সিংসাড়া গণহত্যা (আত্রাই, নওগাঁ)
সিংসাড়া গণহত্যা (আত্রাই, নওগাঁ) সংঘটিত হয় ২৬শে মে। এতে ২৯ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
আত্রাই উপজেলার সিংসাড়া গ্রামটি রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা। এ গ্রামের ১৭ জন যুবক মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ঐ গ্রামের মুজাহিদ জান বক্সের নিকট স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ নেয়। মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে এলাকার গ্রামগুলোতে চুরি-ডাকাতি বেড়ে যায় এবং পার্শ্ববর্তী বারুইপাড়া গ্রামের কার্তিক সরকারের বাড়িতে একদল ডাকাত ডাকাতি করে। পরবর্তীতে সিংসাড়া গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের যুবকসহ আশপাশের গ্রামের মানুষ এই ডাকাতদের ধরে এনে গ্রাম্য শালিসের মাধ্যমে বেদম প্রহার করে। ফলে ৪ জন ডাকাত মারা যায়। ডাকাতদের আত্মীয় ক্যাশবপাড়া গ্রামের রাজাকার দবিরউদ্দিন সোনার, ব্রজপুর গ্রামের মোজাম্মেল খাঁ ও আব্বাস খাঁ ক্ষিপ্ত হয়ে দাঁড়িয়াগাথী গ্রামের কুখ্যাত রাজাকার সোবহান চৌধুরীর নির্দেশে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আত্রাইঘাট পুরাতন রেলস্টেশনের পাকবাহিনীর ক্যাম্পে গিয়ে খবর দেয় যে, সিংসাড়া গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এ খবর পেয়ে পাকসেনারা ২৬শে মে গভীর রাতে সিংসাড়া গ্রাম আক্রমণ করে। তারা গোটা গ্রাম ঘিরে ফেলে এবং ফাঁকা গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। প্রথমে তারা মকবুল চেয়ারম্যানের বাড়ির দরজা ভাঙ্গে। এ-সময় বাড়ির ভেতর থেকে মজিবর রহমান (ছাত্র) বন্দুক দ্বারা গুলি করে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। বন্দুকের গুলিতে এক পাকিস্তানি আর্মি অফিসার আহত হয়। পরক্ষণেই মজিবর রহমানকে আটক করে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। এরপর প্রত্যেক বাড়ি থেকে যুবকদের ধরে এনে গ্রামের মকবুল চেয়ারম্যানের বাড়ির আঙ্গিনায় হাত এবং চোখ বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। ১০ম শ্রৌণর ছাত্র এম এ মহিতকে তারা নির্যাতন করে আর জানতে চায় মকবুল চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধারা এবং ‘মালাউনরা’ (হিন্দু) কোথায় আছে। মহিত বলতে অস্বীকৃতি জানায়। মহিতকে তারা কালেমা পড়তে বলে এবং সে মুসলমান কিনা তা যাচাই করতে লুঙ্গি খুলে দেখে। নির্যাতনের এক পর্যায়ে মহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে এবং গুলি করে সেসহ মোট ২৯ জনকে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে লাশগুলো ৩-৪ জন করে গণকবর দেয়া হয়। এ-সময় বেশ কিছু যুবতী নারীকে ধর্ষণ করা হয়। এই ২৯ জন শহীদের মধ্যে ছিলেন ন্যাশনাল ব্যংক আত্রাই শাখার ম্যানেজার মোহাম্মদ হানিফ। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তিনি ব্যাংকের প্রায় ৩০ হাজার টাকা সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের সদস্য আবুল হাশেমের মাধ্যমে সংগ্রাম পরিষদের আরেক সদস্য ওহিদুর রহমানের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। জীবন বাঁচানোর জন্য মোহাম্মদ হানিফ তাঁর স্ত্রী, কন্যা, পুত্রসহ সিংসাড়া গ্রামের মকবুল চেয়ারম্যানের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। [ফরিদুল আলম পিন্টু]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড