You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.06 | সাহাগোলা রেলওয়ে ব্রিজ অপারেশন (আত্রাই, নওগাঁ) - সংগ্রামের নোটবুক

সাহাগোলা রেলওয়ে ব্রিজ অপারেশন (আত্রাই, নওগাঁ)

সাহাগোলা রেলওয়ে ব্রিজ অপারেশন (আত্রাই, নওগাঁ) পরিচালিত হয় ৬ই অক্টোবর। এতে ব্রিজটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।
পাকবাহিনীর চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টির জন্য মুক্তিযোদ্ধারা আত্রাইয়ের সাহাগোলা রেলওয়ে ব্রিজটি ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৬ই অক্টোবর স্থানীয় বামপন্থী মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারত থেকে ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালনা করেন। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে ছিলেন ওহিদুর রহমান এবং ভারত থেকে ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে ছিলেন মখলেছুর রহমান রাজা ও আব্দুল মালেক। ঘটনার দিন সন্ধ্যা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা সাহাগোলা রেলস্টেশন থেকে প্রায় ২/৩ কিলোমিটার পশ্চিমে শ্রীরামপুর ও তারাটিয়া গ্রামে আশ্রয় নেন। ভারত থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা তারাটিয়া গ্রামের শেখ মেহের আলীর একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে বিস্ফোরক দ্রব্য তৈরি করেন। ব্রিজ ধ্বংস করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকে বাছাই করে ১২-১৩ জনের একটি দল গঠন করা হয়। এ দলটি রাত প্রায় ১১টার দিকে ব্রিজে পাহরারত ৭ জন রাজাকারকে আত্মসমর্পণ করায় এবং ব্রিজের উত্তর পাশের গার্ডারের গা ঘেঁষে ৪-৫ ফিট গর্ত খুঁড়ে এক্সপ্লোসিভ বসিয়ে মাটিচাপা দিয়ে ডেটোনেটর সেট করে। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে এক্সপ্লোসিভের বিস্ফোরণ ঘটান। ফলে বিকট শব্দে ব্রিজটি ধ্বংস হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা নির্বিঘ্নে অক্ষত অবস্থায় নিরাপদ দুরত্বে চলে যান।
ব্রিজ ধ্বংসের এই বিকট আওয়াজ শুনে কিছুক্ষণের মধ্যেই আত্রাইঘাট স্টেশন ক্যাম্প থেকে পাকবাহিনীর একটি ট্রেন রওনা দেয় চকের ব্রিজের উদ্দেশ্যে। তাদের ধারণা ছিল, সাহাগোলা ব্রিজের পরে চকের ব্রিজে কোনো ঘটনা ঘটেছে। ট্রেনটির সামনের দুটি বগিতে পাকবাহিনী অস্ত্র তাক করে যুদ্ধের ভঙ্গিমায় ছিল। এরপর ইঞ্জিন, ইঞ্জিনের পর একটি গার্ডভ্যান, শেষে একটি সৈন্য ভর্তি বগি। ট্রেনটি ৩০ মিনিটের মধ্যেই সাহাগোলা ব্রিজের ওপর উঠতেই হুমড়ি খেয়ে নিচে অথৈ পানিতে পড়ে যায় এবং অসংখ্য পাকসেনার সলিল সমাধি ঘটে। শেষের সৈন্য ভর্তি বগিটি অক্ষত থাকায় তারা এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ করে।
বহুসংখ্যক পাকসেনা মারা যাওয়ায় পরদিন হানিফ মণ্ডল (পিতা নাসের মন্ডল, বেড়াহাসন) নামে এক আধাপাগলা যুবক খুশিতে পাকবাহিনীর সামনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে থাকে। এতে পাকবাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারতে উদ্যত হলে হানিফ ক্ষিপ্ত হয়ে দুজন পাকসেনাকে চেপে ধরে পাশের পুকুরের পানির মধ্যে নেমে পড়ে। দুই পাকসেনা হানিফের কবল থেকে কোনো মতে উঠে এসে তাকে গুলি করে হত্যা করে। হানিফের লাশ কেউ দাফন করতে সাহস না করায় লাশটি বিলের পানিতে ভেসে যায়। হানিফের সাহসী ভূমিকা এলাকার লোকজন আজো শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। [ফরিদুল আলম পিন্টু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড