You dont have javascript enabled! Please enable it! স্থানীয় মুক্তিবাহিনী 'সিদ্দিক বাহিনী' (ভোলা) - সংগ্রামের নোটবুক

স্থানীয় মুক্তিবাহিনী ‘সিদ্দিক বাহিনী’ (ভোলা)

সিদ্দিক বাহিনী (ভোলা) একটি স্থানীয় মুক্তিবাহিনী। এর প্রধান ছিলেন ল্যান্স নায়েক সিদ্দিকুর রহমান।
১৯৭০ সালের প্রলংয়কর ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পূর্ব বাংলার উপকূলীয় নিজ অঞ্চল (বর্তমান দ্বীপ জেলা) ভোলায় ছুটিতে এসেছিলেন বেঙ্গল রেজিমেন্টের ল্যান্স নায়েক সিদ্দিকুর রহমান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরো কয়েকজন সেনাসদস্য। দেশের দ্রুত অবনতিশীল পরিস্থিতিতে তিনি সেনাবাহিনীর চাকরিতে ফিরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ৭১-এর মার্চ মাসে ভোলায় সংগ্রাম কমিটি গঠিত হওয়ার পর তিনি কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ২৭শে মার্চ ভোলা ট্রেজারি থেকে বেশকিছু অস্ত্র সংগ্রহ করা হলে সিদ্দিকুর রহমান ও তাঁর সঙ্গীরা তা থেকে কয়েকটি ৩০৩ রাইফেলস পান। এগুলো দিয়ে সিদ্দিক বাহিনীর যাত্রা শুরু। ভোলার দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিনে এ বাহিনীর বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ শিবির চালু হয়। দেউলা হাজী বাড়িতে ভোলার মুক্তিযোদ্ধাদের সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়। সিদ্দিকুর রহমানের প্রচেষ্টায় সিরাজ সিকদারের গ্রুপের সঙ্গে যৌথভাবে ওসমানগঞ্জের যুদ্ধে সাফল্য এ বাহিনীর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করে। এ-যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় ও সিদ্দিক বাহিনী কর্তৃক তাদের অস্ত্রশস্ত্র আটক ভোলায় ব্যাপক আলোড়ন তোলে। এরপর দেউলার যুদ্ধে (১৬ই অক্টোবর) সিদ্দিক বাহিনীর জয় এ বাহিনীর কার্যক্রমকে আরো বেগবান করে তোলে। বাহিনী প্রধান সিদ্দিকুর রহমান ভোলায় হাইকমান্ড হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন (দ্রষ্টব্য হাইকমান্ড সিদ্দিকুর রহমান)।
পুরো ভোলা ছিল সিদ্দিক বাহিনীর অপারেশন এলাকা। সিদ্দিক বাহিনীর যোদ্ধারা ছোট-বড় কমপক্ষে ১৫টি সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, যার মধ্যে ছিল ওসমানগঞ্জ যুদ্ধ (চরফ্যাশন), দেউলা যুদ্ধ (বোরহানউদ্দিন), বাংলা বাজার যুদ্ধ (ভোলা) ও বোরহানউদ্দিন যুদ্ধ। এ বাহিনীর উল্লেখযোগ্য মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- আচমত মিয়া (বোরহানউদ্দিন), মাকসুদুর রহমান, হাবিলদার শামসুল হক (হাইকমান্ড সিদ্দিকুর রহমানের ভাই), মুচুয়া সিদ্দিক (বাংলাবাজার), হাবিলদার গিয়াস উদ্দিন, সুবেদার শানু, মো. জিয়াউল হক, কমান্ডার শহিদুল আলম, অনারারি ক্যাপ্টেন মাহে আলম কুট্টি (লালমোহন), ওসমানগঞ্জের হাবিলদার আবদুল খালেক, সুবেদার শাহে আলম, হাবিলদার ইসমাইল, হাবিলদার সামছুল হুদা, হাবিলদার আবদুর রশিদ, ইপিআর সদস্য আ. মোতালেব, ফিরোজ মিয়া, মিজানুর রহমান (ভোলা), সামছুদ্দিন মিয়া (দেউলা), আলী হোসেন (আমিনাবাদ), মফিজুল ইসলাম (মাদ্রাজ), নুরুল ইসলাম বাবুল (জিন্নাগড়), মাওলানা আবদুল হাদি প্রমুখ।
মূলত শত্রুর কাছ থেকে জিতে নেয়া অস্ত্রই ছিল এ বাহিনীর অস্ত্রের উৎস। সেনাবাহিনীর প্রাক্তন ও পক্ষ ত্যাগ করে আসা সদস্য, ইপিআর, পুলিশ, আনসার, ছাত্র ও সাধারণ জনতা ছিল সিদ্দিক বাহিনীর সদস্য। তবে অক্টোবর মাসের শেষদিকে ভোলার সর্বশ্রেণির মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্ব সিদ্দিকুর রহমানের হাতে চলে আসে। এ-সময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল নেতার সঙ্গে পরামর্শ করে ভোলার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করা হয়। অবশেষে ১০ই ডিসেম্বর ভোলা শত্রুমুক্ত হয়। এ ক্ষেত্রে সিদ্দিক বাহিনীর ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। [মনিরুজ্জামান শাহীন ও মিথুন সাহা]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড