সিংড়া রেলব্রিজ অপারেশন (সাঘাটা, গাইবান্ধা)
সিংড়া রেলব্রিজ অপারেশন (সাঘাটা, গাইবান্ধা) পরিচালিত হয় ৬ই নভেম্বর। এতে ১৭ জন রাজাকার নিহত হয়, ৩ জন পালিয়ে যায় এবং রাজাকারদের ২০টি রাইফেল মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
বোনারপাড়া-তিস্তামুখঘাট রেলপথের মধ্যবর্তী স্থানে ভরতখালী রেলস্টেশনের দক্ষিণ পাশে পদুমশহর ইউনিয়নের মজিদের ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে সিংড়া রেলব্রিজের অবস্থান। একাত্তরে তিস্তামুখঘাট- বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাট ছিল ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে প্রবেশের একমাত্র রেলরুট। তাই সিংড়া রেলব্রিজটি পাকবাহিনীর নিকট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ ব্রিজের নিরাপত্তার জন্য তারা ২০ জন সশস্ত্র রাজাকার নিয়োজিত করেছিল। তারা ব্রিজ দিয়ে চলাচলকারী পথচারীদের মারধর করত এবং তাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা ও জিনিসপত্র কেড়ে নিত। এছাড়া তারা ব্রিজের আশপাশের বাড়িঘর থেকে জোরপূর্বক চাল- ডাল, হাস-মুরগি, গরু-খাসি ইত্যাদি নিয়ে আসত। কেউ আপত্তি করলে তাকে ক্যাম্পে এনে নির্যাতন করাসহ মেরে ফেলার হুমকি দিত। ব্রিজ এলাকার মানুষ রাজাকারদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল। তাদের অত্যাচারের খবর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে প্রায়ই আসত। রেলব্রিজে নিয়োজিত রাজাকারদের তাড়াতে পারলে এলাকার মানুষ তাদের অত্যাচার থেকে রেহাই পাবে। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতারও নিরসন হবে। এজন্য রোস্তম কোম্পানি- ব্রিজটি আক্রমণের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কোম্পানির যোদ্ধারা ৪ঠা নভেম্বর গলনারচরের গোপন আস্তানা থেকে মান্দুরা গ্রামে এসে গোপন আস্তানা গাড়েন এবং রাত্রিবেলা ব্রিজ এলাকা রেকি করেন। ৬ই নভেম্বর রাত প্রথম প্রহরে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩টি দলে বিভক্ত করে অভিযান সম্পর্কে বিস্তারিত ব্রিফিং দিয়ে ব্রিজের কাছে আনা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে রাজাকারদের ক্যাম্প ও ডিউটি পোস্টের ওপর গ্রেনেড চার্জ ও গুলি ছোড়া শুরু করেন। প্রথমে রাজাকাররা কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ৩ জন রাজাকার রাইফেল ও গুলি ফেলে ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পানিতে পড়ে পালিয়ে যায়। অপর ১৭ জন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প ও বাংকারসহ আশেপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ২০টি রাইফেল ও গুলি হস্তগত করে গোপন আস্তানায় ফিরে যান। নিহত ১৭ জন রাজাকারের লাশ বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। একদিন পর বোনারপাড়া থেকে পাকসেনারা বিশেষ ট্রেনে করে এসে লাশগুলো বোনারপাড়া ক্যাম্পে নিয়ে যায় এবং স্টেশন ইয়ার্ডের উত্তর প্রান্তের পশ্চিম পার্শ্বে দুই লাইনের মাঝে বিরাট গর্ত করে পুতে রাখে। কোনোরূপ ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই অভিযান শেষ করতে পারায় মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বৃদ্ধি পায়। [গৌতম চন্দ্ৰ মোদক]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড