You dont have javascript enabled! Please enable it!

সাধুবাবার বটগাছতলা বধ্যভূমি (শ্ৰীমঙ্গল, মৌলভীবাজার)

সাধুবাবার বটগাছতলা বধ্যভূমি (শ্ৰীমঙ্গল, মৌলভীবাজার) মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার একটি বৃহৎ বধ্যভূমি। এটি শ্রীমঙ্গল শহরের পূর্বপাশে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের পার্শ্ববর্তী ভুরভুরিয়া ছড়ার কাছে অবস্থিত। এখানে ১৯৭১ সালে একটি বটগাছ ছিল। এ বটগাছের তলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজার স্থান ছিল বর্তমানে এটি শ্রীমঙ্গলের আওতাধীন বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) ক্যাম্পের একটি জায়গা।
১৯৭১ সালে এ স্থান অনেকটা জঙ্গলাকীর্ণ ও নিরিবিলি ছিল। পাশে ভুরভুরিয়া ছড়ায় পানির তীব্র প্রবাহ ছিল। পাকবাহিনীর সদস্যরা তাদের সহযোগী রাজাকার আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যদের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ-এর নেতা-কর্মী, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এবং চা-বাগান শ্রমিকদের প্রথমে শহরের বিভিন্ন বন্দিশিবিরে নিয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য অত্যাচার করত। তথ্য সংগ্রহ হয়ে গেলে তাদের সাধুবাবার বট গাছতলায় ছড়ার পাশে দাঁড় করিয়ে গুলি করে ছড়ার পানিতে ভাসিয়ে দিত অথবা ছড়ার বালুচরে গর্ত করে পুতে রাখত। এভাবে শতশত মানুষকে এখানে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার পর এখানে ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়। এ বধ্যভূমিতে হত্যার শিকার যাদের নাম জানা গেছে, তারা হলেন— জৈন উল্লাহ (লইয়ারকুল, ভূনবীর), রহিম উল্লাহ (লইয়ারকুল, ভূনবীর), কদর আলী (লইয়ারকুল, ভূনবীর), আব্দুর রহমান (লইয়ারকুল, ভূনবীর), আলী আকবর (লইয়ারকুল, ভূনবীর), আলী আজগর (লইয়ারকুল, ভূনবীর), চেরাগ আলী (মাধবপাশা, ভূনবীর), মঈনুদ্দিন (লামুয়া, কালাপুর), আলতাফুর রহমান (লামুয়া, কালাপুর), আলম মিয়া (সুগইড়, শ্রীমঙ্গল), সমীর সোম (কালীঘাট রোড, শ্রীমঙ্গল), আব্দুল মজিদ (কালীঘাট রোড, শ্রীমঙ্গল), রহমত আলী (পশ্চিম শ্রীমঙ্গল, শ্রীমঙ্গল), আছকর মিয়া (মির্জাপুর, মির্জাপুর), রাধারমণ চৌধুরী (মির্জাপুর, মির্জাপুর), প্রমোদ রঞ্জন দাস (মির্জাপুর বাজার, মির্জাপুর), রাজকুমার দাস (মির্জাপুর বাজার, মির্জাপুর), শশী মোহন দাস (মির্জাপুর বাজার, মির্জাপুর), প্রাণতোষ বণিক (মির্জাপুর বাজার, মির্জাপুর), অঘোর চন্দ্র ভট্টাচার্য (বৌলাশীর, মির্জাপুর), ডা. রাখালচন্দ্র দাস (ধানিখলা, ত্রিশাল), নলিনী কুমার চক্রবর্তী (মির্জাপুর চা-বাগান, মির্জাপুর), প্রেমলাল বড়ুয়া (মির্জাপুর চা-বাগান, মির্জাপুর), মনমোহন নমঃশূদ্র (বৌলাশীর, মির্জাপুর), অনিল চন্দ্র রায় (মির্জাপুর বাজার, মির্জাপুর), ডা. বীরেন্দ্র দেব (মির্জাপুর, মির্জাপুর), শৈলেন্দ্র পাল (ভূনবীর, ভূনবীর), মহেন্দ্র পাল (ভূনবীর, ভূনবীর), রামনরেশ কৈরী (বাদে আলিশা, ভূনবীর), জহুর আলী (বাদে আলিশা, ভূনবীর), সুন্দর আলী (রাজপাড়া, ভূনবীর), রাকেশ চন্দ্র সরকার (রুস্তমপুর, ভূনবীর), যোগেশ চন্দ্র সরকার (রুস্তমপুর, ভূনবীর), আপ্পানা অলমিক (মাকড়িছড়া চা-বাগান, সাতগাঁও), খেট্টা অলমিক (মাকড়িছড়া চা-বাগান, সাতগাঁও), নারায়ণ গোয়ালা (জাগছড়া চা-বাগান, কালিঘাট), ভরত গোয়ালা (জাগছড়া চা-বাগান, কালিঘাট), নিরু মিস্ত্রি (দক্ষিণটুক, সিন্দুরখান), হাফিজ উল্লা (হুগলিয়া, সিন্দুরখান), ভাগরু (সিন্দুরখান বাজার, সিন্দুরখান), আব্দুল করিম (লাহারপুর, সিন্দুরখান), শশ্বব উল্লা (জানাউড়া, সিন্দুরখান), নকুল দাস (খলিলপুর, আশিদ্রোণ), আবু মিয়া (সিক্কা, সিন্দুরখান), খোকা মিস্ত্রি (ভাগলপুর, কালাপুর), বানেশ্বর মালাকার (কাকিয়াবাজার, কালাপুর), আতাউর রহমান (পশ্চিম শ্রীমঙ্গল, শ্রীমঙ্গল) এবং অর্জুন দাশ (মাস্টারপাড়া, শ্রীমঙ্গল পৌরসভা)। ৭১-এ সাধুবাবার বটগাছতলায় শহীদদের স্মরণে শ্রীমঙ্গলে ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামে একটি সুউচ্চ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। [চন্দনকৃষ্ণ পাল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!