You dont have javascript enabled! Please enable it! স্থানীয় মুক্তিবাহিনী 'সামশুদ্দিন আহমদ গ্রুপ' (পটিয়া, চট্টগ্রাম) - সংগ্রামের নোটবুক

স্থানীয় মুক্তিবাহিনী ‘সামশুদ্দিন আহমদ গ্রুপ’ (পটিয়া, চট্টগ্রাম)

সামশুদ্দিন আহমদ গ্রুপ (পটিয়া, চট্টগ্রাম) স্থানীয় একটি মুক্তিবাহিনী। এর কমান্ডার ছিলেন সামশুদ্দিন আহমদ (পিতা মো. আবদুল মন্নান, পশ্চিম গোবিন্দারখীল, পটিয়া)।
১৯৭১ সালে সামশুদ্দিন আহমদ ছিলেন পটিয়া থানা ছাত্রলীগ-এর সাধারণ সম্পাদক ও পটিয়া সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী নিরীহ বাঙালিদের ওপর বর্বর আক্রমণ পরিচালনা করলে যুদ্ধের প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে যেতে আগ্রহী ৭০ জনের একটি দল তাঁর নেতৃত্বে পটিয়া ক্লাব মোড় থেকে ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। তাঁরা নাজিরহাট কলেজে পৌঁছলে উক্ত কলেজের অধ্যাপক শামসুল ইসলামও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। সেখান থেকে সকলে রামগড় পৌঁছলে সামশুদ্দিন আহমদ সেখানকার থানায় সকলের নাম লিপিবদ্ধ করান। অতঃপর তাঁরা মোট ১০০ জন সাবরুম পৌছেন। সেখান থেকে বিএসএফ-এর ট্রাকে করে তাঁরা বগাফা বিএসএফ ট্রেনিং সেন্টারে পৌছে ১৫ দিনের ট্রেনিং নেন। তাঁদের গেরিলা ট্রেনিং বা ‘হিট এন্ড রান’- এর আওতায় থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল, এলএমজি, এসএমজি, দুই ইঞ্চি মর্টার, গ্রেনেড প্রভৃতি পরিচালনা এবং ক্রলিং-এর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ট্রেনিং শেষে ১০০ জনের দলটিকে রামগড় স্কুল মাঠে এনে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। অধ্যাপক শামসুল ইসলামকে ৩৪ জন নিয়ে গঠিত গ্রুপের কমান্ডার নিযুক্ত করা হয় এবং সামশুদ্দিন আহমদকে এ গ্রুপের অন্যতম সদস্য করা হয়। এ গ্রুপকে ৩৪টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল, ১৭০টি গ্রেনেড ও ১০২০টি গুলি প্রদান করা হয়। রাইফেলগুলো ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত। প্রত্যেকটি রাইফেলের গায়ে লেখা ছিল ‘Second World War’। কিন্তু গ্রুপটি চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে আসার পর ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তবে সামশুদ্দিন আহমদ এ গ্রুপের কতিপয় সদস্যকে পুনরায় সংগঠিত করে এবং স্থানীয় যোদ্ধাদের নিয়ে একটি গ্রুপ গড়ে তোলেন, যা পরবর্তীতে সামশুদ্দিন আহমদ গ্রুপ নামে পরিচিতি লাভ করে। সামশুদ্দিন আহমদ গ্রুপের উল্লেখযোগ্য সদস্যরা হলেন গাজী আবদুস সবুর (পিতা গাজী আলী চান সওদাগর, পটিয়া সদর), আবুল বশর (পিতা আবুল খায়ের, করল, পটিয়া), আবুল কালাম (পিতা আবদুস সালাম, পটিয়া সদর), কবির আহমদ (পটিয়া সদর), আহমদ ছফা চৌধুরী (উত্তর গোবিন্দারখীল, সেনাসদস্য), আবু জাফর চৌধুরী (পিতা নজির আহমদ চৌধুরী, উত্তর গোবিন্দারখীল, পটিয়া), জহুরুল হক চৌধুরী (উত্তর গোবিন্দারখীল, পটিয়া), আবদুস সোবহান মিস্ত্রি (উত্তর গোবিন্দারখীল, পটিয়া), আবদুল লতিফ ভেট্টা (পিতা আবদুল মজিদ, পটিয়া) প্রমুখ।
সামশুদ্দিন আহমদ গ্রুপ মহিউল আলম বাহিনী, করিম বাহিনী ও সুবেদার মেজর টি এম আলী বাহিনীর সঙ্গে অনেকগুলো যৌথ অপারেশনে অংশ নেয়। এক্ষেত্রে জিরি মাদ্রাসা মুজাহিদ ক্যাম্প অপারেশন, খানমোহনা রেল স্টেশন রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন, লাম্বুরহাট রাজাকার অপারেশন উল্লেখযোগ্য। এ গ্রুপের একক অপারেশনের মধ্যে কেলিশহর রাজাকার অপারেশন, পটিয়া তহশিল অফিস অপারেশন, চলমান মেট্রিক পরীক্ষা বানচালের উদ্দেশ্যে পটিয়া এ এস রাহাত আলী হাই স্কুলে গ্রেনেড চার্জ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কেলিশহর অপারেশন পরিচালিত হয় ২রা অক্টোবর। এতে রাজাকার মনুমিয়া নিহত হয় “এবং সামশুদ্দিন আহমদ গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধা গাজী আবদুস সবুর শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধা সবুর তখন পটিয়া কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। তাঁর কাফনের কাপড় কেনার জন্য কেলিশহর ভট্টাচার্য হাটে কোনো দোকান খোলা ছিল না। ফলে কমান্ডার সামশুদ্দিন আহমদ এক চিকিৎসকের বাড়ি থেকে একটি লুঙ্গি এনে নিজে তা পরিধান করে তাঁর পরনের সাদা লুঙ্গিটি দিয়ে সবুরের কাফনের কাপড় বানান। কেলিশহর ভট্টাচার্য হাটের পূর্বপাশে পাহাড়ের পাদদেশে খিল্লাপাড়া গ্রামে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় শহীদ সবুরকে দাফন করা হয়। পরে করিম বাহিনী সামশুদ্দিন আহমদ গ্রুপকে অজ্ঞাত কারণে নিরস্ত্র করলে তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এস এম ইউসুফের আহ্বানে ভারতে গমন করেন। অতঃপর তিনি মিত্রবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন মাউন্টেইন ঈগল-এর আওতায় জ্বালিয়ান পাড়া, যক্ষ্মা বাজার ও বরকল যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। [শামসুল আরেফীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড