You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.24 | সারোয়াতলী যুদ্ধ (বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম) - সংগ্রামের নোটবুক

সারোয়াতলী যুদ্ধ (বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম)

সারোয়াতলী যুদ্ধ (বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম) সংঘটিত হয় ২৪শে আগস্ট। এতে একজন রাজাকার নিহত হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়।
চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার অন্তর্ভুক্ত একটি ইউনিয়ন সারোয়াতলী। ১৯৭১ সালে এ ইউনিয়নের নাম ছিল কানুরখীল। বর্তমান নাম পশ্চিম সারোয়াতলী। ইউনিয়নটি উপজেলা থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এ ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথ চলে গেছে, যা ইউনিয়ন ও গ্রামকে বিভক্ত করেছে। এ রেলপথের বেঙ্গুরা রাইখালী নামক খালের ওপর ছোট একটি রেলসেতু আছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১০ জন রাজাকার ২৪ ঘণ্টা এ সেতু পাহারা দিত। এ-সময় তারা সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার চালাত। মুক্তিকামী মানুষের ঘরবাড়িতে আগুল লাগাত। সাধারণ লোকজনকে ধরে এনে সেতুর নিচে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যার পর লাশ পানিতে ফেলে দিত।
মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে আসার আগে সুজিত নাগ, আ হ ম নাছির উদ্দিন চৌধুরী, প্রদ্যুৎ পাল ও সেনাবাহিনীর সদস্য মো. বারিকের উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে একটি সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ গড়ে ওঠে। এ গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ছিল ১৪ জন। তাঁরা সামান্য প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ২৪শে আগস্ট সকাল ১১টায় মুক্তিযোদ্ধারা সেতু পাহারারত রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের এ পরিকল্পনা ও অবস্থান জেনে যায়। বেঙ্গুরা ক্যাম্প ও রাইখালী ব্রিজ ক্যাম্পের রাজাকাররা বোয়ালখালী শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মুজাফফর মিয়ার বাড়িতে জড়ো হয়। সেখান থেকে রাজাকার কমান্ডার শাহজাহানের নেতৃত্বে ৫০ জন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়কেন্দ্র কানুরখীল আক্রমণের জন্য অগ্রসর হয়। পাল্টা আক্রমণ করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতি ছিল না। এ অবস্থায় তারা জনৈক সৈয়দুর রহমানের বাড়িতে আশ্রয় নেন। মুক্তিযোদ্ধাদের এ অবস্থানের খবরও রাজাকাররা জেনে যায়।
রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের দিকে এগুতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারদের মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুতি নেন। তাঁরা পার্শ্ববর্তী পুকুরপাড় আড়াল করে এম্বুশ নেন। উভয় পক্ষ মুখোমুখী অবস্থান গ্রহণ করে। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। এক ঘণ্টা ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড গোলাগুলি হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে টিকতে না পেরে রাজাকাররা তাদের অবস্থান ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। মুক্তিযোদ্ধারাও তাদের পেছন দিক থেকে গুলি ছুড়তে-ছুড়তে অগ্রসর হতে থাকেন। এ অপারেশনে রাজাকার সাদেক নিহত হয়। রাজাকাররা যেন আবার সংঘবদ্ধ হয়ে পাল্টা আক্রমণ করতে না পারে সেজন্য মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের অবস্থান পরিবর্তন করে নিকটস্থ কানুরদিঘিতে অবস্থান নেন। পরবর্তীতে তাঁরা সেখান থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে করলডেঙ্গা পাহাড়ে চলে যান। আ হ ম নাসির উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রদ্যুৎ কুমার পাল, দুলাল, মনসুর আহম্মদ সিদ্দীকি, সুজিত নাগ, এস এম সেলিম ও আবদুল মোতালেব ওরফে মো. বারেক এ অপারেশনে অংশ নেন। সারোয়াতলীতে রাজাকারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। [উদয়ন নাগ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড