সিঙ্গারবিল যুদ্ধ (বিজয়নগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
সিঙ্গারবিল যুদ্ধ (বিজয়নগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) পরিচালিত হয় ৩০শে নভেম্বর। এ সময় থেকে আখাউড়া সীমান্ত এলাকায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়। ‘এস ফোর্স’-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কে এম সফিউল্লার তত্ত্বাবধানে এ-যুদ্ধ চলে। যুদ্ধে ২০ জন পাকসেনা নিহত এবং একজন বন্দি হয়। পাকবাহিনীর প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। অন্যদিকে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও কয়েকজন আহত হন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৯শে নভেম্বর মেজর মইনুল হোসেন চৌধুরী দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের এক ব্যাটালিয়নের মতো সৈন্য নিয়ে আখাউড়ার উত্তর দিকে মেরাসানী, আজমপুর, রাজাপুর ও সিঙ্গারবিল এলাকা আক্রমণের প্রস্তুতি নেন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল সফিউল্লা তাঁর অধীন দ্বিতীয় ও একাদশ বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং সেক্টর ট্রুপস-এর দুটি কোম্পানি এসব এলাকায় নিয়োগ করেন। মেজর নাসিমের নেতৃত্বে একাদশ বেঙ্গল রেজিমেন্ট সিলেট থেকে অগ্রসরমাণ পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য অবস্থান নেয়। ৩০েেশ নভেম্বরের মধ্যেই তিনি মুকুন্দপুরসহ অন্যান্য এলাকা নিজ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। মেজর মতিনের নেতৃত্বে সেক্টর ট্রুপস-এর দুটি কোম্পানি আগরতলা বিমান বন্দরের উত্তর পশ্চিমাংশে পরিখা খনন করে অবস্থান নেয়। ৩০শে নভেম্বর রাত ১টায় মুক্তিযোদ্ধারা দুদিক থেকে পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালান। পাকবাহিনীও পাল্টা আক্রমণ চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে সিঙ্গারবিল রেলস্টেশন ও সিঙ্গারবিল ঘাঁটি এলাকা এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য এলাকা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। ১লা ডিসেম্বর পুনরায় যুদ্ধ হয়। এতে ২০ জন পাকসেনা নিহত এবং একজন বন্দি হয়। পাকবাহিনীর প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা সিপাহি ইয়াছিন খাঁ শহীদ (তাঁকে সিঙ্গারবিলে সমাধিস্ত করা হয়) এবং সিপাহি আবু জাফর, হুমায়ুন কবির ও আবদুল লতিফ এবং হাবিলদার আকতার হোসেন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী ও নবীউল্লাহসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। [মানিক রতন শর্মা]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড