You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে সাপাহার উপজেলা (নওগাঁ)

সাপাহার উপজেলা (নওগাঁ) ১৯৭১ সালে নওগাঁ জেলার পোরশা থানার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৭৯ সালে সাপাহার থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৫ সালে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে সাপাহার উপজেলা গঠিত। সাপাহার একটি সীমান্তবর্তী উপজেলা। এ উপজেলার উত্তর ও পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে পোরশা এবং পূর্বে পত্নীতলা উপজেলা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর সাতই মার্চের ভাষণ-এর পর সারাদেশের মতো সাপাহারের ছাত্র-জনতাও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে। ১৬ই এপ্রিল সাপাহারের তিলনা এলাকার ৩১ জন ছাত্রনেতাকে নিয়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম। সংগ্রাম পরিষদ গঠনের সংবাদ পেয়ে নওগাঁ থেকে ইপিআর-এর বাঙালি মেজর নাজমুল হক তিলনায় আসেন। তিনি সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের নিয়ে একটি সভা করেন। ছাত্রদের সঙ্গে সাপাহার এলাকার স্বাধীনতাকামী জনতাও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে এখানে মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হতে থাকেন। যুদ্ধে অংশ নিতে রাজনৈতিক নেতা ডা. আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে এলাকার স্বাধীনতাকামী মানুষ সংগঠিত হয়। সাপাহারের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য হাটশাওলী গ্রামে একটি প্রাথমিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। হাটশাওলী গ্রামে অবস্থিত ইপিআর ক্যাম্পের মেজর নাজমুল হক ও টু-আই-সি ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দীনের নির্দেশনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ এ-সময় প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন হাবিলদার মোহাম্মদ আলী, হাবিলদার আলী আকবর, সিপাহি মোকসেদ আলী ও আব্দুর রশিদ। দিনে-দিনে হাটশাওলী প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বাড়তে থাকায় ১৫-২০ দিন পর অনেককে প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের তপন থানার পারিলায় পাঠানো হয়। এখান থেকে পরে অনেককে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এছাড়া ভারতের রায়গঞ্জ, শিলিগুড়ির পানিঘাটায়ও সাপাহারের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
ভারতের দেরাদুন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সাপাহারের মুজিব বাহিনীর সদস্যরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা দেশে এসে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সাপাহার, পাহাড়ীপুকুর ও শিরন্টিসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় যুদ্ধে অংশ নেন।
সাপাহার থানায় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয় ৭ নম্বর সেক্টরের অধীনে। এখানকার যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন মেজর নাজমুল হক ও টু-আই-সি ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দীন। আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিলের তত্ত্বাবধানে ডা. আব্দুল খালেক, আব্দুর রাজ্জাক (সম্মুখযোদ্ধা), মো. লুৎফর রহমান (মুজিব বাহিনী), হাবিলদার গোলাম রসুল (মুজাহিদ) প্রমুখ কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে সাপাহারে পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ছাত্র-জনতাকে নিয়ে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার উদ্যোগ নেন। তারা এলাকার মানুষের মধ্যে জনসংযোগ করেন। মুক্তিযোদ্ধারা সাপাহারের প্রবেশপথের মধইলে রাস্তার ব্রিজ ভেঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন করে দেন। কিন্তু এসব চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ করে দিয়ে সাপাহারে পাকবাহিনী অনুপ্রবেশ করে।
সাপাহারে অবস্থিত পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, খঞ্জনপুর ইপিআর ক্যাম্প ও পার্শ্ববর্তী আগ্রাদ্বীগুন দেবীপুরে পাকবাহিনী স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে। সদরের পাইলট স্কুলে স্থাপিত পাকিস্তানিদের ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিল মেজর শওকত আলী। এসব ক্যাম্প থেকে পাকবাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার-আলবদর ও আলশামস বাহিনী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ, নারীনির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালায়।
সাপাহার উপজেলায় পাকবাহিনীর সহযোগী হিসেবে রাজাকার, আলবদর ও শান্তি কমিটির নেতা এবং সদস্যদের চরম অপতৎপরতা ছিল। পাকসেনাদের সঙ্গে নিয়ে তারা অনেক গ্রামে হামলা করে সাধারণ মানুষের সম্পদ লুণ্ঠন ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। মহসিন বিশ্বাস (পিতা রহমত উল্লা, গ্রাম জবাই) শান্তি কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করে। অন্য যারা পাকবাহিনীর সহযোগী হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে, তারা হলো— শীষ মোহাম্মদ মাস্টার, মো. আরতাস আলী মাস্টার (জবাই), এসলাম কাবলী (জবাই মধ্যপাড়া, রাজাকার কমান্ডার), সৈয়ব মৌলভী (শান্তি কমিটির সদস্য, জবাই), লালু মোন্না (জবাই), মো. নুরুল ইসলাম (হরতকী, গোপালপুর), আব্দুল মান্নান মাস্টার (পাকুড়ডাংগা), লাকাটুয়া বিহারী (সাপাহার মধ্যবাজার), মো. জমশেদ আলী (সাপাহার ডাঙ্গাপাড়া), আবুল কাশেম (সাপাহার চৌধুরীপাড়া), মমতাজ উদ্দীন (জয়পুর), ইব্রাহিম হোসেন, (পিতা আজির উদ্দীন, নিশ্চিন্তপুর, শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান), নইমুদ্দীন সরকার (পিতা সফিতুল্লাহ সরকার, ভাবুক, শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান), আফসার আলী মাস্টার (পিতা শামসুদ্দীন, কলমুডাঙ্গা, শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান), নাদের খান কাবলী (পাতাড়ী), বেলাল হোসেন কারী (হাঁসপুকুর), আব্দুল মান্নান ক্বারী (তিলনী), ইউনুস হারেঙ্গা (পিতা আব্দুল বাশেদ, পাহাড়ীপুকুর, রাজাকার কমান্ডার), মো. আজাদ বিহারী (পাহাড়ীপুকুর), তৈয়ব আলী, আবু বাক্কার, আব্দুর রহিম, আব্দুন নূর, আমির উদ্দীন সরকার, আজির উদ্দীন সরকার, মো. আলাউদ্দীন সরকার (খঞ্জনপুর) প্রমুখ।
পাকবাহিনী সাপাহার পাইলট স্কুলের ক্যাম্প থেকে মেজর শওকত আলীর নেতৃত্বে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস সদস্যদের নিয়ে বিভিন্ন গ্রামে অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, নারীনির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালায়। ৮ই এপ্রিল দুপুরে পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার কমান্ডার ইউসুফ হাড়েঙ্গা, নাদের খান, শান্তি কমিটির সভাপতি মহসিন বিশ্বাস ও নইমুদ্দীন সরকারের সহযোগিতায় উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামের হিন্দুপাড়ায় তাণ্ডব চালায়। এ-সময় হানাদাররা নারীনির্যাতন এবং গবাদি পশু, ধান, চাল, নগদ অর্থ ও সোনা-গহনা লুণ্ঠন করে। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। গ্রাম তছনছ করে তারা ক্ষান্ত হয়নি, নিরপরাধ মাগু চন্দ্র বর্মণ ও ফুলোচন্দ্র বর্মণকে গুলি করে হত্যা করে। কল্যাণপুর থেকে বের হয়ে পথে আব্দুর জব্বার নামের একজনকে গুলি করে হত্যা করে।
পাকবাহিনী ও রাজাকাররা ৮ই এপ্রিল বেলা আড়াইটার দিকে আশড়ন্দ মোল্লাপাড়ায় হামলা চালায়। এ হামলায় ৫ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান। আশড়ন্দ গণহত্যা নামে পরিচিত এ হত্যাকাণ্ডের পর মোল্লাপাড়ার প্রতিটি বাড়ি পাকসেনাদের দেয়া আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমানের শুকরইল গ্রামের বাড়ি বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়। তারা আইহাই, রসুলপুর, মধইল ও আশড়ন্দ গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে। সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি আইহাই বাবু পাড়ায় পাকবাহিনী অগ্নিসংযোগ করে সকল বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনার পর তারা কল্যাণপুর গ্রামের দুলু হাজরা (পিতা নব হাজরা) ও সুধীর চন্দ্র হাজরা (পিতা রুপলাল হাজরা)-কে ধরে সাপাহার পাকসেনা ক্যাম্পে নিয়ে আসে। পরে এ দুই আদিবাসী যুবক আর ফিরে আসেনি। উপজেলার তাতইর গ্রামের আলহাজ্ব নসির উদ্দীন সরকার ও তার পুত্র ফয়েজ উদ্দীনকে স্থানীয় রাজাকার কমান্ডারের সহায়তায় ধরে নিয়ে পাকবাহিনী গুলি করে হত্যার পর একই কবরে পুঁতে রাখে।
পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা সাপাহারের বিভিন্ন এলাকায় নারীর সম্ভ্রম লুণ্ঠনের লোমহর্ষক ঘটনা ঘটায়। করলডাঙ্গার সদ্য বিবাহিতা রেজিয়া বেগম পাকবাহিনীর নির্মমতার শিকার হন। ঘটনার দিন সকাল ৮টার দিকে পাকবাহিনী গ্রামে প্রবেশ করে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরতে বাড়িবাড়ি তল্লাশি করে। অস্ত্রধারী তিন পাকসেনা ঘরে ঢুকে গৃহবধূ রেজিয়াকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। গ্রামের অদূরে অবস্থিত মল পুকুর পাড়ে প্রকাশ্যে তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়।
পাকসেনারা তিলনার পান বিলাশী ওরফে পানো নামের একজন নারীকে বাড়ি থেকে অস্ত্রের মুখে নিতপুর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। রাজাকার মোকলেস ও যদু দফাদার এতে সহযোগিতা করে। মেজর শওকত আলী ও তার সহযোগীরা পানোকে প্রায় দেড় মাস ধরে আটকে রেখে তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে একদিন তাকে পাকসেনারা ক্যাম্প থেকে বের করে দেয়। মুক্তিযোদ্ধা নজরুলের সহযোগিতায় নির্যাতিত পানোকে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করা হয়। পরে মুক্তিযোদ্ধারা ও স্থানীয় জনতা মিলে রাজাকার মোকলেস ও তার সহযোগী যদু দফাদারের ওপর এর প্রতিশোধ গ্রহণ করেন।
সাপাহারের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে পাকবাহিনীর ক্যাম্পে নির্যাতনকেন্দ্র ও বন্দিশিবির ছিল। মেজর শওকত আলীর নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী মানুষকে ধরে এনে এখানে নির্যাতন করা হতো। এছাড়া এলাকার রাজাকার কমান্ডার, শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান জবাই গ্রামের মহসিন বিশ্বাসের বাড়ি, কলমুডাঙ্গার আফসার মাস্টারের বাড়ি, পাহাড়ীপুকুরের রাজাকার ইউসুফ হারেঙ্গার বাড়ি, ভাবুকের নইমুদ্দীন সরকারের বাড়ি, হাসপুকুরের বেলাল ক্বারীর বাড়ি ও তিলনীর আব্দুল মান্নান মৌলভীর বাড়িতে পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের নির্যাতনকেন্দ্র ছিল।
সাপাহারের বর্তমান জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর পুর্বদিকের মাঠে এক সঙ্গে বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষকে গুলি করে পাকসেনারা ফেলে রেখেছিল। বেশ কিছু দিন ওই স্থানে মৃত মানুষের হাড়গোড় পড়ে ছিল। পাকহানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার পর সদরের জিরো পয়েন্টে অবস্থিত প্রাচীন আমলের কূপের মধ্যে লাশ ফেলে দিত। স্বাধীনতার পর কূপ সংস্কারকালে এখান থেকে অনেক মানুষের মাথার খুলি ও হাড়গোড় পাওয়া যায়।
মে মাসের শেষদিকে পাকসেনারা খঞ্জনপুর ইপিআর ক্যাম্প দখল করে এলাকার সাধারণ মানুষের ওপর জ্বালাও-পোড়াও ও নির্যাতন চালাতে শুরু করে। এদের প্রতিহত করতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল খঞ্জনপুর ইপিআর ক্যাম্পে হামলা করে। এ-সময় শিরন্টির মাঠে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম (তালপুকুর, উপজেলা নিয়ামতপুর) পাকসেনাদের গুলিতে শহীদ হন। নিহত নুরুল ইসলামের লাশ পরে সহযোদ্ধারা ভারতের দৌড়গঞ্জে নিয়ে সেখানে সমাহিত করেন।
পাকসেনারা স্থানীয় রাজাকার ও আলবদর সদস্যদের সহযোগিতায় আইহাই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে হামলা করে নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড শুরু করে। জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলাইমানের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী পাহাড়ীপুকুরে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এ-সময় পাকসেনাদের গুলিতে মুক্তিযোদ্ধা সোলাইমান আলী শহীদ হন। সহযোদ্ধারা তাঁর লাশ ভারতের তপন থানার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে সমাহিত করেন।
১৩ই সেপ্টেম্বর রাতে ৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা সাপাহারে অবস্থিত পাকসেনাদের ক্যাম্পে আক্রমণ করেন। সাপাহার পাকিস্তানি ক্যাম্প অপারেশন নামে পরিচিত এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা প্রথমদিকে ভালো অবস্থানে থাকলেও শেষ পর্যন্ত শত্রুপক্ষের ভারী অস্ত্রের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হন। এ-যুদ্ধে ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং কয়েকজন আহত ও আটক হন। এছাড়া সাপাহার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাকহানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বেশ কয়েকটি যুদ্ধ হয়।
১৪ই ডিসেম্বর সাপাহার হানাদারমুক্ত হয়। এদিন আদাতলা, আইহাই ও কলমুডাঙ্গা এলাকার ২৪ জন রাজাকার কলমুডাঙ্গা স্কুল মাঠে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুজিব বাহিনীর কমান্ডার লুৎফর রহমানের কাছে তাদের অস্ত্র জমা দেয়৷ একই দিনে মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা, মোজাহারুল, আব্বাস আলী ও আব্দুল কুদ্দুসকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আলতাফুল হক চৌধুরী (আরব) সাপাহারে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন।
সাপাহার উপজেলায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- লুৎফর রহমান (পিতা নজিমুদ্দীন, গাঞ্জাকুড়ী, সদর ইউনিয়ন; সাপাহারে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ), ইসমাইল হোসেন (ফুটকইল), আব্দুল গফুর (পিতা পাইনসা মণ্ডল, তিলনা চন্দুরা), নমির উদ্দীন (পিতা উপগাড়ী মণ্ডল, বাদউপরইল), অলিমুদ্দীন (পিতা মানিক চাঁন মণ্ডল), জহির উদ্দীন (পিতা ধনতুল্লাহ মণ্ডল, উত্তর কোলাপাড়া), আইয়ুব আলী (পিতা দোস্ত মোহাম্মদ, দক্ষিণ ওড়া, মহাদেবপুর), সাইফুর রহমান (পিতা খজিমদ্দীন, খাজুর, মহাদেবপুর), মনমথ মাস্টার (মাতাজীহাট রাইগা), আব্দুল হামিদ (মাতাজীহাট রাইগা), সোলাইমান আলী (মাতাজীহাট রাইগা) ও নুরুল ইসলাম (মাতাজীহাট রাইগা)।
মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে সাপাহারে ৩টি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। সেগুলোর একটি হলো উপজেলা সদরে নির্মিত শহীদ মিনার। অপরটি জবাই বিলের পশ্চিম প্রান্তে পাহাড়ীপুকুর নামক স্থানে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলাইমান আলী স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ। আরেকটি হলো সদরের প্রাণকেন্দ্র জিরোপয়েন্ট চত্বরে অবস্থিত ‘মুক্তিযুদ্ধ বিজয় স্মৃতিস্তম্ভ’। এছাড়া খঞ্জনপুরের যুদ্ধে নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম স্মরণে শিরন্টি স্কুল মাঠে প্রতি মঙ্গলবার হাট বসানো হয়। [মো. বাবুল আকতার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ১০ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!