বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার (অব.) সান্ত সিং
সান্ত সিং, মহাবীরচক্র (১৯২১-২০১৫) ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার (অব.), বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম প্রশিক্ষক ও বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’য় ভূষিত।
সান্ত সিং ১৯২১ সালের ১২ই জুলাই অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের (বর্তমান ভারতের অংশ) ফরিদকোট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফরিদকোটের ব্রিজেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় ও ফিরোজপুরের আর এস ডি (রাম সুখ দাস) কলেজে অধ্যয়ন করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে শিখ লাইট ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টে যোগদান করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে অংশগ্রহণ করেন এবং যুদ্ধে সফল নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারত সরকার কর্তৃক তাঁকে ‘মহাবীরচক্র’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছয় কর্মকর্তাদের একজন, যিনি দুবার ‘মহাবীরচক্র’ খেতাবে ভূষিত হন। ১৯৭৩ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ২০১৫ সালের ৯ই ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে ব্রিগেডিয়ার সান্ত সিং ভারতীয় সেনাবাহিনীর এফ জে সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন। তিনি মুক্তিবাহিনীর একটি বিশাল অংশকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। ৬ বিহার রেজিমেন্ট, ৮৩ বিএসএফ ব্যাটালিয়ন ও প্রায় ১৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে হালুয়াঘাট দখল করার পর তিনি ময়মনসিংহের দিকে অগ্রসর হন এবং ১০ই ডিসেম্বর ময়মনসিংহ শত্রুমুক্ত করেন। তারপর তিনি মধুপুর হয়ে ১৬ই ডিসেম্বর এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের পূর্বেই ঢাকায় প্রবেশ করেন। এত দ্রুত দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে ঢাকা পৌঁছানো ছিল বিস্ময়কর ব্যাপার। দীর্ঘ সৈনিক জীবনে যুদ্ধক্ষেত্রে সবসময় তাঁকে তাঁর সৈন্যদের সম্মুখে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তাঁর অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা তাঁকে ‘বাবাজি’ বলে সম্বোধন করতেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০১২ সালের ২০শে অক্টোবর ব্রিগেডিয়ার (অব.) সান্ত সিং-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড