য ছিল সিন্দিয়াঘাট নৌফাঁড়ি। এর পূর্বপাশে টেকেরহাট পাকসেনা ক্যাম্প ও দিগনগর ব্রিজ ক্যাম্প, পশ্চিম পাশে সিন্দিয়াঘাট নৌফাঁড়ি এবং দক্ষিণে নদী। এ কারণে গোডাউনটি মুক্তিযোদ্ধাদের আওতার বাইরে ছিল।
মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে খাদ্য সংকট দেখা দিলে ননীক্ষির হাইস্কুল ক্যাম্পের কমান্ডার শাজাহান খানের নেতৃত্বাধীন দল সিন্দিয়াঘাট গোডাউন অভিযানের পরিকল্পনা করে। এ ব্যাপারে তাঁরা পার্শ্ববর্তী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নেতৃস্থানীয় লোকদের সঙ্গে আলাপ করলে হরিরচর গ্রামের কোটু মাস্টার এগিয়ে আসেন এবং সহযোগিতা করেন। ১৫ই নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা গোডাউন লক্ষ করে গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। এতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও অন্যান্য কর্মচারীরা দৌড়ে পালায়। এরপর শাজাহান খানের দলের সিরাজুল হক, গোলজার হোসেন, আলি হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, ইদ্রিস মিয়া প্রমুখ গোডাউনে প্রবেশ করে প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য নিয়ে আসেন। তখন গোডাউনের কর্মকর্তার সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি চুক্তি হয় এবং সে অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা যখনই লোক পাঠিয়েছেন, তিনি নৌকা বোঝাই করে চাল দিয়েছেন। এমনকি বাটিকামারী ও বনগ্রাম ক্যাম্পেও এখান থেকে চাল পাঠানো হতো। এরপর থেকে এ এলাকার মুক্তিযোদ্ধদের আর খাদ্য সমস্যা ছিল না।
প্রায় একই সময়ে একটি বড় জাহাজে করে পাকসেনাদের খাদ্যের চালান আসার পথে জলিরপাড়ে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করে জাহাজের সকল খাদ্যশস্য নিয়ে নেন। এরপর আর এপথে কোনো মালামাল আসতে পারেনি। ১১ই ডিসেম্বর দিগনগর ব্রিজ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ের পর আ. মান্নান তালুকদারের নেতৃত্বে গোডাউন থেকে কয়েক হাজার বস্তা চাল নিয়ে উজানীতে বিক্রয় করা হয়। বিক্রয়লব্ধ অর্থ প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপের মধ্যে মাসোহারা হিসেবে ভাগ করে দেয়া হয়। [মো. ফিরোজ খান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড