You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.05 | সাবদালপুর যুদ্ধ (কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ) - সংগ্রামের নোটবুক

সাবদালপুর যুদ্ধ (কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ)

সাবদালপুর যুদ্ধ (কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ) সংঘটিত হয় দুবার – জুলাই মাসের শেষদিকে এবং ৫ই নভেম্বর। প্রথম যুদ্ধে ৫ জন রাজাকার বন্দি এবং তাদের ১১টি ৩০৩ রাইফেল মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। দ্বিতীয় যুদ্ধে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং ১ জন আহত হন।
জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সাবদালপুরে প্রবেশ করেন। এরপর তাঁরা রেলস্টেশনের অফিস কক্ষ পুড়িয়ে দেন এবং টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেন। এ-সময় তাঁরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিও ছোড়েন। এর ফলে তাঁদের উপস্থিতি টের পেয়ে রাজাকাররা পরের দিনই সাবদালপুরে ক্যাম্প স্থাপন করে এবং স্থানীয় জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর অত্যাচার শুরু করে। এ খবর পেয়ে কয়েকদিনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে ৫ জনকে বন্দি এবং ১১টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল উদ্ধার করেন। এ-যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন শেখ মো. জামাল উদ্দিন।
৪ঠা নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা ও মুজিব বাহিনীর কমান্ডের সমন্বয়ে উপজেলার ঘাগা গ্রামে এক সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, সাবদালপুর পাকমুজাহিদ ক্যাম্প আক্রমণ করা হবে। ৫ই নভেম্বর সকাল ৮-৯ টার দিকে মো. কায়দার রহমান মুজাহিদ- ক্যাম্প রেকি করেন। এরপর মো. কায়দার রহমান ঘাগা গ্রামে ফিরে যান এবং মুজাহিদ ক্যাম্পের নকশা কমান্ডারের নিকট হস্তান্তর করেন। অতঃপর মুক্তিযোদ্ধারা ৫ই নভেম্বর মধ্যরাতে কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে সাবদালপুর ক্যাম্পের চারদিকে অবস্থান নেন। এর মধ্যে দুটি গ্রুপ ছিল আক্রমণ ভাগের দায়িত্বে। এদের মধ্যে একটি গ্রুপ ক্যাম্প থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরে মো. কায়দার রহমানের বাড়িতে অবস্থান নেয়। অপর গ্রুপটি অবস্থান নেয় পার্শ্ববর্তী নওয়াব আলী খানের বাড়িতে। এ অপারেশনের নেতৃত্ব দেন এফএফ কমান্ডার শেখ জামাল উদ্দিন। সিদ্ধান্ত ছিল ভোরে ঘুম থেকে উঠে মুজাহিদরা যখন পিটি-প্যারেডে অংশ নেবে, তখন আক্রমণ পরিচালনা করা হবে। পিটির জায়গা ছিল নওয়াব আলী খানের বাড়ির সামনে। মুজাহিদ ক্যাম্পের পাশে পাকিস্তানের দালাল রুস্তম মোল্লার হোটেল। ভোরে তার ছেলে হানিফ হোটেলে যাওয়ার সময় নওয়াব আলী খানের বাড়ির ছাদে এসএলআর-এর নল দেখে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান বুঝতে পারে এবং এ খবর মুজাহিদ ক্যাম্পে দেয়ার জন্য দৌড় দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা তা দেখে ফেলেন। এ অবস্থায় মো. সামসুদ্দীন আহমদ প্রথম গ্রেনেড চার্জ করেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে গুলি চালাতে থাকেন। শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। প্রথম দিকে যুদ্ধপরিস্থিতি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। মুজাহিদরা বাংকার ছেড়ে পালাতে থাকে। মো. সামসুদ্দীন আহমদ মুজাহিদদের প্রতি আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। এ-সময় মো. মফিজুর রহমান মুজাহিদদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুজাহিদরা গুলি চালালে মুক্তিযোদ্ধা মো. মফিজুর রহমানের হাতে এবং মো. আব্দুর রহমান নামে অপর এক মুক্তিযোদ্ধার পায়ে গুলি লাগে। মো. মফিজুর রহমান বেশি আহত হওয়ায় তাঁকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। তিনি পাকমুজাহিদ বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। তাঁর ওপর তারা অত্যাচার-নিপীড়ন চালায়। এক পর্যায়ে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হন। [দেব নারায়ণ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড