সিন্দিয়াঘাট নৌফাঁড়ি অপারেশন (মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ)
সিন্দিয়াঘাট নৌফাঁড়ি অপারেশন (মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ) পরিচালিত হয় ১৮ই জুলাই। এতে থানার দারোগা নিহত হয় এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। সিন্দিয়াঘাট একটি নদীবন্দর। বহুপূর্বে মুকসুদপুর অঞ্চলের নৌযোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে এটি গড়ে ওঠে। বড়বড় লঞ্চ ও স্টিমার ঢাকা, খুলনা এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে এখানে ভিড়ত। এ কারণে প্রত্যন্ত এ জনপদটি একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে বিশেষ পরিচিতি পায়। এ কারণেই হয়তো ব্রিটিশ সরকার এখানকার নিরাপত্তার জন্য একটি নৌফাঁড়ি স্থাপন করে। পুলিশের দু-একজন অফিসার ও বেশকিছু সিপাহি দ্বারা এ পুলিশ ফাঁড়িটি পরিচালিত হতো। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই এ ফাঁড়িতে দালাল ও রাজাকারদের আনাগোনা চলছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট রিপোর্ট ছিল, রাজাকার আ. হান্নান মিয়া এবং ননীক্ষিরের নওয়াব আলী ও আন্যান স্বাধীনতাবিরোধীরা নৌফাঁড়িতে অবস্থান করছে। তাদের ধরার জন্য চাঁদহাট মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের কমান্ডার আজিজ মোল্লার নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধারা ফাঁড়ি আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। সে মোতাবেক পুলিশ ফাঁড়ি ও এলাকার পথঘাট সম্পর্কে অবহিত হওয়ার জন্য রেকি পার্টি পাঠানো হয়। রেকি পার্টির সদস্য ছিলেন মুনিরকান্দির মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল মাতুব্বর এবং আব্দুল হাকিম মাতুব্বর। তাঁদের তথ্য অনুযায়ী জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে এক রাতে সিন্দিয়াঘাট নৌফাঁড়ি আক্রমণ করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন কমান্ডার আজিজ মোল্লা। মুক্তিযোদ্ধারা যখন ফাঁড়ির চারদিকে অবস্থান নিয়ে সম্মুখ যুদ্ধের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তখন ফাঁড়ির দারোগা মুক্তিযোদ্ধাদের দেখে ফেলে এবং অস্ত্র হাতে নিয়ে ফায়ার করতে উদ্যত হয়। সে মুক্তিযোদ্ধা হাকিমকে লক্ষ করে গুলি ছুড়লে হাকিমও দারোগাকে লক্ষ করে ফায়ার করেন। এতে দারোগা নিহত হয় এবং হাকিম গুরুতর আহত হন। পরবর্তীতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
অপরদিকে কমান্ডার আজিজ মোল্লা অভিযানের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি স্তরে সাজিয়ে আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। তিনি যখন অন্ধকারে ঘুরে-ঘুরে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান পরিদর্শন করে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন, ঠিক তখনই দারোগা ও মুক্তিযোদ্ধা হাকিমের মধ্যে গুলি বিনিময় শুরু হয়। এমন সময় আজিজ মোল্লাকে এগিয়ে আসতে দেখে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁকে শত্রু মনে করে গুলি চালান। গুলিতে আজিজ মোল্লা আহত হয়ে চিৎকার দিলে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি বন্ধ করেন। এ অবস্থায় অপারেশন অসমাপ্ত রেখে মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হাকিম ও আহত কমান্ডার আ. আজিজ মোল্লাকে নিয়ে ফিরে আসেন। এ অপারেশনে মুঞ্জু নামে আরো একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। [মো. ফিরোজ খান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড