You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.17 | সাধনপুর রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (বাঁশখালী, চট্টগ্রাম) - সংগ্রামের নোটবুক

সাধনপুর রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (বাঁশখালী, চট্টগ্রাম)

সাধনপুর রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (বাঁশখালী, চট্টগ্রাম) ১৭ই নভেম্বর পরিচালিত হয়। এতে ১ জন রাজাকার নিহত এবং ৪ জন আহত হয়। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট মহিউল আলম (মেহেন্দিগঞ্জ, বরিশাল) শহীদ হন।
বাঁশখালীর সাধনপুর এলাকাসহ আশেপাশের বিভিন্ন স্থানে হানাদারদের দোসর রাজাকাররা হত্যা, নির্যাতন, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করছিল। রাজাকার কমান্ডার শাহ মোহাম্মদ ছগীরের পরামর্শে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিরাজ এবং রাজাকার কমান্ডার মোহাম্মদ ইউনুসের নির্দেশে রাজাকারআলবদররা এ কাজ করত। মুক্তিযোদ্ধারা এ সংবাদ জানতে পেরে তাদের ওপর আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। ইনফরমার মনোরঞ্জন দে-র মাধ্যমে রেকি করিয়ে তাঁরা জানতে পারেন যে, সাধনপুর ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে ১৫-২০ জন এবং গুনাগরী ওয়াপদা অফিসে ৫০-৬০ জন রাজাকার অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অবস্থান করছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে এ ক্যাম্প আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৭ই নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে পাহাড়ি পথে রওনা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট মহিউল আলম তাঁর দলের অজিত দাশ, আবু বকর, নুরুল, কাসেম, রশিদ, রুস্তম, মজিদ, রাজ্জাক, আবুল, আবু তাহের, কাজী ইদ্রিসসহ আরো কয়েকজনকে নিয়ে শংখ নদীর পাড় ধরে বাঁশখালীর চাঁনপুরের কুণ্ডু স্টেট চা বাগানে অবস্থান নেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন। বাঁশখালীর কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। সার্জেন্ট মহিউল আলমের নেতৃত্বে বাঁশখালীর স্বপন ভট্টাচার্য, দুলাল চন্দ্র দে, খোন্দকার মোহাম্মদ ছমিউদ্দীনসহ ২০-২৫ জন মুক্তিযোদ্ধার দল ভোর ৪টার সময় পাহাড়ের ওপর সাধনপুর ইউনিয়ন অফিস রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ শুরু করেন। ক্যাম্পের সেন্ট্রিরা ডিউটি পরিবর্তন করতে যাবার সময় সার্জেন্ট মহিউল আলম নিজেই নিচু রাস্তা দিয়ে ক্যাম্পের দরজায় চলে যান। তিনি দরজায় নক করলে রাজাকাররা দরজা খুলে দেয়। সামরিক বাহিনীর পোশাক পড়া সার্জেন্ট মহিউল আলম কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই স্টেগান দিয়ে রাজাকারদের ওপর ব্রাশফায়ার ও গ্রেনেড নিক্ষেপ শুরু করেন। সঙ্গে-সঙ্গে অন্যরাও ক্যাম্পের দুপাশ থেকে আক্রমণ শুরু করেন। আক্রমণে টিকতে না পেরে রাজাকাররা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যায়। এ অপারেশনে একজন রাজাকার নিহত এবং ৪ জন আহত হয়। অপরদিকে সার্জেন্ট মহিউল আলম রাজাকারদের পাল্টা আক্রমণে গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৮ই নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। মুক্তিযোদ্ধারা তাঁকে লটমনি পাহাড়ের পাদদেশে সমাহিত করেন। পরবর্তী সময়ে এ টিলার নাম হয় ‘আলম টিলা’। তাঁর কবর পাকা করে বাঁধাই করা হয়েছে। বাণীগ্রাম থেকে লটমনি পর্যন্ত সড়কের নাম শহীদ সার্জেন্ট মহিউল আলমের নামে করা হয়। [জগন্নাথ বড়ুয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড