কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী থানার মুক্তাঞ্চল থেকে প্রকাশিত হাতে লেখা পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক অগ্রদূত’ (রৌমারী, কুড়িগ্রাম)
সাপ্তাহিক অগ্রদূত (রৌমারী, কুড়িগ্রাম) মুক্তিযুদ্ধকালে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী থানার মুক্তাঞ্চল থেকে প্রকাশিত হাতে লেখা একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। ৩১শে আগস্ট থেকে ৮ই ডিসেম্বর পর্যন্ত এ পত্রিকার ১৫টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এতে রণাঙ্গনের খবর, দেশী-বিদেশী সংবাদ, সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় ও সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার লেখা ছাপা হতো। এ পত্রিকা দেশের ভেতরে ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো। মুক্তিযোদ্ধাদের ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষকে এ পত্রিকা অনুপ্রাণিত করে।
রৌমারী মুক্তাঞ্চলে লে. এস আই এম নুরুন্নবী খান ২রা আগস্ট থেকে সিভিল প্রশাসন চালুর উদ্যোগ নেন। ১০ই আগস্টের মধ্যে সেখানে প্রশাসন চালু হয়। এরপর ২২শে আগস্ট এ মুক্তাঞ্চল পরিদর্শন করেন মুজিবনগর সরকার-এর অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী। তাঁর অব্যবহিত পরে উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও এ মুক্তাঞ্চল পরিদর্শনে আসেন।
রৌমারী সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ছিলেন সি জি জামান স্কুলের প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক। তিনি সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে সকল দায়িত্ব সম্পাদনের পাশাপাশি রণাঙ্গনের খবর প্রকাশ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করার জন্য অগ্রদূত পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেন। অগ্রদূত ছিল হাতে লেখা নিয়মিত সাপ্তাহিক পত্রিকা। এ পত্রিকার প্রতিটি সংখ্যা স্টেনসিল পেপারে হাতে লিখে সাইক্লোস্টাইল করে প্রকাশ পাঠানো হতো। ভারতের শরণার্থী শিবির-এ ও এর প্রচার ছিল।
সি জি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ ছিল অগ্রদূত-এর প্রধান কার্যালয়। স্কুলের সাইক্লোস্টাইল মেশিনটি ছিল পত্রিকার মুদ্রণযন্ত্র। পত্রিকার প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ৩১শে আগস্ট ১৯৭১ মঙ্গলবার। এর সম্পাদক ছিলেন আজিজুল হক। সহ-সম্পাদক ছিলেন মতিয়ুর রহমান, মুদ্রণ ও প্রকাশনার দায়িত্বে ছিলেন মোহাম্মদ আলী, ব্যবস্থাপনায় ছিলেন সাদাকত হোসেন ছক্কু এমএনএ ও নুরল ইসলাম এমপিএ, প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন জে রহমান। ব্যবস্থাপক দুজনের নাম প্রথম ও দ্বিতীয় সংখ্যার শেষ পৃষ্ঠায় উল্লেখ থাকলেও ৩য় সংখ্যা থেকে প্রথম পাতায় ব্যবস্থাপক হিসেবে সাদাকত হোসেন ছক্কু মিয়া এমএনএ ও নুরল ইসলাম এমপিএ-এর নাম যুক্ত করা হয়। পত্রিকার প্রথম সংখ্যাটি মঙ্গলবার প্রকাশিত হলেও এরপর প্রতিটি সংখ্যা বুধবার প্রকাশিত হয়। ৩১শে আগস্ট থেকে ৮ই ডিসেম্বর পর্যন্ত অগ্রদূত-এর মোট ১৫টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এর কলেবর ছিল এ-ফোর সাইজের ৪ পৃষ্ঠা।
পত্রিকাটিতে ৬ ও ১১ নম্বর সেক্টরসহ বিভিন্ন রণাঙ্গনের খবর, দেশী ও আন্তর্জাতিক খবর, সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় ইত্যাদি থাকত। পত্রিকায় বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গেরিলাযোদ্ধা হারুন হাবীবসহ অনেকের লেখা ছাপা হয়। হারুন হাবীব পত্রিকার সংবাদদাতা হিসেবেও কাজ করেন। নিয়মিত পত্রিকার আদলে সাহিত্যপাতা না থাকলেও পত্রিকাটির প্রতিটি সংখ্যায় ‘কবির আসর’ নামে একটি অংশ থাকত। এ অংশে কবিতাও থাকত। হারুন হাবীব নিজে পত্রিকায় কবিতা লিখেছেন।
অগ্রদূত জেনারেল এম এ জি ওসমানী-র প্রশংসা লাভ করে। তিনি এর প্রতিটি সংখ্যা পাওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। পত্রিকাটির প্রকাশনা ও কপি সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য তাঁর পক্ষে জনসংযোগ অফিসার নজরুল ইসলাম সম্পাদক আজিজুল হক বরাবর একটি প্রশংসাসূচক পত্র প্রেরণ করেন।
এ পত্রিকার কয়েকটি সংখ্যার সংবাদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র-এর ৬ খ-ের ৩৫২ থেকে ৩৫৭ পাতায় সংযুক্ত হয়েছে৷ দুষ্প্রাপ্য পত্রিকাটির সকল সংখ্যা উত্তরবঙ্গ জাদুঘর কুড়িগ্রামে সংরক্ষিত আছে। [এস এম আব্রাহাম লিংকন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড