সিও অফিস বধ্যভূমি (সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা)
সিও অফিস বধ্যভূমি (সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা) গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এখানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা ৫ শতাধিক মানুষকে হত্যা করে।
গাইবান্ধা মহকুমার সুন্দরগঞ্জ থানার সার্কেল অফিসার (সিও) ডেভেলপমেন্টের কার্যালয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মূল ক্যাম্প ও নির্যাতনকেন্দ্র ছিল। এখানে প্রায় প্রতিরাতে পাকিস্তানি বাহিনী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করত। তাদের সহায়তা করত শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকাররা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিভিন্ন সময়ে এসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। অক্টোবর মাসে পার্শ্ববর্তী সদর উপজেলার দারিয়াপুর ব্রিজ মুক্তিযোদ্ধারা ধ্বংস করলে জামায়াতে ইসলামী- প্রভাবিত সুন্দরগঞ্জ এলাকায় পাকবাহিনী ও রাজাকারদের নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এ ব্রিজ ধ্বংসে যুক্ত থাকায় গাইবান্ধা কলেজের ডিগ্রির ছাত্র বয়েজ উদ্দিনকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে প্রচণ্ড নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। এরপর থানা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বারের চক্রান্তে ক্যাম্প কমান্ডার লে. আফজালের নির্দেশে একটি সভা অনুষ্ঠানের কথা বলে সুন্দরগঞ্জ থানার বিভিন্ন ইউনিয়নের ১৮ জন চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে ক্যাম্পে ডেকে আনা হয়। তাদের মধ্যে ১৩ জনকে রাতে এক সঙ্গে পাকিস্তানি সৈন্যরা হত্যা করে। এরকম বিভিন্ন সময়ে সুন্দরগঞ্জের ৫ শতাধিক মানুষকে এ ক্যাম্পে হত্যা করা হয়। নিহতদের পার্শ্ববর্তী গোয়ালের ঘাট বধ্যভূমিতে মাটিচাপা দেয়া হয়।
নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় জানা গেছে, তারা হলেন- ছইমউদ্দিন মিয়া (পিতা কছিমউদ্দিন, চেয়ারম্যান, ১০নং শান্তিরাম ইউনিয়ন), মুনছুর আলী সরকার (পিতা আব্দুল হক ব্যাপারি, মেম্বার, ১০নং শান্তিরাম ইউনিয়ন), লুৎফর রহমান প্রামাণিক ওরফে বাদশা মিয়া (পিতা ফয়জার রহমান প্রামাণিক, মেম্বার, ১০নং শান্তিরাম ইউনিয়ন), পঁচা মামুদ ব্যাপারি (পিতা ময়েন উদ্দিন, মেম্বার, ১০নং শান্তিরাম ইউনিয়ন), তায়েজউদ্দিন আহমেদ (পিতা সহর ব্যাপারি, চেয়ারম্যান, ১৩নং শ্রীপুর ইউনিয়ন), আকবর আলী সরকার (পিতা ইব্রাহীম আলী, মেম্বার, ১৩নং শ্রীপুর ইউনিয়ন), মমতাজ আলী সরকার (পিতা দবির উদ্দিন সরকার, মেম্বার, ১৩নং শ্রীপুর ইউনিয়ন), মুসলিম আলী সরকার (মেম্বার, ১৩নং শ্রীপুর ইউনিয়ন), নবীবক্স সরকার (পিতা ইব্রাহীম আলী ব্যাপারি, চেয়ারম্যান, ৯নং ছাপরহাটি ইউনিয়ন), আফছার আলী খান (পিতা ভুতা খান, মেম্বার, ৯নং ছাপরহাটি ইউনিয়ন), বায়েজ উদ্দিন সরকার (পিতা বাচ্চা শেখ, মেম্বার, ৯নং ছাপরহাটি ইউনিয়ন), গিয়াস উদ্দিন সরকার (পিতা মামুদ সরকার, মেম্বার, ৯নং ছাপরহাটি ইউনিয়ন), আব্দুল জলিল সরকার (পিতা তছর উদ্দিন মিয়া, মেম্বার, রামজীবন ইউনিয়ন), বয়েজ উদ্দিন (পিতা আলমউদ্দিন সরকার, পাঁচগাছি), আজিমউদ্দিন ব্যাপারি (পিতা গোছানউদ্দিন ব্যাপারি, গ্রাম ফতেহ্ খাঁ), কাচুয়া শেখ (পিতা বছির উদ্দিন, পরান), নেহাজ উদ্দিন (পিতা বনিজ উদ্দিন, পরান) ও নেপাসু সর্দার (গ্রাম ফতেহ্ খাঁ)। [জহুরুল কাইয়ুম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড